বিদেশে উচ্চ শিক্ষা নেয়ার হার দিন দিন বেড়েই চলছে। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে দেশের বাইরে উচ্চ শিক্ষা অর্জন বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য অনেকটা স্বপ্নের মতো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ চালু আছে। তার মধ্যে ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ অন্যতম। সম্প্রতি এ স্কলারশিপপ্রাপ্ত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. আবদুস সামাদের সহযোগিতায় এ প্রতিবেদনটি লিখেছেন নাঈম আহমদ শুভ
ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ কী?
ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ হলো একটি আন্তর্জাতিক স্কলারশিপ প্রোগ্রাম, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বারা পরিচালিত হয়। এর উদ্দেশ্য হলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চ শিক্ষার সুযোগ তৈরি করা। এ স্কলারশিপের মাধ্যমে সাধারণত শিক্ষার্থীরা ইউরোপের একাধিক দেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারে। এছাড়া কিছু কিছু ইরাসমাস প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে এক বা একাধিক সেমিস্টার ইউরোপের বাইরের কোনো ইউনিভার্সিটিতেও পড়ানো হতে পারে। স্কলারশিপটি সাধারণত মাস্টার্স ও ডক্টরাল প্রোগ্রামের জন্য দেয়া হয়। এতে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, বাসস্থান, ভ্রমণ খরচ, ভ্রমণ ও স্বাস্থ্য বীমা এবং অন্যান্য খরচের জন্য আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়। ইরাসমাস প্রোগ্রাম বৈশ্বিক শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়কে উৎসাহিত করে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে সাহায্য করে। এ প্রোগ্রামে আবেদনের শেষ সময় সাধারণত জানুয়ারিতে হয়ে থাকে। কোনো কোনো প্রোগ্রামে আবেদনের শেষ সময় ডিসেম্বরে আবার কোনোটির ফেব্রুয়ারিতে।
সিলেকশনে কী কী যোগ্যতা লাগে?
একাডেমিক যোগ্যতা: আবেদনকারীকে সাধারণত একটি স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অথবা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হয়। বেশকিছু প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে ব্যাচেলরে অধ্যয়নরত অবস্থায়ও আবেদন করা যায়, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রাম কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাচেলর সম্পন্ন করতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রার্থীর সিজিপিএ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তবে কিছু প্রোগ্রামে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে।
ভাষার দক্ষতা: ইংরেজি বা প্রোগ্রামের ভাষায় ভালো দক্ষতা থাকতে হবে। সাধারণত আইইএলটিএস বা সমমানের পরীক্ষার স্কোর প্রয়োজন হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মিডিয়াম অব ইন্সট্রাকশন দিয়েও আবেদন করা যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে স্কলারশিপের জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় বলে অনেকে মনে করেন।
গবেষণার অভিজ্ঞতা: কিছু ক্ষেত্রে গবেষণার অভিজ্ঞতা বা গবেষণা সম্পর্কিত কাজের অভিজ্ঞতা মূল্যায়িত হতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটি বাধ্যতামূলক নয়।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজের অভিজ্ঞতা ও এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ: সাধারণত কাজের অভিজ্ঞতা ও এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ যেকোনো প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। তবে কাজের অভিজ্ঞতা সংশ্লিষ্ট ফিল্ডে হতে হবে। যেসব শিক্ষার্থীর জিপিএ কম তাদের জন্য এ অভিজ্ঞতাগুলো অত্যন্ত সহায়ক হতে পারে।
প্রত্যেক প্রোগ্রামের জন্য নির্দিষ্ট যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন হতে পারে, তাই আবেদন করার আগে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে বিস্তারিত তথ্য দেখে নেয়া গুরুত্বপূর্ণ।
স্কলারশিপ পাওয়ার কৌশল: ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য আগ্রহীরা কিছু কার্যকর কৌশল অবলম্বন করতে পারেন।
প্রোগ্রাম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা অর্জন করা: একজন প্রার্থী যে প্রোগ্রামে আবেদন করবেন সে প্রোগ্রামের বিষয়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে হবে। তাদের গবেষণার ক্ষেত্র এবং অ্যাপ্লিকেশনের সঙ্গে প্রার্থীর সামগ্রিক প্রোফাইল কীভাবে প্রাসঙ্গিক করা যায় সেটি বের করতে হবে।
সিভি: বেশির ভাগ প্রোগ্রামে সিভি চাওয়া হয় সাধারণত ইউরোপাস ফরম্যাটে। একজন প্রার্থীর সিভিই সবচেয়ে আগে দেখা হয়। সুতরাং শিক্ষা ও পেশাগত অর্জনগুলোকে হাইলাইট করে একটি সিভি তৈরি করতে হবে। একাধিক প্রোগ্রামে আবেদনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রামের ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে। একই সিভি আলাদা আলাদা প্রোগ্রামে সাবমিট করা যাবে না।
মোটিভেশন লেটার: স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে কেন আপনি এ স্কলারশিপের জন্য আবেদন করছেন, আপনার লক্ষ্য কী এবং কেন আপনি ওই প্রোগ্রাম নির্বাচন করেছেন। আবেদনের সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট এটি। একটি ভালো মোটিভেশন লেটার একজন প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
রিকমেন্ডেশন লেটার: অভিজ্ঞ ও স্বীকৃত ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রোগ্রামের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক রিকমেন্ডেশন লেটার সংগ্রহ করতে হবে। এটি আপনার প্রোগ্রাম ও ফিল্ডের প্রতি আগ্রহ ও সক্ষমতা তুলে ধরতে সাহায্য করবে। জেনেরিক লেটার প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেবে।
ভাষার দক্ষতা: ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা বাড়াতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষায় ভালো স্কোর করার চেষ্টা করতে হবে।
গবেষণা ও প্রকাশনা: যদি সম্ভব হয় আপনার ফিল্ডে গবেষণা করুন এবং প্রকাশনা করুন। এটি আপনাকে অন্য আবেদনকারীদের তুলনায় আলাদা করে তুলবে।
ইন্টারভিউ প্রস্তুতি: বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইন্টারভিউ হতে পারে, তাই প্রস্তুতি নিন এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে উত্তর দিতে চেষ্টা করুন।