বিশ্বের ৫২টি দেশে বাংলাদেশের মাছ রফতানি হচ্ছে

দেশের আপামর জনসাধারণের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বেকারত্ব হ্রাস, রফতানি আয় বৃদ্ধিসহ দেশের সামগ্রিক আর্থসামাজিক উন্নয়নে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর দেশ পুনর্গঠন পরিকল্পনায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের গুরুত্ব অনুধাবন করে সে সময় নানা দূরদর্শী পদক্ষেপ

দেশের আপামর জনসাধারণের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বেকারত্ব হ্রাস, রফতানি আয় বৃদ্ধিসহ দেশের সামগ্রিক আর্থসামাজিক উন্নয়নে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর দেশ পুনর্গঠন পরিকল্পনায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের গুরুত্ব অনুধাবন করে সে সময় নানা দূরদর্শী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। সে সময় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের মানুষ, আমার মাটি আছে, আমার সোনার বাংলা আছে, আমার পাট আছে, আমার মাছ আছে, আমার লাইভস্টক আছে। যদি ডেভেলপ করতে পারি ইনশাআল্লাহ এই দিন আমাদের থাকবে না।’ বঙ্গবন্ধু সেদিন আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন, ‘মাছ হবে দ্বিতীয় প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদ।’ জাতির পিতার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা বিনির্মাণে তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বাধীন সরকারের যথোপযুক্ত নীতি ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে মাছ, মাংস ও ডিম উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনই নয়, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা এখন বিদেশে রফতানির পর্যায়ে পৌঁছেছি।

দেশের রফতানি সম্ভাবনাময় খাতগুলোর মধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত অন্যতম। বঙ্গবন্ধুর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী দেশের মৎস্য খাতকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অন্যতম লক্ষ্য। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় নানা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে নিরাপদ ও মানসম্পন্ন মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রফতানির লক্ষ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় তিনটি বিশ্বমানের মাননিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগার স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ি রফতানি অব্যাহত রাখার জন্য চাষী পর্যায়ে রোগমুক্ত ও মানসম্পন্ন চিংড়ি পোনা সরবরাহ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কক্সবাজার, সাতক্ষীরা ও খুলনায় তিনটি পিসিআর ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মৎস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে নিষিদ্ধ অ্যান্টিবায়োটিকসহ ক্ষতিকর রাসায়নিকের রেসিডিউ দূষণ মনিটরিংয়ের জন্য মৎস্য অধিদপ্তর প্রতি বছর ন্যাশনাল রেসিডিউ কন্ট্রোল প্ল্যান প্রণয়ন ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করছে। রফতানিযোগ্য মাছ ও চিংড়ির ভ্যালু চেইনের সব পর্যায়ে ট্রেসেবিলিটি সিস্টেম কার্যকর করা হয়েছে। বর্তমান সরকার মৎস্য ও মৎস্যপণ্য (পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০২০ প্রণয়ন করেছে। এরই মধ্যে বাগদা চিংড়ি ‘বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি’ নামে ভৌগোলিক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় তা নিজস্ব পরিচয়ে ও স্বকীয়তায় সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করছে। চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাজার বিবেচনায় দেশে চলতি বছর থেকে চাষী পর্যায়ে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, চীন, ভারত, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও রাশিয়াসহ বিশ্বের ৫২টি দেশে বাংলাদেশের মাছ রফতানি হচ্ছে। বর্তমান সরকারের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের ফলে বিশ্ববাজারে আর্থিক মন্দাবস্থা থাকা সত্ত্বেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ৭০ হাজার টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রফতানির মাধ্যমে আয় হয়েছে ৪ হাজার ৭৯০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অন্যদিকে দেশের প্রাণিসম্পদ খাতেও রফতানির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের মাংসের চাহিদা আসছে। পাশাপাশি এসব দেশে গুণগতমানের দুগ্ধজাত ও মাংসজাত পণ্যেরও রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। এজন্য রফতানির বিষয়টি সামনে রেখে দেশে প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের প্রাণিসম্পদ উৎপাদন উপকরণ ও প্রাণিজাত খাদ্যের মাননিয়ন্ত্রণ গবেষণাগার। 

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতকে আরো সমৃদ্ধ করার জন্য এবং এ খাতের রফতানি বৃদ্ধিসহ রফতানির সঙ্গে সম্পর্কিত যেকোনো সমস্যা দূর করার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে সরকার প্রস্তুত রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তা ও এ খাতসংশ্লিষ্ট সব অংশীজনকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। তবেই এ খাত থেকে রফতানির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে। 


আরও