২০১৬ সালে আমরা বিশ্ব এতিম দিবস পালন করি। আবুল খায়ের স্টিল এটায় স্পন্সর করে। প্রেস কনফারেন্সের সময় আমরা বিভিন্ন দেশ থেকে হোয়াটসঅ্যাপে অনেক কল পাচ্ছিলাম। তখন বিভিন্ন দেশ থেকে যারা যোগাযোগ করেছে তাদের সঙ্গে কমিউনিকেশন করার জন্য টিম করি। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়ি টিমের সদস্যরা ইংরেজিতে ভালো কনভারসেশন করতে পারছিল না। আমাকে প্রেস কনফারেন্সের সময় পেছন থেকে এসে বলছিল ভাইয়া আপনি একটু কথা বলেন। অথচ যে এই কথা বলেছে সে কম্পিউটার সায়েন্সে শেষ বর্ষে পড়ছে। তখন আমার মনে হলো ইংরেজিতে ভালো কমিউনিকেশন করতে পারে এমন কিছু লোক আমার দরকার। বৈশ্বিক স্ট্যান্ডার্ড বজায় রেখে কাজ করতে পারে এমন লোক তৈরির জন্য প্রথম ফ্রি কোর্স করানোর সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু ট্রেনিং শুরুর পর দেখলাম একদিন আসে দুদিন আসে না। এরপর সিদ্ধান্ত নিই ইংলিশ অলিম্পিয়াড করার। যেখানে ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থীরা আসবে তাদের পুল আকারে পাব এবং বৈশ্বিকভাবে তুলে ধরব। চট্টগ্রামে আমার একটি স্কুল ছিল সেখান থেকে ছোট পরিসরে শুরু করি।
আমরা একটি গ্লোবাল কমিউনিকেশন স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করেছি। বাংলাদেশের শিক্ষাটা যেভাবেই মূল্যায়ন করি না কেন এটি ক্রিয়েটিভভাবে করা হয় না, সৃজনশীল বলছি কিন্তু সেখানেও মুখস্থ। অলিম্পিয়াডে আমরা ক্রস ওয়ার্ড পাজল সলভ করতে বলি। কারণ এটি তাদের অ্যানালাইটিক্যাল অ্যাবিলিটি, ডিপ থিঙ্কিং ও সল্যুশন করতে পারে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এটি নেই।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ১২ বছর ইংরেজি শেখার পরও কোর্স করতে হয়। এ শূন্যতা পূরণ করতে আমরা খুঁজে পাই ইংরেজিতে চিন্তা করি না আমরা। ট্রান্সলেশন করি। এটি স্ক্যান্ডিনেভিয়ান কোনো দেশে নেই। অলিম্পিয়াডে থিঙ্কিং ক্যাপাসিটি ডেভেলপ করা হয়। এখানে মুখস্থ করতে হয় না। জেনজি প্রটেস্ট নামে একটি টপিক পরীক্ষায় ছিল এটি কোনো বইতে এখন পর্যন্ত নেই, পরীক্ষার্থীদের তাদের নিজস্ব চিন্তা থেকেই লিখতে হবে। সমসাময়িক বিষয়ে তাদের লিখতে হচ্ছে। এর বাইরে ইন্টারন্যাশনাল ফোনেটিক অ্যালফাবেট (আইপিএ) প্রাকটিস হচ্ছে। এটা হলো ইংলিশ টু ইংলিশ ডিকশনারির ব্যবহার। আমরা ইংরেজিতে অর্থ খুঁজি না। বাংলায় সব অর্থ খুঁজি। এখানে নিউরোলজিক্যাল একটি বিষয় আছে, ট্রান্সলেশন করলেই ভাষার চর্চাটা ভালো হবে না। তাই অলিম্পিয়াডে ইংরেজিতে চিন্তা করার দক্ষতা বিকশিত করার চেষ্টা করি। এটি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
ইংলিশ অলিম্পিয়াডের ট্রেডমার্ক করেছি আমরা। ট্রেডমার্ক অফিসে আমাদের শুনানি করতে হয়েছে কেন ইংলিশ অলিম্পিয়াড বাংলাদেশে হবে। আমরা বলেছি পৃথিবীর আর কোথাও হয় না তাই আমরা করব। বাংলাদেশ থেকে ট্রেডমার্ক নিয়ে এ রকম একটি বৈশ্বিক প্রতিযোহিতা কেন দাঁড় করাব না। প্রথমবার আয়োজন করার পরই আমরা জনপ্রিয়তা পাই। দ্বিতীয়বার অলিম্পিয়াডে ৫০ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। সারা দেশের ৬৪ জেলায় ছয়টি ক্যাটাগরিতে আমরা অলিম্পিয়াড করি, তাই এক বছরে শেষ করতে পারি না। প্রত্যেক দুই বছরে একটি অলিম্পিয়াড শেষ করতে হয়। করোনার সময় ৪৩টি দেশ থেকে অলিম্পিয়াডে রেজিস্ট্রেশন করে। বর্তমানে ১০৩টি দেশের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় আমাদের অলিম্পিয়াডে। নন-নেটিভ দেশগুলোয় ভালো সাড়া পাওয়ার পাশাপাশি নেটিভদের থেকেও ইংলিশ অলিম্পিয়াডের জন্য ভালো সাড়া পাচ্ছি। আমরা নেটিভদের জন্যও এ অলিম্পিয়াড করব। বাংলাদেশ থেকে উদ্যোগ নেয়া ইংলিশ অলিম্পিয়াড এখন বিশ্বব্যাপী আয়োজিত হচ্ছে।
মোহাম্মদ আমান উল্লাহ: প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও, ইংলিশ অলিম্পিয়াড