চেন্নাই টেস্টে ২৮০ রানের রেকর্ড ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। ৫১৫ রানের বিশাল টার্গেট তাড়া করতে নামা সফরকারীরা গতকাল চতুর্থ দিন দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩৪ রানে অলআউট হয়ে যায়। ব্যাট হাতে সেঞ্চুরির পর বল হাতে ৬ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে প্রায় একাই হারিয়েছেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার রবিচন্দ্র অশ্বিন।
রানের হিসাবে এটাই ভারতের কাছে টাইগারদের সবচেয়ে বড় হার। এর আগের বড় হারটি ছিল ২০৮ রানের। যদিও প্রতিবেশী দেশটির কাছে পাঁচবার ইনিংস ব্যবধানে হারের নজিরও আছে। সব মিলিয়ে ১৪ টেস্টের মুখোমুখিতে এটা বাংলাদেশের ১২তম হার।
ভারত প্রথম ইনিংসে ৩৭৬ রানে অলআউট হওয়ার পর বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যায় ১৪৯ রানে। রোহিত শর্মার দল ৪ উইকেটে ২৮৭ রান তুলে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করলে ৫১৫ রানের বিশাল টার্গেটের সামনে পড়ে বাংলাদেশ। বড় টার্গেট তাড়া করতে নেমে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত (৮২) ছাড়া আর কেউই লড়াই করতে পারেননি।
৪ উইকেটে ১৫৮ রান নিয়ে গতকাল ফের ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ৬২.১ ওভারে অলআউট হয়ে যায়। ২৪.৩ ওভারে বাকি ৬ উইকেট হারায় অতিথিরা। সকালে জশপ্রীত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজ ও রবীন্দ্র জাদেজা চাপে রাখেন শান্ত ও সাকিবকে। প্রথম ঘণ্টায় ভাঙন ধরানো যায়নি। এরপর অফস্পিনে অতিথি দলকে নাকাল বানালেন অশ্বিন। চেন্নাইয়ের ‘ঘরের ছেলে’ দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ডালি মেলে ধরলেন চিপকে। বাংলাদেশ সতর্কভাবে শুরু করলেও পরে উইকেট পতন ঘটতে থাকলে প্রতি-আক্রমণে যায়। এটা ভারতকে সুবিধাই করে দেয়। অশ্বিনের ঘূর্ণির সামনে ৪০ রানের মধ্যে পতন হয় বাংলাদেশের শেষ ৬টি উইকেট। অশ্বিন ৮৮ রানে ৬টি ও জাদেজা ৫৮ রানে ৩টি উইকেট নেন। ব্যাট হাতে ১১৩ রানের দুর্দান্ত নক খেলার পর ও ৬ উইকেট শিকার করে ম্যাচসেরা হয়েছেন অশ্বিন।
প্রথম ইনিংসে দলের বিপর্যয়ের সময় লড়াকু এক সেঞ্চুরি করার পর এবার বল হাতে ৬ উইকেট নিলেন ৩৮ বছর বয়সী অশ্বিন। এ নিয়ে চতুর্থবার তিনি একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ইনিংসে ৫ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব দেখালেন। ইংলিশ গ্রেট ইয়ান বোথামের এ কীর্তি আছে পাঁচবার। এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্যার গ্যারি সোবার্স, পাকিস্তানের মুশতাক মোহাম্মদ, দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিস, বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান ও ভারতের রবীন্দ্র জাদেজা দুবার করে একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট নিয়েছেন।
টেস্টে ৩৭তম বার ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন অশ্বিন। এর মধ্য দিয়ে তিনি ছুঁয়ে ফেললেন অজি গ্রেট শেন ওয়ার্নকে। এ দুজনের চেয়ে বেশিবার ৫ উইকেট নিয়েছেন শুধু লংকান গ্রেট মুত্তিয়া মুরালিধরণ (৬৭ বার)। এছাড়া ক্যারিবীয় গ্রেট কোর্টনি ওয়ালশকে (৫১৯) টপকে টেস্টের উইকেট শিকারিদের তালিকায় আট নম্বরে উঠে গেলেন অশ্বিন (৫২২)।
ম্যাচসেরার পুরস্কার গ্রহণের পর ১১৩ রানের ক্যামিও ইনিংস ও ৬ উইকেট শিকার করা নিয়ে অশ্বিন বলেন, ‘চিপকে প্রতিবার খেলা মানেই আমার জন্য বিশেষ এক অনুভূতি তৈরি হয়। এখানের স্ট্যান্ডে বসে আমি অনেক টেস্ট ও আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখেছি। চিপকের গ্যালারিতে বসা দর্শকের সামনে কিছু করতে পারাটা বিশেষ আনন্দের। আর ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি পাওয়াটা দারুণ ব্যাপার ছিল। এটা ছিল আমার বিশেষ এক ইনিংস। আমি যেহেতু বোলিং নিয়েই বেঁচে থাকি, স্বপ্ন দেখি, কাজেই আমার কাছে বোলিংই আগে। বোলিংটা সহজাতভাবেই আসে। আবার যখন ব্যাটিং করি তখনো মনোযোগটা পুরোপুরি দিতে চেষ্টা করি।’
হার শেষে বাংলাদেশ দলনায়ক শান্ত বলেন, ‘তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদ প্রথম ২-৩ ঘণ্টা যেভাবে বোলিং করেছে তা আমাদের জন্য ইতিবাচক। যদিও এর পরই ভারত খুব ভালো ব্যাট করেছে। আমাদের সিমাররা নতুন বলে দারুণ করেছে, যদিও এটা ধরে রাখতে হবে। আমরা চেষ্টা করেছি যতটা বেশি সময় ব্যাটিং করা যায় এবং আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করেছি। এখন আমাদের চোখ কানপুর টেস্টে। কানপুর খুব গুরুত্বপূর্ণ। বোলাররা ভালো করেছে, এখন ব্যাটারদের এগিয়ে আসতে হবে।’
২৭ সেপ্টেম্বর কানপুরে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু হবে। এরপর তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে মুখোমুখি হবে দুই দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত: ৩৭৬ ও ২৮৭/৪/ডি.। বাংলাদেশ: ১৪৯ ও ২৩৪ (শান্ত ৮২, সাদমান ৩৫, জাকির ৩৩, সাকিব ২৫; অশ্বিন ৬/৮৮, জাদেজা ৩/৫৮)। ফল: ভারত ২৮০ রানে জয়ী। প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ: রবিচন্দ্র অশ্বিন (ভারত)। সিরিজ: ভারত ১-০-তে এগিয়ে।