বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের দাম সেপ্টেম্বরে গত ১৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধির মুখোমুখি হয়েছে। এ সময় চাল ছাড়া প্রায় সব ধরনের খাদ্যদ্রব্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী ছিল। শুক্রবার প্রকাশিত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিভাগের (এফএও) মাসভিত্তিক মূল্যসূচক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর ওয়ার্ল্ড-গ্রেইনডটকম।
এফএওর মূল্যসূচক মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হওয়া খাদ্যপণ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের গড় মূল্যসূচক বেড়ে ১২৪ দশমিক ৪ পয়েন্টে পৌঁছেছে, যা আগস্টের তুলনায় ৩ শতাংশ ও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।
বিশ্বের শীর্ষ চিনি উৎপাদনকারী দেশ ব্রাজিল। দেশটিতে সম্প্রতি দাবানলের প্রভাবে আখ ঊৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ ভারতে ইথানল উৎপাদনের জন্য আখ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে দেশটির সরকার। এরপর দুই দেশ থেকেই রফতানি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এসব কারণে সেপ্টেম্বরে এফএওর চিনির মূল্যসূচক সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ৪ শতাংশ।
অন্যদিকে গম ও ভুট্টার রফতানি মূল্য বৃদ্ধির কারণে সেপ্টেম্বরে এফএওর শস্য মূল্যসূচক ৩ শতাংশ বেড়েছে। মূলত কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোয় অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বেড়েছে। তবে কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চলে প্রতিযোগিতামূলক দামের কারণে তা কিছুটা ভারসাম্য বজায় রেখেছে।
বিশ্বব্যাপী ভুট্টার দামও গত মাসে বেড়েছে। মূল পরিবহন পথ ব্রাজিলের মাদেইরা নদী ও যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি নদীতে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ সময় পণ্যটির দাম বেড়েছে।
গত মাসে বিশ্বব্যাপী ভোজ্যতেলের দাম আগস্টের তুলনায় ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। পাম অয়েল, সয়াবিন, সূর্যমুখী ও সরিষা তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোজ্যতেলের মূল্যসূচক ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিনের মাড়াই কমে গেছে। তবে সেপ্টেম্বরে এফএওর চালের সূচক দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। বাণিজ্যিক কার্যক্রম কমে যাওয়ায় এ সময় পণ্যটির দাম নিম্নমুখী ছিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে শুক্রবার পৃথক এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের সংস্থাটি চলতি বছরের জন্য বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্য উৎপাদনের পূর্বাভাস সংশোধন করেছে। চলতি বছর খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়ে ২৮৫ কোটি ৩০ লাখ টনে পৌঁছতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এ সময় উৎপাদন বাড়ার পেছনে ভূমিকা রাখবে চাল ও গমের ঊর্ধ্বমুখী উৎপাদন। যদিও সংস্থাটির দেয়া খাদ্যশস্যের পূর্বাভাস গত বছরের রেকর্ড উৎপাদনের নিচে রয়েছে।
জাতিসংঘের সংস্থাটি আরো জানায়, চলতি বছর বিশ্বে গম উৎপাদন গত বছরের তুলনায় দশমিক ৫ শতাংশ বাড়তে পারে। এ সময় ইইউভুক্ত দেশগুলোয় গম উৎপাদন কমলেও অস্ট্রেলিয়ায় বাড়তে পারে।
বিশ্বব্যাপী চাল উৎপাদন ২০২৪-২৫ অর্থবছর দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে ৫৩ কোটি ৯২ লাখ টনে পৌঁছনোর সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে চলতি বছর বিশ্বে মোট শস্য ব্যবহার দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ২৮৫ কোটি ৩০ লাখ টনে পৌঁছনোর সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া এ সময় শস্যের মজুদ বাড়তে পারে ১ দশমিক ২ শতাংশ।