আহ্ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা

বন্যায় ভেসে থাকবে বাড়ি

বন্যার পানিতে ভেসে থাকবে এমন মডেলের ঘর তৈরি করেছে আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এমএ মুক্তাদিরের নেতৃত্বে তার দুই সহকর্মী ড. জিএমএ বেলায়েত হোসেন ও ড. রুমানা রশীদ।

বন্যার পানিতে ভেসে থাকবে এমন মডেলের ঘর তৈরি করেছে আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এমএ মুক্তাদিরের নেতৃত্বে তার দুই সহকর্মী ড. জিএমএ বেলায়েত হোসেন ও ড. রুমানা রশীদ। ‘বন্যায় ভাসমান বাসগৃহের’ এ প্রকল্পের নাম দেয় হয়েছে ‘বানভাসি’। এটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারের জন্য সাশ্রয়ী হবে। সেই সঙ্গে গৃহবাসীদের দৈনন্দিন বসবাসের প্রয়োজন মেটানোর সঙ্গে সঙ্গে গৃহটিকে বন্যা ও ঝড়ঝঞ্ঝা থেকেও নিরাপদে রাখবে।

এ প্রকল্পের প্রধান অধ্যাপক ড. এমএ মুক্তাদির বলেন, ‘বন্যাকবলিত এলাকার কথা চিন্তা করে মিরপুরের হাউজ বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটে ২০২০ সালের মার্চে একটা ঘরের সাদামাটা সংস্করণ তৈরি করি। যার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের ধ্যানধারণার যথার্থতা সম্পর্কে নিশ্চিত হই। পরে উদ্ভাবিত ঘরের প্রাথমিক ডিজাইন নিয়ে কাজ করতে থাকি, যাতে ঘরটির শক্তি, স্থায়িত্ব, কার্যকারিতা ও নির্মাণব্যয় নিয়ন্ত্রণে থাকে। অবশেষে সাভারের গোলাপ গ্রাম অঞ্চলে ঘরটি আবার নির্মাণ করি। এবার ঘরটি আমাদের কাঙ্ক্ষিত রূপে কাজ করে এবং সাধারণ অবস্থায় মাটির ওপর বসে থাকলেও বানের পানি আসা এবং বাড়া-কমার সঙ্গে সঙ্গে ঘরটি নিজ অবস্থানে দাঁড়িয়ে থেকেই ধীরে ধীরে ওঠানামা করতে থাকে, যাতে বানের পানি কখনো ঘরের মেঝে ছুঁতে না পারে।

ঘর দুটি অংশে বিভক্ত, স্থিতিশীল ও গতিশীল। স্থিতিশীল অংশটি মাটির সঙ্গে দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত হয়ে থাকে এবং গতিশীল অংশটি স্থিতিশীল অংশটি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে বানের পানির উচ্চতা বাড়াকমার সঙ্গে সঙ্গে খাড়াভাবে যথাক্রমে উপর-নিচ করতে থাকে। পানির উচ্চতা স্থির থাকলে গতিশীল অংশটিও স্থিরভাবে পানির ওপর অবস্থান করতে থাকে এবং ঘরের মেঝের ওপর বসবাসকারীদের হাঁটাচলা করার কারণে ঘরের মেঝে আন্দোলিত হয় না, কারণ ঘরের গতিশীল অংশটির ওজন ঘরের অধিবাসী ও তাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্রের তুলনায় অনেক বেশি হয়ে থাকে। বানভাসির মেঝের সর্বমোট আয়তন ২০ বর্গমিটার। এতে মাঝবরাবর রয়েছে ১২ বর্গমিটার আয়তনের একটি হলঘর, যার সামনে ও পেছনে কেন্দ্রীয়ভাবে লম্বালম্বি হয়ে রয়েছে দুটি বাড়তি অংশ। এ দুটি অংশের প্রতিটির মেঝের আয়তন চার বর্গমিটার। সামনের অংশটি গৃহপ্রবেশের জন্য ব্যবহার হয়। পেছনের বাড়তি অংশটি একটি গোসলখানা ও রান্নার জন্য ব্যবহার হয়। সাধারণ অবস্থায় বানভাসি অনেকটা প্রচলিত গ্রাম্য কুটিরের মতোই দেখায়। কুঠিরটির ডিজাইন অনুযায়ী মাটির ওপর স্থির থেকে সর্বোচ্চ দুই মিটার পানির উচ্চতা পর্যন্ত কুঠিরটির মেঝে ওঠানামা করতে পারে। বানভাসি কুঠিরগুলো ছোট-বড় গুচ্ছবসতিরূপে গড়ে তোলা যেতে পারে, যাতে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা কিছুটা সহজ হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বানভাসি কুঠির বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের জন্য আশার আলো হবে এমনটাই বিশ্বাস আমাদের টিমের। এ গবেষণা আহ্ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ গ্রান্ডের সহযোগিতায় করা হয়েছে।

আরও