খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটির কৃষি খাতে বন্যায় ১১১ কোটি টাকার ক্ষতি

দেশে চলমান বন্যার প্রভাব পড়েছে পাহাড়ি অঞ্চলেও। বন্যার কারণে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

দেশে চলমান বন্যার প্রভাব পড়েছে পাহাড়ি অঞ্চলেও। বন্যার কারণে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুই জেলার কয়েকটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে ৫ হাজার ২০৪ হেক্টর কৃষি জমি তলিয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে ২৪ হাজার ৭৩৫ টন ফসল। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি ১১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। বন্যায় এ দুই জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে ২৩ হাজারের বেশি।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবানে বন্যা দেখা না দেয়ায় সেখানে কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে খাগড়াছড়িতে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য বরাদ্দকৃত প্রণোদনা আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলেও মনে করেন কৃষিবিদরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙ্গামাটি (পার্বত্য চট্টগ্রাম) অঞ্চলের তথ্যমতে, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার ৯০ হাজার ৮০১ হেক্টর কৃষিজমির মধ্যে ১৪ হাজার ৮৪৫ হেক্টর বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মধ্যে ৩ হাজার ৮৪৮ হেক্টর সম্পূর্ণ এবং ৫ হাজার ৪৮৩ হেক্টর কৃষিজমির আংশিক। আংশিক ক্ষতি সম্পূর্ণ ক্ষতিতে রূপান্তরের ফলে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২০৪ হেক্টর।

জেলাভিত্তিক ক্ষতির হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রাঙ্গামাটিতে ২ হাজার ১০৩ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ৭ হাজার ৮১৯ টন ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৩৫।

অন্যদিকে খাগড়াছড়ি জেলায় ৩ হাজার ১০১ হেক্টর কৃষিজমি তলিয়ে ১৬ হাজার ৯১৬ টন ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১৩ হাজার ৩৩০। দুই জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে আউশ, আমন, গ্রীষ্মকালীন সবজি, আদা, হলুদ, আখ ও ফলের বাগান। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আমন ও আউশ আবাদের। দুই উপজেলায় ৩ হাজার ৪৩৪ হেক্টর আমন ও ৮৪১ হেক্টর আউশ ধানখেত, ৭৬০ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি, ৫২ হেক্টর আদা ও ৩২ হেক্টর হলুদ বন্যা ও অতিবৃষ্টির পানিতে তলিয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) খাগড়াছড়ি জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক বাসিরুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘জেলায় ১৩ হাজারের অধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বন্যার কারণে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দীঘিনালা এবং এরপর মাটিরাঙ্গা উপজেলায়। এরই মধ্যে দুই টন ধানের বীজ প্রণোদনার আওতায় বরাদ্দ হয়েছে। আমরা চাইছি এটা আরো বাড়াতে। মন্ত্রণালয়ে চাহিদা দেয়া হয়েছে।’

ডিএই রাঙ্গামাটির উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘রাঙ্গামাটি জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বাঘাইছড়িতে। লংগদুতে যে ক্ষতি হয়েছে তা বাঘাইছড়ির অর্ধেক পরিমাণ। অন্যান্য উপজেলাসহ মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪৫ কোটি টাকার মতো। আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন হিসেবে মন্ত্রণালয়ে পাঠালেও ক্ষতির পরিমাণ এর চেয়ে কম-বেশি হতে পারে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙ্গামাটি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক তপন কুমার পাল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার কয়েকটি উপজেলায় কৃষি খাতে ১১১ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কৃষকদের ধানসহ অন্যান্য বীজ দেয়া হবে। এরই মধ্যে খাগড়াছড়ি জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে দুই টন ধানের বীজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আসন্ন রবি মৌসুমে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার কৃষকদের শীতকালীন সবজি ও বোরো ধানের বীজ দেয়া হবে। বর্তমানে রাঙ্গামাটিতে আমনের বীজ রোপণের সুযোগ না থাকায় কেবল খাগড়াছড়িতে দুই টন বীজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’

আরও