আদালত প্রাঙ্গণে দিশেহারা হয়ে ঘুরছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। নাম মোহাম্মদ মোজ্জামেল হক, পেশায় কলেজ শিক্ষক। কোটা আন্দোলনে জড়িত সন্দেহে তার এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছেলেকে আটক করেছে পুলিশ। তাই ছেলের জামিনের জন্য এসেছিলেন তিনি। কিন্তু আদালত জামিন নামঞ্জুর করায় ভেঙে পড়েন এই বাবা।
গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন সরকারি কলেজের
এই শিক্ষক আকুতির সুরে বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি কিংবা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নয়।
ওকে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দিন। চাই। ওর জীবনটা নষ্ট করবেন না।’
জানা যায়, তার ছেলে জাকি তাহসিন (১৯) রাজধানীর
বিএএফ শাহীন কলেজে থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। দেশের উদ্ভুত পরিস্থিতি
বিবেচনায় চলমান এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করেছে সরকার। তাই সে ঘর বসে পরীক্ষার প্রস্তুতি
নিত, বের হতো না তেমন। বিজ্ঞান বিভাগে পড়ুয়া মেধাবী এ ছাত্রের স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া।
কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষার পরেই যেহেতু ভর্তি পরীক্ষার কোচিং শুরু হবে, তাই উত্তরার একটি
কোচিং সেন্টারে ভর্তি হতে যায় সে। তবে বের হওয়ার পর তাহসিন আর ঘরে ফেরেনি সে। দুপুরে
উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ তাকে আটক করে। রাতে থানায় আটকে রাখার পর সোমবার আদালতে তোলা
হয় তাকে। নির্দোষ ছেলের গ্রেফতারের কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন মা। বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন
তিনি। ছেলের এমন খবর বিশ্বাসই করতে পারছেন না তিনি।
তাহসিনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আল মামুন রাসেল
বণিক বার্তাকে বলনে, ‘বিএএফ শাহিন কলেজের পরিচয়পত্র ও মেডিকেল কোচিং ভর্তির কাগজপত্রও
দেখানোর পরও তাকে ছাড়েনি পুলিশ, গ্রেফতার করে রাতে থানাতেই রাখা হয়। পরে বিস্ফোরণ ও
পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আদালতে তোলা হয়, যা একদমই
অযৌক্তিক এবং বেমানান।’
এই আইনজীবী আরো বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে। কিন্তু চলামন পরীক্ষার্থীরা তো আর আন্দোলনে নামতে পারে না। সুতরাং পরীক্ষার্থীদের আটক করা খুবই দুঃখজনক বিষয়।’
শুনানিতে যাওয়ার সময়ও ছেলের জামিনের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন বাবা মোজাম্মেল হক। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো দোষ করেনি। সুতরাং জামিন পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী। জামিন পাবে না এমনটা আমি আশা করছি না।’ তবে ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘যেহেতু মামলা হয়েছে সেহেতু ছেলের ভবিষ্যৎ ঈ হয়, বলতে পারছি না। শঙ্কা তো একটু আছেই।’
জামিন না পাওয়ায় পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে
জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট আল মামুন রাসেল বলেন, ‘আমরা মাহমান্য আদালতকে পরীক্ষার বিষয়টি
জানিয়েছি। তারপরও জামিন দেয়া হয়নি। আমরা
ভাবছি পিটিশন করব। যেন কারাগারে পরীক্ষা দিতে পারে। একজন ছাত্রের একটি বছর নষ্ট হতে
পারে না। সন্দেহবশত তাকে রাস্তা থেকে ধরে এনেছে। তার সঙ্গে কোনো আলামত পায়নি। তার কাছে
স্মার্ট ফোনও ছিল না যে নাশকতার তথ্য পাবে।’
এমন পরিস্থিতিতে কারাগারে পরীক্ষা দেয়ার
অনুমতি পেলেও ফলাফল খারাপের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।