দেশে অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান থাকলেও তরুণ শিক্ষার্থীদের অনেকেই এসব প্রতিষ্ঠানের গবেষণার ক্ষেত্র এবং সেখানে গবেষণার সুযোগ ও গবেষণায় ক্যারিয়ার গড়ে তোলার পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত নন। তাই বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের এসব গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরিচিত করা, সেখানে গবেষণা ও ক্যারিয়ার তৈরির সুযোগ সম্পর্কে ধারণা দেয়া এবং বিজ্ঞান গবেষণায় আগ্রহী করে তোলার উদ্দেশ্যে আয়োজন করা হয় ‘দেশীয় গবেষণা ও গবেষণায় ক্যারিয়ার উৎসব’। এ উৎসবের মূল উদ্দেশ্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বিজ্ঞান চর্চার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরিতে একটি পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র সৃষ্টি করা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আয়োজিত এ উৎসবে দেশের বিভিন্ন বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিজ্ঞান ক্লাব অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে ঢাকা ইউনিভার্সিটি সায়েন্স সোসাইটি (ডিইউএসএস) এবং জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর। দেশের ২০টি গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা ও বিজ্ঞান গবেষণায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের সমাগমে মুখরিত ছিল অনুষ্ঠানটি।
উৎসবে দেশের গবেষণার পরিস্থিতি, গবেষণার বিভিন্ন ক্ষেত্র এবং সম্ভাবনা নিয়ে আয়োজন করা হয় বিজ্ঞান ক্লাব মতবিনিময় সভা। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় বিজ্ঞান সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশবরেণ্য স্বনামধন্য গবেষকরা। পরিচালনায় ছিল দেশের জনপ্রিয় বিজ্ঞান ব্যক্তিত্বদের একটি প্যানেল। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি ও দর্শকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ছিল টেলিস্কোপে আকাশ পর্যবেক্ষণ, বিজ্ঞানের নানা মজাদার ঘটনার প্রদর্শনী ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি। বিজ্ঞান ক্লাব সম্মেলন ও মতবিনিময় সভায় অংশ নেয় ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় ও চারটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
গবেষণা উৎসব প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, বাংলাদেশ পানি সম্পদ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটসহ মোট ১৬টি স্টল ছিল। সেখানে গবেষকরা তাদের উদ্ভাবিত গবেষণা প্রযুক্তি উপস্থাপন করেন। একই সঙ্গে টিএসসির গেমস রুমে ডিইউএসএসের ডেমন্ট্রেশন দল আয়োজন করে মজার বৈজ্ঞানিক খেলা ও প্রদর্শনী। তাদের সঙ্গে আরো ছিল রোবাস্ট রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের পক্ষ থেকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি শো। দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এ শোর মাধ্যমে মোট ছয়টি ঐতিহাসিক স্থানকে ভার্চুয়ালি দেখানো হয়। ঐতিহাসিক স্থানের মধ্যে ছিল সোনারগাঁর পানাম সিটি, বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ, যশোরের ১১ শিবমন্দির, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছোট সোনামসজিদ, সোনারগাঁর বড় সর্দারবাড়ি এবং দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির। ছয়টি ঐতিহাসিক স্থাপনার ম্যাপ তৈরি করতে তাদের প্রায় পাঁচ বছর সময় লেগেছে। রাত ৮টায় স্কিথ ক্যাসেগ্রেইন নামের আধুনিক টেলিস্কোপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে আকাশ পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেয়েছিল। এর আগে ২০১৮ সালে প্রথম আয়োজন করা হয়েছিল দেশীয় গবেষণা ও ক্যারিয়ার উৎসব। আগামী নভেম্বরে এ ধরনের আরেকটি আয়োজনের কথা জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স সোসাইটি।
দেশীয় গবেষণা ও গবেষণায় ক্যারিয়ার উৎসবের বিষয়ে আয়োজক সংগঠন ডিইউএসএসের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাফিদ ফাইয়াজ বলেন, ‘আমরা দ্বিতীয়বারের মতো এ উৎসবের আয়োজন করছি। আমরা চাই আমাদের দেশের বিজ্ঞানের অগ্রগতি প্রচার করতে ও বিজ্ঞানে অগ্রগণ্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে একসঙ্গে নিয়ে আসতে। এ আয়োজনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণা ও সেখানে ক্যারিয়ারের পাশাপাশি আরো কিছু প্রতিষ্ঠান থাকছে যারা জার্নাল বের করেন, গবেষণা সহায়ক ডকুমেন্টস সরবরাহ করেন, সে সম্পর্কেও জানতে পারবে সবাই। আয়োজনটা করা এজন্য যেন শিক্ষার্থীরা জানতে পারে দেশে গবেষণায় ক্যারিয়ারের সুযোগ কতখানি সমৃদ্ধ। বিজ্ঞান ক্লাবগুলোকে অন্যের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে দেশের বিজ্ঞানচর্চাকে সামনে নিয়ে গেলে তা হবে আমাদের পরম পাওয়া। দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে নিজেকে গবেষক হিসেবে তৈরি করা ও দেশ গঠনে বিজ্ঞানভিত্তিক কাজে অংশ নেওয়ার প্রেরণা পাওয়া এ আয়োজনের একটি অন্যতম মূল উদ্দেশ্য।’