ফার্মেসি

দেশে ফার্মেসি শিক্ষার যাত্রা ষাটের দশকে, ঢাবিতে

অখণ্ড পাকিস্তান রাষ্ট্রে ১৯৪৮ সালে প্রথম ফার্মেসি বিভাগ খোলা হয় লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ে।

অখণ্ড পাকিস্তান রাষ্ট্রে ১৯৪৮ সালে প্রথম ফার্মেসি বিভাগ খোলা হয় লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সে সময় পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) চাহিদা বিবেচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিভাগ খোলা ছিল সময়ের দাবি। এ রকম প্রেক্ষাপটে ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ৬০ বছর আগের সেই চারাগাছটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আজ মহীরুহে পরিণত হয়েছে। 

‘‌বাংলাদেশে ফার্মেসি শিক্ষার ইতিহাস ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক গ্রন্থানুযায়ী, পূর্ব পাকিস্তানের ফার্মাসিস্টদের জন্য ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং এক যুগেরও বেশি সময় চলে যাওয়ার পর তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে ফার্মেসিতে ভর্তির বাস্তব সমস্যা ও বৈষম্যের কথা চিন্তা করেই পূর্ব পাকিস্তানে একটি ফার্মেসি বিভাগ খোলার চেষ্টা শুরু করেন ড. আবদুল জব্বার। কিন্তু ফার্মেসির প্রয়োজনীয় শিক্ষক না পাওয়ার অজুহাতে উদ্যোগটি থেমে যায়। পরে ১৯৬০ সালে ড. জব্বার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোর স্কুল অব ফার্মেসিতে এক বছরের জন্য ফার্মেসি বিষয়ে পাওয়া একটি ফেলোশিপ শেষ করে দেশে ফিরলে ফার্মেসি বিভাগ খোলার উদ্যোগটি আবার শুরু হয়। সদ্য প্রতিষ্ঠিত প্রাণরসায়ন বিভাগের প্রধান ড. কামালউদ্দিন আহমেদও এ বিষয়ে একমত। ড. কামাল প্রাণরসায়নের তিনজন মেধাবী ছাত্রকে (আবদুর রশীদ পুরকায়স্থ, শুকুর খান ও শামসুল আলম তালুকদার) ফার্মেসিতে বিদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করান। পরে এ তিনজনকে সম্ভাব্য শিক্ষক তালিকায় রেখে ড. জব্বার ও ড. কামাল ফামেসি বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠান। অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর অবশেষে ১৯৬২ সালে পরিকল্পনা কমিশন বিভাগ খোলার প্রস্তাবটি অনুমোদন করে। 

ফার্মেসি বিভাগের ক্লাস শুরু হয় ১৯৬৪ সালের জুলাইয়ে। সবাই সিদ্ধান্ত নিলেন এ নব প্রতিষ্ঠিত ফার্মেসি বিভাগের সিলেবাস হবে লন্ডন স্কুল অব ফার্মেসির অনুরূপ। প্রতিষ্ঠাকালীন ২০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন ছিলেন ছাত্রী। শিক্ষক তালিকায় ছিলেন ড. জব্বার, ড. কামালসহ রসায়ন বিভাগের ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি কোর্সের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকরা। সেই সঙ্গে ফিজিওলজি ও ফার্মাকোলজি পড়ানোর জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে খণ্ডকালীন ভিত্তিতে শিক্ষক আনা হলো। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি থেকে টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞদেরও খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নেয়ার সিদ্ধান্ত হলো। কিন্তু কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে দুয়েকজন ছাড়া তেমন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। 

বিশ্বব্যাপী ওষুধ বিজ্ঞানের ব্যাপক চাহিদা মিলিয়ে অগ্রগতির সঙ্গে বাংলাদেশের ফার্মেসি শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার এবং ফার্মাসিস্টদের পেশাগত দক্ষতাকে আরো উপযোগী করার লক্ষ্যে নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ফার্মেসি বিভাগকে অনুষদে রূপান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়। ড. জব্বারসহ প্রবীণ সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী এ উদ্যোগ নেন এবং প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করেন। কিন্তু এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন উপাচার্য বদল হলেও কেউই ফার্মেসি বিভাগকে অনুষদে রূপান্তর করেননি। পরে অধ্যাপক আজাদ চৌধুরী শিক্ষকদের ভোটে সিন্ডিকেট সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তার অনেক প্রচেষ্টার ফলে সিন্ডিকেটে তা পাস হয় এবং ফার্মেসি বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে অনুষদে রূপান্তর হয়। সালটা ১৯৯৫।  

ফার্মেসি বিভাগকে অনুষদে রূপান্তর করতে ফার্মেসি বিভাগ এবং মাস্টার্স পর্যায়ে পড়ানোর জন্য পাঁচটি বিভাগ চালু করার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাত্র তিনটি বিভাগের অনুমোদন পাওয়া যায়। বাকিগুলো পরে বিবেচনা করা যাবে বলা হয়। শুধু তাই নয়, ফার্মেসি বিভাগকেই ২০০৩ সালে অবলুপ্ত করা হয় এবং এ কোর্স পড়ানোর জন্য ফার্মেসি অনুষদকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ফার্মেসি বিভাগকে বেআইনি অবলুপ্তির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। দীর্ঘ সময় পর ২০১৪ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের আদেশে এর সুরাহা হয় এবং ফার্মেসি বিভাগটি দীর্ঘ ১১ বছর পর ফার্মেসি অনুষদে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।

ঢাবি ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘‌দেশের কোম্পানিগুলোর কাছে প্রযুক্তি স্থানান্তর, নিত্যনতুন প্রায়োগিক ফর্মের ব্যবহার, ফর্মুলেশনের বৈচিত্র‍্য, ‘নিউ মলিকুল’ অতি দ্রুত বাংলাদেশে তৈরি ও অনেক কম মূল্যে বাজারজাত, প্রযুক্তিগত উৎপাদন থেকে শুরু করে সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি সব ক্ষেত্রে এ বিভাগ ও অনুষদ থেকে জনবল গেছে এবং তারা অধিকাংশই অত্যন্ত দায়িত্বপূর্ণ পদে কাজ করছেন।’

আরও