আবাসিক হলে গণরুম

অবশেষে গণরুমমুক্ত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

একটি সাধারণ আবাসিক কক্ষ। যেখানে সর্বোচ্চ চার থেকে আটজন বাস করা যাবে। কিন্তু সেখানে গাদাগাদি করে থাকছেন ২০-৩০ জন।

একটি সাধারণ আবাসিক কক্ষ। যেখানে সর্বোচ্চ চার থেকে আটজন বাস করা যাবে। কিন্তু সেখানে গাদাগাদি করে থাকছেন ২০-৩০ জন। এক পলকে যে কেউ শরণার্থী শিবির কিংবা বস্তির নিম্ন আয়ের মানুষের আবাসন ভাবত। রাতের বেলা ঘুমন্ত অবস্থায় দেখলে মনে হতো গণকবর। সেখান থেকেই হয়তো কক্ষের নাম হয়েছেগণরুম ঘুমানোর আগে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে আদব-কায়দা শেখানোর নামে মানসিক শারীরিক নির্যাতন। সাধারণত অতিথি কক্ষে চর্চা হয় বলে এর নামগেস্টরুম শব্দ দুটির সঙ্গে মিশে আছে বৈষম্য, অন্যায়, অত্যাচার, কান্না, সাধারণ শিক্ষার্থীদের রক্ত। দেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোয় বছরের পর বছর ধরে চলেছে সংস্কৃতি। পুরো প্রক্রিয়া পরিচালনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোয় সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই হতো।

সরকার গেছে সরকার এসেছে, কিন্তু প্রতিষ্ঠিত সংস্কৃতির বদল হয়নি। যখন যারা ক্ষমতায় যেতেন তারাই ব্যবস্থা কম-বেশি টিকিয়ে রেখেছেন নিজেদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার হাতিয়ার হিসেবে। কেননা দিনের বেলা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে হতো। রাজনৈতিক কর্মসূচি বলতে প্রধানত সরকার দলের এমপি-মন্ত্রী, প্রভাবশালী আমলা ছাত্রনেতাদের প্রটোকল দেয়া এবং কালেভদ্রে বিরোধী ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা বোঝানো হতো। দেশের মেধাবী সন্তানদের মুক্তবুদ্ধির চর্চার সুযোগ না দিয়ে দলদাসে পরিণত করত ব্যবস্থা। কেউ এসব অত্যাচারের প্রতিবাদ করলেই তার কপালে রাষ্ট্রবিরোধী কিংবা সরকারবিরোধিতার তকমা জুটত। আর একবার কলঙ্ক লাগলে ওই শিক্ষার্থীকে আধমরা করলেও আইনে প্রতিকার মিলত না। এমনকি গণরুম-গেস্টরুমের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে প্রাণ ঝরেছে অনেক মেধাবীর।

যুগের পর যুগ ধরে বৈষম্য নির্যাতন সহ্য করেছেন শিক্ষার্থীরা। কেননা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এসব শিক্ষার্থীর দরকার ছিল একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই! তবে আশ্রয়ের বিনিময়ে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অনেকে হল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। যদিও কোনো কোনো সময় গণরুম প্রথার বিরুদ্ধে সরব হতেন ছাত্রনেতারা। যদিও তা ছিল লোকদেখানো। স্বার্থ হাসিল হলে সেই একই নেতা আবার ভিন্নরূপ ধারণ করতেন। সরকারদলীয় শিক্ষক ছাত্রনেতারা আসন সংকটকে গণরুমের জন্য দুষতেন।

এবার প্রকৃতই গণরুমমুক্ত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সাধারণ শিক্ষার্থী কর্তৃক হলগুলোয় ১৭ জুলাই ছাত্রলীগকে বিতাড়ন এবং আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দিক দিয়ে আসে নানা পরিবর্তন। এর ফলে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গ্রহণ করে বিভিন্ন উদ্যোগ। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় আবাসিক হলে নানা ধরনের নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরে গণরুম প্রথা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সেপ্টেম্বর অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরীর ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বপ্রথম হলকে আনুষ্ঠানিকভাবে গণরুম গেস্টরুমমুক্তের ঘোষণা করেন বিজয় একাত্তর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক . আলী রেজা। বিষয়ে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শিক্ষার সুষ্ঠু নিরাপদ পরিবেশ একজন শিক্ষার্থীর অধিকার বলে আমি মনে করি। এতদিন নানা কারণে শিক্ষার্থীরা সে অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। আমরা সম্মিলিতভাবে তাদের সেই অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছি।

আরও