সাক্ষাৎকার

শিক্ষা নিয়ে সবার আগে কমিশন হওয়া দরকার ছিল

ড. খোরশেদ আলম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ‘‌ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজ’ প্লাটফর্মের অন্যতম সদস্য।

ড. খোরশেদ আলম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ‘‌ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজ’ প্লাটফর্মের অন্যতম সদস্য। উচ্চ শিক্ষা সংস্কারে প্রস্তাবের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম

‘‌ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজ’ প্লাটফর্মের মাধ্যমে শিক্ষা সংস্কারে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। এ প্লাটফর্ম সম্পর্কে জানতে চাই।

‘‌ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজ’ দলীয় রাজনীতিমুক্ত একটি শিক্ষক প্লাটফর্ম, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতা নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অগ্নিগর্ভ থেকে উত্থিত এ প্লাটফর্মটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান লেজুড়বৃত্তিক শিক্ষক সংগঠনের বাইরের একটি সংঘ। এখানে ৩০ জনের বেশি শিক্ষক রয়েছেন যারা শিক্ষা সংস্কার ও শিক্ষা ব্যবস্থার নানা দিক নিয়ে কাজ করছেন। শিক্ষা সংস্কারে যা যা দরকার আমরা করব। এর বাইরেও আমাদের পরিকল্পনা আছে। জাতীয় বিভিন্ন ইস্যু যেমন অর্থনীতির ক্ষেত্রে কী ধরনের সংস্কার করা যেতে পারে সে ব্যাপারেও আমরা প্রস্তাব হাজির করেছি। সংবিধান ও রাষ্ট্র সংস্কারে ধারাবাহিক কিছু কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে। তবে আমাদের মূল ফোকাস উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করা।

উচ্চ শিক্ষা সংস্কারে বিভিন্ন সময়ে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আপনাদের এ প্রস্তাবের বিশেষত্ব কী?

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কও শিক্ষা সংস্কার নিয়ে কাজ করছে। আমাদের এ প্লাটফর্মের কেউ কেউ সেখানেও কাজ করে। দেশে যত ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেমন পাবলিক, প্রাইভেট, কৃষি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সেনাশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়—এ রকম ছয় ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। আমরা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কথা বলছি। ১৯৭৩ সালে অধ্যাদেশভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এটি। নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যে কারণে একই প্রস্তাব অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দেয়া সম্ভব নয়। কারণ তাদের কাঠামো ভিন্ন। আমরা বিশেষ করে ঢাবির সমস্যা চিহ্নিত করে কাজ করছি। আমরা মনে করি ঢাবির সমস্যাগুলো বিবেচনায় নিয়ে যদি আলাপ করি তাহলে সেগুলো অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও প্রাসঙ্গিক হলে সেখানে কার্যকর করা যেতে পারে। তারাও এটি গ্রহণ করতে পারে। আমাদের বিশেষত্ব আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক ইস্যু নিয়ে কাজ করছি এবং কোনো দলীয় ব্যানার থেকে কাজ করছি না। কোনো দলীয় এজেন্ডা নয়, ছাত্র-শিক্ষকের অবস্থান থেকে শিক্ষার গুণগত পরিবর্তন চাই। ঢাবিকে টিচিং থেকে রিসার্চ ইউনিভার্সিটিতে উন্নীত করতে চাই। 

অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারে ছয় কমিশন গঠন করেছে। শিক্ষা কমিশন গঠন করা প্রয়োজন রয়েছে কি?

আমরা মনে করি, যে ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে সেগুলো প্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো বিষয় বিশেষ করে শিক্ষা নিয়ে সবার আগে কমিশন হওয়া দরকার ছিল। সবকিছুর মূলে রয়েছে আমাদের শিক্ষার ঘাটতি। চলমান শিক্ষা ব্যবস্থা যে ধরনের গ্র্যাজুয়েট তৈরি করছে তারা কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে না, আবার পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানও নেই। এছাড়া নানা ধরনের বৈষম্য আছে। যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত শিক্ষানীতি প্রণয়ন দরকার। যে শিক্ষানীতি এমন গ্র্যাজুয়েট তৈরি করবে যারা কর্মসংস্থানে গিয়ে বৈষম্যের শিকার হবে না এবং চাকরির জন্যও সে প্রস্তুত থাকবে। উচ্চ শিক্ষার আমূল সংস্কার দরকার। শিক্ষা কমিশন গঠনের জোর দাবি জানাই।

আরও