দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বা আইএসপি অপারেটরদের মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে নতুন ডায়নামিক সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। মনিটরিংয়ের মাধ্যমে রেভিনিউ শেয়ারিং এবং কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিত করতে চায় বিটিআরসি। তবে মনিটরিং সিস্টেম চালুর আগে এ শিল্পের সমস্যা দূর করা এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি বলে মনে করছেন আইএসপি অপারেটররা।
বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, আইএসপি অপারেটরদের এখন পর্যন্ত মনিটরিং করে না বিটিআরসি। ফলে অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহকদের মানসম্মত সেবা পাওয়ার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যায়। অপারেটরদের মনিটরিংয়ের জন্য টেলিকম মনিটরিং সিস্টেম (টিএমএস) রয়েছে। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে ডিআইএ (ডাটা ইনফরমেশন সিস্টেম) পদ্ধতিতে অপারেটরদের পর্যবেক্ষণ করা হয়। কিন্তু এ ব্যবস্থার মাধ্যমে আইএসপি অপারেটরদের মনিটরিং করা কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। যেজন্য নতুন ডায়নামিক পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছে বিটিআরসি। এরই মধ্যে একটি কনসেপ্ট পেপার তৈরি করা হয়েছে। নতুন কী কী ফিচার প্রয়োজন হবে, তা বিবেচনা করা হচ্ছে। এছাড়া সেলফোন অপারেটররা রেভিনিউ শেয়ার করলেও আইএসপি অপারেটররা এখনো রেভিনিউ শেয়ার করছে না। মনিটরিং সিস্টেম চালু হলে রেভিনিউ শেয়ার এবং কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
বিটিআরসির হিসাবে, দেশে লাইসেন্সধারী আইএসপি অপারেটরের সংখ্যা ২ হাজার ৮৯৭। এর মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে ১১৮, বিভাগীয় পর্যায়ে ৩৪১, জেলা পর্যায়ে ১৪৯ এবং উপজেলা পর্যায়ের আইএসপি অপারেটর রয়েছে ২ হাজার ২৮৯টি। এছাড়া দেশজুড়ে অবৈধ আইএসপি অপারেটর রয়েছে প্রায় তিন হাজার।
তবে আইএসপি অপারেটরদের মনিটরিং কিছুটা কঠিন বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, আইএসপি অপারেটররা সেবা প্রদান করে তারের মাধ্যমে। সেলফোন অপারেটররা তারবিহীন সেবা প্রদান করায় তাদের মনিটরিং করা সহজ। আইএসপি অপারেটরদের ক্ষেত্রে অনেকটা কঠিন হবে মনিটরিং করা। এজন্য বিটিআরসিকে বিনিয়োগও করতে হবে।
আইএসপি অপারেটরদের সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) বলছে, মনিটরিং সিস্টেম করলে আইএসপি অপারেটররা সংকটে পড়ে যাবে। এজন্য সরকারকে দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা নিতে হবে। আমাদের আগে বলতে হবে, সরকার কী চায়। সরকার দীর্ঘমেয়াদে পলিসি নির্ধারণ করলে আমাদের বিনিয়োগ করতে সুবিধা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
জানতে চাইলে আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, ‘বিটিআরসি চাইলে সবকিছু মনিটর করতে পারে। তিন হাজার আইএসপি দেশজুড়ে প্রতিযোগিতা করছে। তাদের মনিটরিংয়ের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। তা করার আগে বিটিআরসিকে ইন্ডাস্ট্রির সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধান করতে হবে। আমাদের ২৭ শতাংশ কর দিতে হয়। তিন জায়গায় ভ্যাট দিতে হয় এবং নতুন করে ১ শতাংশ সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব করলে আমরা টিকে থাকব কীভাবে? আমাদের টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারকে নীতি সহায়তা দিতে হবে।’
বিটিআরসির কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘দেশে এখন আইপিটিভি আছে, যা নিয়ন্ত্রণ করছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। আইএসপি অপারেটরদেরও এ সেবা রয়েছে। আমরা এ সেবার নাম দিয়েছি আইপি বেইজড ভিডিও প্রোগ্রাম। সেখান থেকে আমরা এখনো রেভিনিউ শেয়ারিংয়ের পলিসি নিয়ে কাজ করছি। আইএসপি অপারেটররা সম্প্রতি আসায় তাদের কিছুটা ছাড় দিতে হচ্ছে। সেলফোন অপারেটররা তো অনেক আগে লাইসেন্স নিয়েছে। তারা আমাদের সঙ্গে রেভিনিউ শেয়ারও করছে। আইএসপিরা মাত্র লাইসেন্স পেয়েছে। লাইসেন্স সংশ্লিষ্ট ফি তারা আমাদের দেয়। সেলফোন অপারেটররা ১ শতাংশ সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল দিচ্ছে। আইএসপিদের ক্ষেত্রে এখনো তা শুরু হয়নি, মাত্র নীতিমালা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের (এমএনও) যেভাবে মনিটর করি একইভাবে আইএসপিদের মনিটর করার কোনো ব্যবস্থা নেই৷। তবে আমাদের টিএমএস সিস্টেম আছে। এর মাধ্যমে ডাটা ইনফরমেশন সিস্টেমে (ডিআইএ) ডাটা সংগ্রহ করা হয়। পরিসাংখ্যানিক পদ্ধতিতে ডাটা মনিটর করা হয়। ডায়নামিক পদ্ধতিতে আইএসপিদের মনিটর করার জন্য আমরা একটা কনসেপ্ট পেপার তৈরি করেছি। খুব শিগগির এর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করব।