বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সকাল ৯টার দিকে হাসপাতালের মেডিসিন ভবনের নিচতলায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ধোঁয়ায় পুরো ভবন আচ্ছাদিত হয়ে পড়ে। এ সময় রোগী ও স্বজনরা আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করেন। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়েছেন কিনা, সেটি নিশ্চিত করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. ইমরুল কায়েসকে সভাপতি করে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভবনে পুনরায় সেবা কার্যক্রম চালু করতে অন্তত তিনদিন সময় প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল। হাসপাতাল ভবন পরিদর্শন শেষে বেলা ১টার দিকে এ তথ্য জানান তিনি।
ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘সবার সহযোগিতায় ভবনে থাকা রোগী, তাদের স্বজন, চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা নিরাপদে উদ্ধার হয়েছেন। পুরো ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর আমাদের কাছে নেই। বর্তমানে ভবন থেকে সরিয়ে নেয়া রোগীদের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার কাজটি পরিচালনা করার ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। সিনিয়র চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার কাজ শুরু হয়ে গেছে। আগুনের সূত্রপাত হয়েছে ভবনের নিচতলা থেকে। সেখানে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন আসবাবসহ স্টোরে থাকা ম্যাট্রেস, মশারি, চাঁদরসহ সব পুড়ে গেছে। ক্ষতির হিসাব নিরূপণ করতে সময় লাগবে। এছাড়া ভবনের বাকি চারটি ফ্লোরে শুধু ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ায় সেখানে তেমন ক্ষতি হয়নি। প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে। আশা করি দ্রুত সময়ে মধ্যে ভবনটিতে রোগীদের স্থানান্তর করা যাবে।’
হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, পাঁচতলা ভবনটিতে মেডিসিন বিভাগের পাঁচটি ওয়ার্ডের ১০টি ইউনিট ও ডেঙ্গু ওয়ার্ড রয়েছে। সর্ব শেষ তথ্যানুযায়ী ৭০ জন ডেঙ্গু রোগীসহ ৫৪৩ জন রোগী ছিলেন ভবনটিতে। এছাড়া রোগীদের স্বজন, নার্স, চিকিৎসক, স্টাফরাও সেখানে ছিলেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৯টার দিকে মেডিসিন ভবনের নিচতলার স্টোর রুম থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখেন হাসপাতালে আসা মানুষ। স্টোরটি পুরুষ মেডিসিন ইউনিটের পাশে। ধোঁয়া দেখে পুরো হাসপাতালে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিটের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
হাসপাতালের স্টাফরা জানান, নতুন ভবনে আধুনিক ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা থাকার কথা থাকলেও পুরনো ভবনের মতো অগ্নিনির্বাপক ছাড়া কিছু নেই। তবে কিছু যন্ত্র দৃশ্যমান থাকলেও সেগুলোর আবার কার্যকারিতা শূন্য। এমনকি সেগুলো চালানোর কোনো প্রশিক্ষণও দেয়া হয় না স্টাফদের।
রেজাউল করিম নামে রোগীর স্বজন এক জানান, অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত যারা দেখেছেন, তারা সবাই ফায়ার সার্ভিস আসার আগে বালি নিয়ে ছোটাছুটি করেছেন। কিন্তু শুরুতেই যদি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করা হতো, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ সীমিত হতো। আবার যে স্টাফরা নিচতলায় ছিলেন, তারা ভয়ে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন, প্রশিক্ষণ থাকলে হয়তো তারাই উদ্যোগী হয়ে শুরুতেই আগুন নিভিয়ে ফেলতে পারতেন।
এ ব্যাপারে বরিশাল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। স্টোর রুমে রাখা তুলায় আগুন লেগে যাওয়ায় ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়েছিল।’
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘তদন্ত কমিটিকে তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এরপর অগ্নিকাণ্ডের সঠিক কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। ওই ভবনের রোগীদের অন্য ভবনে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’