সকালে ১০টা ৩০ মিনিটে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ বিজয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রবেশ করে। ২৩ নারী ফুটবলারকে সংবর্ধনা দেন প্রধান উপদেষ্টা।
এসময় নারী দলের পক্ষ থেকে ফুটবলারদের অটোগ্রাফ সংবলিত অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের একটি জার্সি উপহার দেয়া হয় প্রধান উপদেষ্টাকে। পরে নারী দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ফটোসেশন করেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাদের স্বপ্ন ও প্রতিদিনের সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন ফুটবলাররা। প্রধান উপদেষ্টা বিজয়ী খেলোয়াড়দের দাবিগুলো মনোযোগ সহকারে শুনে সেসবের দ্রুত সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন।
ড. ইউনূস খেলোয়াড়দের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে বলেন, এই সাফল্যের জন্য আমি গোটা জাতির পক্ষ থেকে আপনাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। জাতি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমাদের দেশের মানুষ সাফল্য চায়, আর আপনারা আমাদের সেই সাফল্য এনে দিয়েছেন।
ক্যাপ্টেন সাবিনা খাতুন তাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তারা এই সংবর্ধনায় অংশগ্রহণ করতে পেরে সম্মানিত বোধ করছেন। সাবিনা বলেন, আমরা অনেক বাধা অতিক্রম করে এই পর্যায়ে এসেছি। শুধু নারী ফুটবল দল নয়, বাংলাদেশের নারীদের সামগ্রিকভাবেই অনেক সংগ্রাম মোকাবেলা করতে হয়।
২০০৯ সালে তার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করা সাবিনা আরো বলেন, তাদের আগের প্রজন্মের অবদান ভুলে গেলে চলবে না, যারা ফুটবলকে তাদের আবেগ হিসেবে নেয়ার সাহস দেখিয়েছিলেন।
সাবিনা উল্লেখ করেন যে, তাদের অনেকেই সাধারণ পরিবার থেকে এসেছেন এবং তাদের পরিবারের জন্য সহায়তা প্রয়োজন। তিনই বলেন, আমরা যে বেতন পাই তা দিয়ে আমাদের পরিবারকে খুব একটা সাহায্য করতে পারি না, কারণ এর পরিমাণ খুব বেশি নয়।
গোলমেশিন সাবিনা তার কয়েকজন সতীর্থের সংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। মারিয়া মান্দার কথা বলেন তিনি।
ময়মনসিংহের বিখ্যাত কলসিন্দুর গ্রামের মারিয়া তার বাবাকে হারিয়েছেন ছোটবেলায়। এরপর মায়ের কাছে বড় হয়েছেন। এই গ্রাম থেকেই সাফজয়ী দলের ছয় জন খেলোয়াড় উঠে এসেছেন।
উইঙ্গার কৃষ্ণা রাণী সরকার ঢাকায় তাদের আবাসন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। মিডফিল্ডার মণিকা চাকমা জানান, খাগড়াছড়ি জেলার সবচেয়ে প্রত্যন্ত উপজেলা লক্ষ্মীছড়ি থেকে ফুটবলার হিসেবে বেড়ে উঠতে গিয়ে কী কী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি।
মাঝমাঠের খেলোয়াড় স্বপ্না রাণী তার নিজ জেলা দিনাজপুরের রানীশংকৈল গ্রামের দুর্বল অবকাঠামোর কথা তুলে ধরেন।
উইঙ্গার কৃষ্ণা প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেন যাতে তাদের এশিয়ার বাইরে, সম্ভব হলে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস লিগ বিজয়ী বার্সেলোনার বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচের ব্যবস্থা করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা প্রতিটি খেলোয়াড়কে তাদের ব্যক্তিগত আশা ও আকাঙ্ক্ষা, সংগ্রাম এবং দাবিগুলো আলাদা আলাদা কাগজে লিখে তার অফিসে জমা দিতে বলেন। ড. ইউনূস বলেন, আপনারা যা চান তা লিখতে দ্বিধা করবেন না। আমরা আপনাদের দাবিগুলো পূরণ করার চেষ্টা করব। কিছু এখনই করা সম্ভব হলে আমরা তা করব।
এর আগে, গত বুধবার নেপালকে তাদের মাটিতে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতে বাংলাদেশ। এরপর বৃহস্পতিবার দেশে ফেরে সাফজয়ীরা। ছাদখোলা বাসে তাদের বিমানবন্দর থেকে আনা হয় বাফুফে ভবনে।