যশোরে নির্মাণের ছয় মাসেই ৩ কোটি টাকার সেতুতে ধস

যশোরের মণিরামপুরে হরিহর নদের ওপর ৪২ মিটার সেতু নির্মাণ শুরু হয় ২০২১ সালের এপ্রিলে।

যশোরের মণিরামপুরে হরিহর নদের ওপর ৪২ মিটার সেতু নির্মাণ শুরু হয় ২০২১ সালের এপ্রিলে। ৩ কোটি ১২ লাখ ৯৩ হাজার ২১১ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি চলতি বছরের মার্চে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। তবে আগস্টের শুরুতে সেতুর পাটাতনের পলেস্তারা ধসে পড়তে শুরু করে। ধীরে ধীরে বড় একটি অংশ ধসে রড বেরিয়ে পড়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের ভাই শামীম চাকলাদার সেতু নির্মাণের ঠিকাদার ছিলেন। শ্যামকুড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের সহযোগিতায় দায়সারাভাবে সেতুর কাজ শেষ করেছেন ঠিকাদার। বরাদ্দের সিংহভাগ টাকা লোপাট হওয়ায় উদ্বোধনের পরপরই সেতুতে ধস নেমেছে। দায়সারাভাবে সেতুর কাজ করার সময় স্থানীয়রা বাধা দেয়ার চেষ্টাও করেছিলেন। দুই মাস ধরে সেতু পারাপারে ভোগান্তিতে পড়েছেন পথচারীরা। এ সেতু দিয়ে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে।

তবে শ্যামকুড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বলেন, ‘স্থানীয়দের অভিযোগ সত্যি নয়। ক্ষোভ থেকে এখন তারা অনেক কথা বলছেন।’

ঠিকাদার শামীম চাকলাদার বলেন, ‘আমার লাইসেন্সে অন্য একজন ঠিকাদার কাজ করেছেন। পাটাতন ঢালাইয়ের সময় অন্য জায়গায় সিমেন্ট-বালি মিশিয়ে এনে কাজ করা হয়েছে। এতে উপাদানের স্থায়িত্ব কমে যাওয়ায় এমনটি হতে পারে। যেহেতু আমার লাইসেন্সে কাজ করা হয়েছে, পাটাতন ধসে পড়ার দায় আমার ওপর বর্তায়। পাটাতনের কাজ নতুনভাবে করা হবে।’

এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ৬ অক্টোবর সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়নি। গত বছরের ১২ নভেম্বর সেতু উদ্বোধনের কথা থাকলেও সংসদ নির্বাচনের কারণে তা হয়নি। পরে চলতি বছরের মার্চে জনসাধারণের চলাচলের জন্য সেতু উন্মুক্ত করা হয়।

সেতুর পূর্ব পাশের বাসিন্দা আজিজুর রহমান বলেন, ‘সেতু উন্মুক্ত করে দেয়ার চার-পাঁচ মাসের মাথায় পাটাতনের পলেস্তারা ধসে পড়ে। পরে এলজিইডির এক প্রকৌশলী এসে সেটি মেরামত করান। তখন আমরা বাধা দিয়েছি। বলেছি, সেতু ভেঙে নতুন করে করতে হবে। আমাদের বাধার মুখে তারা সেতুর পাটাতন ভাঙা শুরু করেন। এখন কাজ বন্ধ করে রাখা হয়েছে।’

ফারুক হোসেন নামে আরেকজন বলেন, ‘সেতুর জন্য আনা রড অনেক দিন ফেলে রাখা হয়েছিল। এতে রডে মরিচা পড়েছিল। পরে কিছু রড তুলে নিয়ে যান ঠিকাদার। বাকি রড দিয়ে কোনো রকমে সেতুর কাজ করেছেন। যে মাপের রড ব্যবহার করার কথা, সেটা এখানে করা হয়নি।’

সেতুর কাজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা এলজিইডির তৎকালীন উপসহকারী প্রকৌশলী গাউসুল আজম বলেন, ‘শুনেছি ৫ আগস্ট স্থানীয় লোকজন সেতুর পাটাতন ভেঙে ফেলেছে। ঠিকাদার ও আলমগীর চেয়ারম্যানও একই দাবি করেছেন।’

এ ব্যাপারে এলজিইডির মণিরামপুর উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ দাস বলেন, ‘সেতুটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। প্রথম দিকে স্থানীয়রা বাধা দিয়েছিলেন। এখন সবার সঙ্গে কথা হয়েছে। দ্রুত সেতুর সংস্কারকাজ শুরু করা হবে।’

আরও