৫ আগস্ট বিকাল ৫টা। উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকা থেকে সিভিল পোশাকে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি করতে করতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছিল। পুলিশের কাছাকাছি অবস্থান করায় আন্দোলনকারীরা মনে করেন রবিউল ইসলাম লিমন পুলিশের সঙ্গে থেকে তাদের ওপর হামলা করেছে। পরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় হামলার শিকার হন লিমন। একপর্যায়ে সেখানেই মারা যান পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম লিমন। রেখে যান পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে। এ অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তার স্ত্রী ও পরিবার। সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পড়াশোনা করে একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন লিমন। থাকতেন উত্তরার ফায়দাবাদ প্রাইমারি স্কুলের পাশে।
চাচা আহমেদ সাঈদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এলাকায় জনসাধারণ আনন্দ মিছিল করছিল। পাশের থানা থেকে পুলিশ বের হওয়ার সময় সাধারণ মানুষের ওপর গুলি শুরু করে। লিমন তার চাচার সঙ্গে কথা বলে একটু এগিয়ে যাওয়ার পরই বেশ কয়েকজন তাকে মারতে থাকে।
আহমেদ সাঈদ বলেন, ‘এর আগেও আমরা একসঙ্গে ছিলাম কিন্তু পরে আলাদা হয়ে যাই। আমি লিমনকে খুঁজতে থাকি। পরে আমি যখন লিমনকে খুঁজতে খুঁজতে একপর্যায়ে সেখানে যাই আমি দেখতে পাই কয়েকজন লিমনকে মারছে। পরে আমি লিমনকে জড়িয়ে ধরে সবাইকে মারতে নিষেধ করলে ১০-১২ জন আমাকে সেখান থেকে টেনে একটু দূরে নিয়ে এসে বলে যে সে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করেছে এজন্য তাকে মারা হচ্ছে। আমাকেও সন্দেহ করে সেখানে আমাকে মারতে শুরু করে। পরে একজন আমার ফোন চেক করে কিছু না পাওয়ায় আমাকে ছেড়ে দেয়। তখন আমি তাদের বলি যে লিমনকে বাঁচান কিন্তু তারা শোনেনি। পরিবেশ ঠান্ডা হলে সেখানে দেখা যায় লিমন ঘটনাস্থলেই মারা যায় এবং আমি আত্মীয়-স্বজনকে জানালে তারা কয়েকজন এসে সেখান থেকে মরদেহ নিয়ে আসে। সেদিন পরিবেশ খারাপ থাকায় কোনো মেডিকেলে নেয়া সম্ভব হয়নি। ঘটনাস্থলেই আমরা নিশ্চিত হই সে শহীদ হয়েছে। পরে তাকে নড়াইলে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।’
লিমন পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান। তিন মাস আগে তার বাবা মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর তার পরিবারে তিনি একমাত্র উপার্জন করতেন। ২০১৬ সালে বিবাহিত জীবন শুরু করেন। বর্তমানে তার স্ত্রী পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। লিমন সরাসরি আন্দোলনে যুক্ত না থাকলেও সবসময়ই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টও করেছেন আন্দোলনের পক্ষে।
লিমনের শহীদী মর্যাদা ও আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া চেয়েছে তার পরিবার। নিহত লিমনের চাচা সাঈদ বলেন, ‘মানসিকভাবে আমরা অনেক ভেঙে পড়েছি। এ মুহূর্তে অজ্ঞাত মামলা করতে চাই না, কারণ আমরা কাউকে চিহ্নিত করতে পারিনি। অজ্ঞাত মামলা করলে নিরপরাধ মানুষ জড়িয়ে যেতে পারে। মামলাও করতে চাই না। তবে একটি কথাই বলব সে সবসময় আন্দোলনের পক্ষে ছিল। এ মুহূর্তে তার ফ্যামিলিকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার আহ্বান রইল।’