বিশ্বব্যাপী প্রাক্কলনের চেয়ে বেশি হারে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ)। সংস্থাটি জানিয়েছে, আগামী বছরও চাহিদা বৃদ্ধির ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় থাকবে। তবে সে তুলনায় সরবরাহ পর্যাপ্ত বাড়ছে না। এতে জ্বালানি পণ্যটির সংকট তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে আইইএ। খবর অয়েলপ্রাইসডটকম।
আইইএ এক বছর আগের পূর্বাভাসে বলেছিল, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ার ফলে ২০৩০ সালের আগেই জ্বালানি তেল ও গ্যাসের চাহিদা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছবে। এরপর তা স্থিতিশীল বা কমতে শুরু করবে। এ পূর্বাভাসের ওপর ভিত্তি করে জ্বালানি তেল ও গ্যাস উৎপাদনে নতুন বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই বলেও সুপারিশ করেছিল সংস্থাটি। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না হওয়ায় ঘাটতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) বাজারে কয়েক বছর আগেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অতিরিক্ত সরবরাহ ছিল। রফতানিকারক দেশগুলো অনেক বেশি এলএনজি প্লান্ট নির্মাণ করে। এতে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ দ্রুত বেড়ে যায়। তবে গত কয়েক বছরে দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। অনেক দেশ কয়লার বিপরীতে এলএনজিকে তুলনামূলক পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করতে শুরু করে। তাছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেও জ্বালানিপণ্যটির বাজারের চিত্র পরিবর্তন হয়েছে। রাশিয়া থেকে ইউরোপে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে এলএনজির বাজারে এশিয়ার দেশগুলোকে হটিয়ে প্রধান ক্রেতার জায়গা দখল করে নিয়েছে ইউরোপের দেশগুলো। সব মিলিয়ে জ্বালানিপণ্যটির চাহিদা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।
বর্তমানে ইউরোপ রাশিয়া থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস আমদানি বন্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার তেল-গ্যাস কোম্পানি গ্যাজপ্রমের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তি নবায়ন করবে না। ফলে ইউরোপে আরো বেশি এলএনজি দরকার হবে। কিন্তু সে অনুপাতে পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। এ পরিস্থিতিতে অবশ্যম্ভাবীভাবে জ্বালানিটির দাম বাড়বে।
আইইএ সাম্প্রতিক পূর্বাভাসে বলেছে, কয়লার ব্যবহার কমানো, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ক্রমবর্ধমান ব্যবহার প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়ার পেছনে ভূমিকা রাখবে। এর বিপরীতে সরবরাহ ধীরগতিতে বাড়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। এলএনজি উৎপাদন প্লান্ট স্থাপন সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ। বিশ্বের বৃহত্তম এলএনজি উৎপাদক ও রফতানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্রে এ-সংক্রান্ত জটিলতা বাড়ছে। সম্প্রতি একটি এলএনজি প্রকল্পের অনুমোদন জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত কারণ দেখিয়ে বাতিল করে দিয়েছেন দেশটির আদালত।
অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এলএনজির ব্যবহার নিরুৎসাহিত করে আসছে। সম্প্রতি ‘মিথেন রেগুলেশন’ নামে একটি আইন পাস করেছে ইইউ। এর আওতায় কম কার্বন নিঃসরণ হয় এমন এলএনজি ব্যবহারের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। এ ধরনের এলএনজি উৎপাদন প্লান্ট তৈরি আরো ব্যয়বহুল। ফলে জ্বালানিটির মূল্য বাড়ছে।
আইইএর জ্বালানি বাজার বিভাগের পরিচালক কেইসুকে সদামোরি বলেন, ‘সাম্প্রতিক বৈশ্বিক জ্বালানি সংকট থেকে পুনরুদ্ধারের গতি এখন পর্যন্ত শ্লথ, যা চলতি ও আগামী বছর বিশ্বব্যাপী গ্যাসের চাহিদা বাড়ার পেছনে ভূমিকা রাখছে।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘বর্তমানে চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এর অর্থ চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সরবরাহ পর্যাপ্ত পরিমাণে বাড়ছে না। ফলে ভবিষ্যতে গ্যাসের বাজারে অস্থিতিশীলতা ও অপ্রত্যাশিত দামের ওঠানামার ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।’