যেভাবে রাশিয়ায় ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ পেলেন খাগড়াছড়ির ফয়সাল

বাংলাদেশের পার্বত্য জনপদের স্বপ্নচারী ফয়সাল। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়েও যেখানকার শিক্ষা ব্যবস্থা রয়ে গেছে সেকেলে।

বাংলাদেশের পার্বত্য জনপদের স্বপ্নচারী ফয়সাল। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়েও যেখানকার শিক্ষা ব্যবস্থা রয়ে গেছে সেকেলে। কিন্তু অদম্য ইচ্ছা সেকেলে রয়ে থাকেনি এ পার্বত্যের অনেক স্বপ্নচারীর। তেমনি এক উচ্চকাঙ্ক্ষী স্বপ্নচারী এমএফ ফয়সাল। যিনি রাশিয়া সরকারের শতভাগ শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে আইটিএমও ইউনিভার্সিটিতে (সেন্ট পিটার্সবার্গ ন্যাশনাল রিসার্চ ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজিস, মেকানিকস অ্যান্ড অপটিকস) ব্যাচেলর প্রোগ্রামের ইনফরমেটিকস অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়তে যাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি বিশ্বের কম্পিউটার সায়েন্স ফিল্ডে কিউএস র‍্যাঙ্কিংয়ে ৭৯তম। তার বাড়ি খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলায়। ফয়সালের বিশ্বের সেরা এ বিদ্যাপীঠে পড়ার সুযোগকে পার্বত্যের শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণার প্রতীক মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।

ফয়সাল একজন কোরআনের হাফেজও বটে। তিনি রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাড়াও মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে চান্স ও রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয়ে। পাশাপাশি বিদেশে উচ্চ শিক্ষার প্রস্তুতি যাত্রায় রাশিয়া সরকারের শতভাগ শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে বাজিমাত করেন পার্বত্যের এ মেধাবী।

আইটিএমও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার প্রস্তুতি সম্পর্কে ফয়সাল বলেন, ‘প্রথমেই আমাকে রাশিয়া সরকারি শিক্ষাবৃত্তিতে আবেদনের জন্য উচ্চ মাধ্যমিকের ও মাধ্যমিকের সনদ সত্যায়িত করতে হয়। পাশাপাশি সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমের সনদ গোছানো, মোটিভেশনাল লেটার তৈরি ও রেফারেন্স লেটার সংগ্রহ করি। অতঃপর ২০২৩ সালের অক্টোবরে অনলাইনে আবেদন করি এবং প্রস্তুতকৃত কাগজপত্র ঢাকার রাশিয়ান হাউজে জমা দিই। প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে ১০ হাজারের বেশি আবেদনকারীর মধ্যে ৭০ জনকে ভাইভার জন্য রাশিয়ান এম্বাসিতে ডাকা হয়। সেখানে ইন্টারভিউ বোর্ডে নিজেকে স্মার্টলি উপস্থাপন করি। তার কয়েকদিন পরই স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার আসে।’

ফয়সাল বলেন, ‘বিদেশে শিক্ষাবৃত্তি পেতে ভালো রেজাল্টের পাশাপাশি সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এ ক্ষেত্রে কম্পিউটার স্কিলসের ওপর আমার ভালো দখল ছিল। এছাড়া সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ক সংগঠনের ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর, বিতর্কের সাফল্য, কোয়ান্টাম মেথডের কর্মশালায় প্রশিক্ষণ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন ও ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কিত অনলাইন কোর্স আমার অর্জনের ঝুলিতে ছিল। এসব কিছু আমার উচ্চ শিক্ষার যাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রেখেছে বলে আমি মনে করি।’

রাশিয়ার শিক্ষাবৃত্তি সম্পর্কে ফয়সাল বলেন, ‘সেখানে আমার টিউশন ফি ফ্রি। পাশাপাশি তারা অ্যাকোমোডেশন এবং মাসিক অর্থ প্রদান করবে। পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম চাকরি করার সুযোগও থাকবে।’ ফয়সাল তার কৈশোরকালের শিক্ষা সম্পর্কে জানান, স্বপ্নপূরণের জন্য তার এলাকায় শিক্ষার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ছিল না। তাই তিনি স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে কুমিল্লা থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা এবং ঢাকার তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন।

দেশকে তিনি ভবিষ্যতে কী দিতে চান এমন প্রশ্নে ফয়সাল বলেন, ‘আমি শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত জ্ঞানের ঘাটতি পূরণে আগ্রহী। আমি দেশে ডিজিটাল লিটারেসি প্রোগ্রাম তৈরি করতে চাই, যা শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে। আমি দেশব্যাপী প্রযুক্তি সরঞ্জাম যেমন ইন্টারেকটিভ লার্নিং প্লাটফর্ম এবং কোডিং পাঠের পরিচিতি ঘটাতে পরিকল্পনা করছি, যেটি আমাদের শিখন প্রক্রিয়াকে আরো আকর্ষণীয় ও সহজলভ্য করে তুলবে। ভবিষ্যতে দেশে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করার স্বপ্ন দেখি, যেখানে সবার কাছে ডিজিটাল দক্ষতা থাকবে, যা তাদের সফল হতে সাহায্য করবে।’

আরও