এক বছরে টকটাইম কমেছে ৮৪১ কোটি মিনিট, এসএমএস ৭০৮ কোটি

ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জে টেলিকম খাতের অপারেটররা

তথ্যপ্রযুক্তি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হচ্ছে সব খাতকেই।

তথ্যপ্রযুক্তি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হচ্ছে সব খাতকেই। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পেরে অস্তিত্ব সংকটে পড়তে দেখা গেছে অনেক খাতসংশ্লিষ্টকে। সম্প্রতি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট খাত টেলিকম অপারেটরদের। অপারেটরদের একসময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় টকটাইম খুদে বার্তার (এসএমএস) ব্যবহার থেকে সরে আসছেন গ্রাহকরা। গত এক বছরে গ্রাহকদের টকটাইমে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এক অর্থবছরে কমেছে ৮৪১ কোটি মিনিট এবং ৭০৮ কোটি এসএমএসের ব্যবহার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডাটাভিত্তিক যোগাযোগ অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে মানুষ এখন সহজেই যোগাযোগ করতে পারছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, স্কাইপি, ইমু, জুম, মিট, লিংকডইনের মতো ডিজিটাল মাধ্যম। টেক্সট, ভয়েস কল, ছবি-ভিডিও আদান-প্রদানের মতো কাজ সহজেই করা যায়। এনক্রিপ্টেড এসব অ্যাপে অর্থেরও সাশ্রয় হয়। ফলে টকটাইম এসএমএসের চেয়ে এসব অ্যাপকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে ব্যবহারকারীরা।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (বিটিআরসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে অপারেটরদের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ১৫ হাজার ৫৩৩ কোটি মিনিটঅন-নেট কল মিনিট বিক্রি করে অপারেটররা। এর আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৩৭৪ কোটি মিনিট। অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮৪১ কোটি ৫১ লাখ মিনিট বেশি বিক্রি করে টেলিকম অপারেটরগুলো। ২০২০-২১ অর্থবছরে গ্রাহকদের ব্যবহৃত টকটাইমের পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৭৯৯ কোটি মিনিট। অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪২৪ কোটি লাখ মিনিট টকটাইম কম ব্যবহার হয়।

অন্যদিকে কমেছে এসএমএসের ব্যবহারও। ২০২২-২৩ অর্থবছরে হাজার ৮৯০ কোটি ৬৬ লাখ এসএমএস অভ্যন্তরীণভাবে গ্রাহকরা ব্যবহার করে। এর আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল হাজার ৫৯৯ কোটি ৬২ লাখ এসএমএস। অর্থাৎ এক অর্থবছরের ব্যবধানে ৭০৮ কোটি ৯৫ লাখ এসএমএস কমে যায়। ২০২০-২১ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল আরো বেশি। সেবার হাজার ৩৯ কোটি ৫৮ লাখ এসএমএস আদান-প্রদান হয় গ্রাহকদের মধ্যে। পরের বছরের তুলনায় সেবার ৪৩৯ কোটি ৯৫ লাখ বেশি এসএমএস বিনিময় করে গ্রাহকরা।

তিন অর্থবছরে ইন্টারনেট গ্রাহক বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২ কোটি ৯৪ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল দেশে। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ১২ কোটি ৬২ লাখ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ১২ কোটি লাখ।

অপারেটররা বলছে, দেশে ১৮ কোটি গ্রাহকের মধ্যে ১২ কোটি গ্রাহক স্মার্টফোন মোবাইল ডাটা ব্যবহার করে। ফলে এক-তৃতীয়াংশ গ্রাহক এখনো মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের বাইরে রয়ে গেছে। তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ অনুযায়ী তুলনামূলক রাজস্ব কম আসছে।

অ্যামটব মহাসচিব লে. কর্নেল মহাম্মদ জুলফিকার (অব.) বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এটা ঠিক যে মোবাইল অপারেটরদের টকটাইম দিনে দিনে কমছে। এটা শুধু যে বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই হচ্ছে তা নয়, বিশ্বজুড়েই অবস্থা বিরাজ করছে। এর স্থলে মোবাইল ডাটার ব্যবহার বাড়ছে। মূলত মেসেঞ্জার অ্যাপের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় মোবাইলে কথা বলা ক্ষুদে বার্তার ব্যবহার কমছে। মোবাইল ইন্টারনেটের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় অপারেটররা নিয়মিতভাবে তাদের নেটওয়ার্কে বিনিয়োগ করছে। তবে বিনিয়োগের বিপরীতে রাজস্ব এখনো তুলনামূলকভাবে কম।

প্রযুক্তির পরিবর্তন বলতে টেলিকম খাতে নতুন প্রযুক্তির উন্নয়নকে বোঝানো হয়। গ্রাহকদের চাহিদা এবং সরকার নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে অপারেটররা বিনিয়োগ করে থাকে। তবে দেশে স্মার্টফোনের ব্যবহার বৃদ্ধির ব্যাপক সুযোগ আছে। পৃথিবীর যেসব দেশে মোবাইল টকটাইম ইন্টারনেটের মূল্য সবচেয়ে কম বাংলাদেশ তার অন্যতম। খাতের অগ্রযাত্রায় অত্যধিক কর প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া মোবাইল ইকোসিস্টেম জটিল।

অপারেটরগুলোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অফলাইনে টকটাইম এসএমএসের ব্যবহার কয়েক বছর ধরে নেতিবাচক ধারায় আছে। এর জন্য অপারেটরদের লাভজনক অবস্থান ধরে রাখতে নতুন কৌশল নিতে হচ্ছে। তারা বাজারে নতুন অ্যাপ নিয়ে আসছে, বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মের সঙ্গে চুক্তি করছে, এমএফএস কোম্পানিগুলোর সঙ্গে নিজেদের অবকাঠামো সেবা শেয়ার করছে। নানা কৌশল অবলম্বন করে ব্যবসায়িক অবস্থান ধরে রাখতে হচ্ছে কোম্পানিগুলোকে।

রবি আজিয়াটা লিমিটেডের একজন কর্মকর্তা জানান, এক দশক আগেও টেলিকম কোম্পানিগুলো বাণিজ্যিকভাবে টকটাইম ক্ষুদে বার্তার ওপর নির্ভর করত। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অপারেটররাও নতুন পোর্টফোলিও নিয়ে আসছে। কেউ ওটিটি প্লাটফর্ম নিয়ে আসছে, কেউবা অনলাইন শপ চালু করছে, কেউবা আবার ডিজিটাল সেবাসহ কার্যক্রম বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এসবের মাধ্যমে তারা টিকে থাকতে চায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক . বিএম মইনুল হোসেন বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে মোবাইল গ্রাহকদের আচরণের পরিবর্তন হচ্ছে। মানুষ টকটাইমের পরিবর্তে ডাটা ব্যবহার করে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করছে। পরিবর্তিত আচরণের সঙ্গে অপারেটররা নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে হবে।

বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দুটি ডিজিটাল প্লাটফর্ম মাইবিএল টফি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, গ্রাহকদের উন্নতমানের মোবাইল ইন্টারনেট ডিজিটাল সেবা দিয়ে আমরা দেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রেখে যেতে পারব।

আরও