গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ ঘাট থেকে বোনারপাড়া এবং বালাসীঘাট থেকে ত্রিমোহিনী—দুটি রেলপথই দীর্ঘদিন অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এ দুই রুটে প্রায় ১৭ কিলোমিটার রেলপথ। দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ।
১৯৯৬-৯৭ সালে ৬২৯ কৃষকের কাছ থেকে ভাড়া পরিশোধের শর্তে ১৪৫ দশমিক ৭৩ একর জমি অস্থায়ী হুকুম-দখল করে স্থাপন করা হয় রেলপথটি। প্রথম ১৩ বছরের ভাড়া বাবদ কৃষককে প্রায় ৪ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এরপর ১৩ বছরে প্রায় ৬ কোটি টাকা ভাড়া বকেয়া রেখেছে রেল বিভাগ।
গাইবান্ধার বালাসীঘাটের বাসিন্দা সাহিম রেজা ও ফুলছড়ির কয়েকজন কৃষক বলেন, ‘শর্ত ছিল জমির ফসলের বিপরীতে প্রতি বছর আমাদের টাকা দেবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কয়েক বছর দিয়েছেও। কিন্তু গত ১৩ বছর কোনো টাকা না দিয়ে কথা রাখতে পারেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।’
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ১৯৩৮ সালে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাটসহ কয়েকটি জেলার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ব্রিটিশ আমলে ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ ঘাট থেকে জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাটের মধ্যে ব্রহ্মপুত্রে রেলফেরি সার্ভিস চালু করা হয়। তখন গাইবান্ধার বোনারপাড়া রেলওয়ে জংশন থেকে তিস্তামুখ ঘাট পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করা হয়। ১৯৯০ সালের পর ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্য সংকটের কারণে গাইবান্ধা অংশে ফেরি সার্ভিসটি ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ ঘাট থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে একই উপজেলার বালাসীঘাটে স্থানান্তর করা হয়। সে সময় প্রয়োজনের তাগিদেই স্থানীয় কৃষকের কাছ থেকে ১৪৫ দশমিক ৭৩ একর জমি অস্থায়ীভাবে হুকুম-দখল করে ত্রিমোহিনী থেকে বালাসীঘাট পর্যন্ত সাড়ে আট কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হয়।
সরজমিন দেখা গেছে, রেললাইনের ওপর গড়ে উঠেছে শত শত অস্থায়ী বসতবাড়ি। রেললাইনের নিচের মাটি সরে গিয়ে কোথাও আবার ঝুলে আছে। অনেক জায়গায় নাট-বোল্ট ও স্লিপারের মতো মূল্যবান যন্ত্রাংশের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। গোটা রেলপথজুড়ে চোখে পড়েনি একটি পাথরও। এভাবেই নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ।
বাংলাদেশ রেলওয়ে বগুড়া অঞ্চলের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পাহারা দেয়ার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত লোক নেই। ত্রিমোহিনী থেকে বালাসীঘাট পর্যন্ত রেললাইন তুলে ফেলার চিন্তা-ভাবনা চলছে। কৃষকের পাওনা পরিশোধ করে ওই লাইন তুলে ফেলা হবে।’