ক্যাম্পাস ভবনের স্থাপত্যশৈলী

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য স্থাপত্য রীতির দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে লাল ইটে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এক স্থাপনা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে লাল ইটে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এক স্থাপনা। দেশ ভাগ, ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধসহ জাতীয় জীবনের নানা ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহের নীরব সাক্ষী। গত এক শতাব্দীরও অধিক সময় সযত্নে ধরে রেখেছে নিজের জৌলুস। কার্জন হল। ঐতিহাসিক এ দৃষ্টিনন্দন স্থাপনায় সংমিশ্রণ ঘটেছে মুসলিম ও ইউরোপীয় স্থাপত্য রীতি। 

১৯০৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড জর্জ নাথানিয়েল কার্জন পূর্ব বাংলা সফরকালে এ স্থাপনার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কার্জন হলের মূল ভবনের সামনে ১৯০৪ সালে লর্ড কার্জনের উদ্বোধন করা নামফলকটি রয়েছে। তারই নামানুসারে এ ভবনের নামকরণ হয় কার্জন হল। ইতিহাস ও আধুনিকতার মিশেলে নির্মিত এ স্থাপত্য, যেখানে ঐতিহাসিক শিল্পের সঙ্গে সংমিশ্রণ ঘটেছে আধুনিক কারিগরি বিদ্যা। ভিক্টোরীয় স্থাপত্যরীতি, মোগল স্থাপত্যশৈলী ও বাংলার স্বতন্ত্র সংবেদনশীল বৈশিষ্ট্যের এ ভবনের বহিঃপৃষ্ঠে কালচে লাল রঙের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। মোগল ধাঁচের দৃষ্টিনন্দন খিলান ও গম্বুজগুলো প্রাচ্য ও ইসলামী স্থাপত্যের চিহ্ন বহন করে, যা কিছুটা দূর থেকে দেখতে চমৎকার দেখায়। এছাড়া মুসলিম স্থাপত্যরীতি এ ভবনে আংশিকভাবে স্পষ্ট। 

কার্জন হলের রঙ লাল হওয়ার পেছনেও রয়েছে ইতিহাস। মোগল সম্রাট আকবরের ফতেহপুর সিক্রির দিওয়ান-ই-খাসের অনুকরণে লাল বেলেপাথরের পরিবর্তে ব্রিটিশরা গাঢ় লাল ইট ব্যবহার করেছে। এ স্থাপনার মাধ্যমে ব্রিটিশরা প্রমাণ করতে চেয়েছে উপমহাদেশে তাদের অবস্থান আকবরের মতো। কেননা একমাত্র আকবরকেই তারা শ্রেষ্ঠ ও যোগ্য মোগল শাসক হিসেবে স্বীকার করত।

কারুকার্যখচিত দ্বিতল এ ভবনের ভেতরে রয়েছে একটি বিশাল কেন্দ্রীয় হল। সামনে রয়েছে একটি প্রশস্ত বাগান। বাগানের মাঝখান দিয়ে সবুজের বুক চিরে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে চলে গেছে একটি পায়ে হাঁটা সরু রাস্তা। পেছনে রয়েছে একটি বিশাল পুকুর। ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কার্জন হল এমন একটি স্থাপনা, যা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত রূপরস ধরে রেখেছে। বিগত এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে এ স্থাপনা যেন চিরযৌবনা হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে। 

বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা যায়, শুরুতে টাউন হল হিসেবে নির্মিত এ ভবন ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদের পর ঢাকা কলেজ ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। পরে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে ভবনটি বিজ্ঞান বিভাগের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে এবং এখনো এভাবেই চলছে। ১১৯ বছর ধরে ঢাকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য আর কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে কার্জন হল।

পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগের সংখ্যা বাড়ায় কার্জন হলের অবয়বের সঙ্গে মিল রেখে অন্য ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুস সামাদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌কার্জন হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নান্দনিক সৌন্দর্যের প্রতীক। সৌন্দর্যের কথা বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো কিছু ভবন কার্জন হলের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠার এত বছর পরও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ভবনটি। কোনো বড় ধরনের মেরামত করতে হয়নি।’

আরও