ইংলিশ অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ পৌঁছে গেছে বিশ্বব্যাপী

২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে উদ্যোগ নেয়া ইংলিশ অলিম্পিয়াড এখন নন-নেটিভ দেশগুলোয় ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে ১০৩টি দেশের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন এ অলিম্পিয়াডে। ১০০টি দেশে রয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর।

‘‌এডুকেশন ফার্স্ট নামে সুইজারল্যান্ডের একটি সংগঠন আছে। তাদের একটি জরিপ আছে নন-নেটিভদের মধ্যে কোন দেশের ইংরেজিতে কমিউনিকেশন দক্ষতা ভালো। জরিপে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭১তম। বাংলাদেশকে বলা হতো “‍ভ্যারি পুওর ইন কমিউনিকেশন”। এ তালিকা দেখে আমি আবেগাপ্লুত হয়ে যাই। তখন ভাবি এটায় বাংলাদেশের অবস্থান টেকনিক্যালি ওপরে তুলব’—এভাবেই নিজের স্বপ্নের কথা বলছিলেন ইংলিশ অলিম্পিয়াডের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও মোহাম্মদ আমান উল্লাহ।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে উদ্যোগ নেয়া ইংলিশ অলিম্পিয়াড এখন নন-নেটিভ দেশগুলোয় ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে ১০৩টি দেশের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন এ অলিম্পিয়াডে। ১০০টি দেশে রয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর। ২০১৬ সাল থেকে ইংলিশ অলিম্পিয়াডের তিনটি সিজনে প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। ইংলিশ অলিম্পিয়াডের সিজন-৪ শেষে গ্লোবাল ১০০ দেশের চ্যাম্পিয়নদের পৃথিবীতে তুলে ধরবে বাংলাদেশ।

দেশের তরুণদের নেতৃত্ব গুণাবলিকে আরো সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের ইংরেজি ভাষাজ্ঞানকে আরো দৃঢ় করতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে ইংলিশ অলিম্পিয়াডের সিজন-৪-এর ঢাকা পর্বের বাছাইপর্ব। গত শুক্রবার সকাল থেকে বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) ক্যাম্পাসে এ আয়োজনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। এ পর্বে ঢাকা বিভাগের প্রতিযোগীরা অংশগ্রহণ করেছেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইউআইইউ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া। এছাড়া অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস, চাইল্ড রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট ফাতিহা আয়াত, বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. ডেভিড ডোলান্ড, জনপ্রিয় শিক্ষক এবং শিক্ষা উদ্যোক্তা ফাহাদ হোসেন, বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ব্যারিস্টার সানী আব্দুল হক ও ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলি।

অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করতে সকাল থেকেই ইউআইইউ ক্যাম্পাসে আসতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। বেসরকারি এ উচ্চ শিক্ষালয়ের পুরো ক্যাম্পাস দিনভর মাতিয়েছেন শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক, আয়োজক ও সংশ্লিষ্টরা। এ ধরনের আয়োজন শিক্ষার্থীদের মনোবল বাড়াবে বলে মনে করেন অভিভাবকরা। সহশিক্ষার এমন অনুষঙ্গ নেতৃত্বের বিকাশের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আগামী দিনের জন্য প্রস্তুত করবে বলেও মনে করেন তারা।

এবার কুমিল্লাকে আলাদা বিভাগ বিবেচনায় মোট নয়টি বিভাগের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। তার অংশ হিসেবে ঢাকা পর্বের এ আয়োজন। প্রতিযোগিতার বিভিন্ন পর্যায়ের স্পোকেন ও লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিতে পারবেন অংশগ্রহণকরীরা। এ আয়োজনে খুদে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কিডজ থেকে শুরু করে স্মল-স্টার, জুনিয়রস, সিনিয়রস, হাই ফ্লাওয়ারস এবং উচ্চ শিক্ষালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ট্রেইল-ব্লেজারসসহ মোট ছয়টি বিভাগে প্রতিযোগীরা শ্রেষ্ঠত্বের এ লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছেন।

প্রতিযোগিতার শুরুতে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী থাকলে চূড়ান্ত পর্বে মুখোমুখি হয়েছেন পাঁচ হাজারের মতো শিক্ষার্থী। ইংলিশ অলিম্পিয়াডের চূড়ান্ত পর্বের চ্যাম্পিয়ন পাবেন ৩ লাখ টাকার সম্মাননা, মেডেল ও সার্টিফিকেট। এছাড়া ফাইনালের সব শিক্ষার্থীই পাবেন একটি করে মেডেল ও সার্টিফিকেট।

ইংলিশ অলিম্পিয়াডের আয়োজনে বরাবরই ভেন্যু পার্টনার হিসেবে থাকে বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ)। বিগত সব আয়োজনই হয়েছে দেশের অন্যতম এ উচ্চ শিক্ষালয়ের দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাসে। ইউআইইউ তার একাডেমিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে এসব আয়োজনে সহায়তা করছে বলে জানিয়েছেন বেসরকারি এ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জনসংযোগ দপ্তরের (পিআর) পরিচালক আবু সাদাত। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌এ ধরনের আয়োজনে আমরা থাকতে পেরে আনন্দিত। এটি আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতায় উৎসাহী করে এবং আগামীতেও আমরা এ ধরনের আয়োজনে থাকব।’

এবারের আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইংলিশ অলিম্পিয়াডের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার মোহাম্মদ আমান উল্লাহ বলেন, ‘‌আমরা আয়োজনের শুরু থেকেই দেশের শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। থিংক ইন ইংলিশ ধারণাকে জনপ্রিয় করার প্রত্যয়ে আমরা এটি শুরু করি। এটি এখন একটি প্রতিষ্ঠিত আয়োজন এবং আগামী দিনে বিশ্বে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে।’

আরও