ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি কাউন্সেলিং অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার

উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে সবচেয়ে সমৃদ্ধ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র

ব্র্যাক ইউনিভাসিটির শিক্ষার্থী তরী (ছদ্মনাম)। কিছুদিন ধরে তার মন একেবারেই ভালো নেই। একদিকে ক্লাসের চাপ, অন্যদিকে ব্যক্তিগত জীবনের নানা সংকট কিছুতেই যেন আর সামলে উঠতে পারছেন না।

ব্র্যাক ইউনিভাসিটির শিক্ষার্থী তরী (ছদ্মনাম)। কিছুদিন ধরে তার মন একেবারেই ভালো নেই। একদিকে ক্লাসের চাপ, অন্যদিকে ব্যক্তিগত জীবনের নানা সংকট কিছুতেই যেন আর সামলে উঠতে পারছেন না। মনে হচ্ছিল যেন জীবনটা ক্রমশ জটিল হয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন ধরেই তরীকে অন্যমনস্ক দেখছে সহপাঠী রেখা। বিষয়টি বুঝতে পেরে তরীকে ইউনিভার্সিটির কাউন্সেলিং সেন্টারের সেবা নেয়ার পরামর্শ দেন। রেখা এটিও জানান যে সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলররা খুবই দক্ষ এবং সর্বোচ্চ গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। প্রথমে একটু দ্বিধা হলেও পরের দিনই তরী সাহস করে কাউন্সেলিং সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তরীর মতো আরো অনেক শিক্ষার্থী আছেন, যারা নিজেদের মানসিক সমস্যার কথা প্রকাশ করতে পারেন না। তাদের জন্য ভরসার এক জায়গা ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কাউন্সেলিং অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার। এ সেন্টারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও সেবা শিক্ষার্থীদের মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। চলতি বছর অক্টোবরের ২০ তারিখ পর্যন্ত কাউন্সেলিং নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ১ হাজার ৩২০ জন শিক্ষার্থী। তাদের মানসিক সুস্থতায় ২ হাজার ৭০৮টি সেশন পরিচালনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলররা।

শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে ২০০৮ সাল থেকে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি চালু করে কাউন্সেলিং সেবা। বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কাউন্সেলিং সেন্টারটি সবচেয়ে সমৃদ্ধ। প্রখ্যাত সাইকোথেরাপিস্ট ড. মেহতাব খানমের নেতৃত্বে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি কাউন্সেলিং অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টারটিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১১ জন সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলর শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিচ্ছেন।

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির এ কাউন্সেলিং ও ওয়েলনেস সেন্টার মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অসংখ্য কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। শিক্ষার্থীদের জীবনের ব্যথা-বেদনা, দুঃখ-কষ্টকে জয় করে সুস্থ, সুন্দর ও শক্তিশালী মনন তৈরি করার মাধ্যমে তাদের আগামীর যোগ্য নেতৃত্ব হিসেবে তৈরি হতে সহায়তা করাই সেন্টারটির মূল লক্ষ্য।

কাউন্সেলিং সেন্টারের সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে একক কাউন্সেলিং, যৌথ কাউন্সেলিং, প্যারেন্ট কাউন্সেলিং এবং দলীয় কাউন্সেলিং। একক কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো একান্তে শেয়ার করতে পারেন এবং নিজেদের মধ্যে নতুন সমাধানের পথ খুঁজে পান। দলীয় কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে অন্যদের কাছ থেকে সমর্থন, পরামর্শ এবং উত্তরণের শক্তি পান, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে শক্তিশালী করে তোলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী এখন নিজেরাই তাদের সমস্যা নিয়ে এগিয়ে এসে কাউন্সেলিং সেবা গ্রহণ করছেন। তারা বুঝতে শিখেছেন যে মানসিক স্বাস্থ্য কোনো লজ্জার বিষয় নয়, বরং এটি সচেতনতার অংশ। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কাউন্সেলিং সেন্টার নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও কর্মীদের জন্য কর্মশালা, প্রশিক্ষণ ও সেমিনারের আয়োজন করে থাকে। এ কর্মশালাগুলোয় শেখানো হয় জীবনের প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে কীভাবে নিজের অন্তর্নিহিত শক্তিকে খুঁজে পাওয়া যায়, কীভাবে নিজের প্রতি ভালোবাসা বাড়ানো যায় এবং চাপ বা হতাশা মোকাবেলা করা যায়। সেই সঙ্গে এ সেন্টারে নিয়মিতভাবে যোগ ব্যয়াম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও রয়েছে।

এছাড়া কাউন্সেলিং সেন্টারের উদ্যোগে মেইন ক্যাম্পাস এবং সাভারে অবস্থিত রেসিডেন্সিয়াল সেমিস্টারে নিয়মিতভাবেই অ্যান্টি-বুলিং ক্যাম্পেইন আয়োজন করা হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্মানবোধ ও সহমর্মিতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এ ক্যাম্পেইনগুলো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সেলিং সেন্টার কাজ করে যাচ্ছে। এ লাইভসেশনগুলোয় ব্যক্তিগত টানাপড়েনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়টির কাউন্সেলিং অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টারের কো-অর্ডিনেটর শমী সুহৃদ বলেন, ‘বাংলাদেশের আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এর চেয়ে বড় কাউন্সেলিং সেন্টার নেই। আমরা নতুন প্রজন্মের কাছে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব তুলে ধরতে চেয়েছি সবসময়। ছাত্রছাত্রীরাও সাড়া দিয়ে নিজের যত্নের জন্য কাউন্সেলিং সার্ভিস নিচ্ছে নিয়মিত। অনেকেই নিজেরা উপকৃত হয়ে বন্ধুদেরও উৎসাহিত করছে সার্ভিসটি নিতে। তারা এখন মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে সচেতনতা হিসেবে দেখছে, দুর্বলতা নয়।’

সেন্টারের প্রিন্সিপাল সাইকোথেরাপিস্ট অধ্যাপক মেহতাব খানম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। বর্তমান সময়ে এটি অত্যন্ত জরুরি। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির এ উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের জীবনকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে, যা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা শুধু মনের সুস্থতার জন্যই নয়, এটি তাদের একাডেমিক ও পেশাগত জীবনেও সমানভাবে প্রয়োজনীয়। আমরা শিক্ষার্থীদের নিজের প্রতি মনোযোগ দিতে এবং আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের সংকটগুলোকে শক্তিতে পরিণত করার পথকে সুগম করতে সহায়তা করি। তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি আমাদের ভবিষ্যতের নেতৃত্ব তৈরি করবে, আর এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’

আরও