সিএসপিদের হাত ধরেই জনপ্রশাসনে রাজনীতি আসে

স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালনকারী যেসব আমলা জনপ্রশাসনের রাজনৈতিকীকরণে বড় ভূমিকা পালন করেন

পাকিস্তান সরকারের মাঠ পর্যায়ের এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে আমলা হিসেবে নিয়োজিতদের বলা হয় সিএসপি (সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান) কর্মকর্তা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানসহ সব প্রদেশেই মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন পরিচালনায় কেন্দ্রীয় সরকারকে এ কর্মকর্তাদের ওপর নির্ভর করতে হতো বেশি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সখ্য থাকলেও তাদের ওপর রাজনীতিবিদদের প্রভাব ছিল সামান্য। বরং প্রশাসন পরিচালনায় রাজনীতিবিদ ও আমলাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব ছিল বহুল আলোচিত বিষয়।

পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন ঘটে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর। সিএসপিদের মধ্যে জোরালো হয়ে ওঠে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের সংস্কৃতি। রাষ্ট্রীয় পদে থেকেই ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয় হয়ে ওঠেন তারা। স্বাধীনতার পর দেশের মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালনকারী প্রথম সাত সিএসপি কর্মকর্তার মধ্যে ছয়জনই অবসর গ্রহণের পর দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছিলেন। অবসরের পরও আমলাতন্ত্রে নিজেদের প্রভাবকে ব্যবহার করে জনপ্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দলীয় উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কাজে লাগানোর অভিযোগ আছে তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই।

বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের ইতিহাসে প্রশাসন সার্ভিসের সবচেয়ে অনিয়মিত দুটি ব্যাচ হিসেবে পরিচিত ১৯৭৩ ও ১৯৮৩ ব্যাচ। এ দুই ব্যাচের কর্মকর্তাদের নিয়োগ হয়েছিল মৌখিক ও টিক চিহ্নের বিতর্কিত পরীক্ষার মাধ্যমে। এর মধ্যে ১৯৭৩ ব্যাচটি কেবল মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছিল। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা তোফায়েল আহমেদের নামানুসারে ওই ব্যাচ পরে ‘‌তোফায়েল ব্যাচ’ হিসেবে পরিচিতি পায়। যদিও কর্মক্ষেত্রে তাদের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ছিল তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব হোসেন তৌফিক ইমামের, যিনি পরিচিতি পেয়েছেন এইচটি ইমাম নামে।

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিপরিষদ সচিব এইচটি ইমামকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলগুলোয় দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে দলীয়করণ ও রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বরাবরই ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। এক্ষেত্রে তার কোনো রাখঢাকও ছিল না। ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘‌তোমরা লিখিত পরীক্ষায় পাস করে এসো, তারপর আমরা দেখব।’

এইচটি ইমামের মতো বাংলাদেশ প্রশাসনের সিএসপি কর্মকর্তাদের অনেকেই কর্মজীবন শেষে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছিলেন। রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা বলছেন, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দেশের আমলাতন্ত্রের ভিত্তি নির্মাণ হয়েছিল সিএসপি কর্মকর্তাদের হাত ধরে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে তাদের অনেকেই বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠীর আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। চাকরি শেষে সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হন তাদের একটি বড় অংশ। এমপি-মন্ত্রী এমনকি দলের সিনিয়র নীতিনির্ধারক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তারা। একই সঙ্গে প্রভাব ধরে রাখেন আমলাতন্ত্রেও। মাঠ পর্যায়ে জনপ্রশাসনে রাজনৈতিকীকরণ শুরুও হয় তাদের হাত দিয়েই। বিশেষ করে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালনকারী আমলাদের এক্ষেত্রে দেখা গেছে অগ্রণী ভূমিকায়।

এইচটি ইমাম সিএসপিতে যোগ দেন ১৯৬২ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক এ শিক্ষার্থী প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫-এর ২৬ আগস্ট পর্যন্ত তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পদে নিযুক্ত ছিলেন। এর পরও সচিব হিসেবে তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ক্যাবিনেট মন্ত্রীর মর্যাদায় জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা নিয়োগ করেন। ২০১৪ সালে তাকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে এইচটি ইমামের উত্তরসূরি ছিলেন এসএম শফিউল আজম। স্বাধীনতার আগে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্য সচিব ছিলেন। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত শিল্প, বাণিজ্য, পাট, বস্ত্র, যোগাযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পরিকল্পনা, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে ১৯৭৯ সালের মার্চে রেলওয়ে ও সড়ক যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। এক মাস ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৪ সালের ১ জুন তিনি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং ১৯৮৫ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এ পদে ছিলেন। এছাড়া তিনি শিল্প, বাণিজ্য, পাট, বস্ত্র, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পর প্রশাসনে ব্যাপক মাত্রায় প্রভাব ধরে রাখতে সক্ষম হন শফিউল আজম। চাকরিতে থাকাকালেও তাকে ধরা হতো সবচেয়ে প্রভাবশালী আমলা হিসেবে। বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের ইতিহাস বিশ্লেষণে দেখা যায়, পাকিস্তানি আমলে সিএসপিতে বাঙালি কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভক্তি ছিল। সে সময় বাঙালি কর্মকর্তারা দুটি উপদলে বিভক্ত ছিল। একটি উপদলের নেতৃত্বে ছিলেন এসএম শফিউল আজম। পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক এ মুখ্য সচিব মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের সহযোগী হিসেবে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন। অপর দলের নেতৃত্বে ছিলেন একেএম আহসান, যিনি শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন। স্বাধীনতার পর শুরুতে শফিউল আজমকে সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে দেয়া হয়নি। পরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দ্বিতীয় কেবিনেট সচিব হিসেবে এইচটি ইমামের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি।

এসএম শফিউল আজম ১৯৫০ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। তিনি ১৯৫৮ সালে চট্টগ্রামে আমদানি-রফতানি নিয়ন্ত্রক, ১৯৬৩ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, ১৯৬৪ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে প্রধান আমদানি-রফতানি নিয়ন্ত্রক, ১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান শিল্প উন্নয়ন সংস্থার (ইপিআইডিসি) চেয়ারম্যান, ১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তান শিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি প্রথম বাঙালি সিএসপি অফিসার হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্য সচিবের দায়িত্ব পান। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৫ সালের ২৮ আগস্ট বাংলাদেশ সরকারের কেবিনেট সচিবের দায়িত্ব নেন। ১৯৭৬ সালের ১৪ জুলাই পর্যন্ত তিনি এ পদে দায়িত্বরত ছিলেন। পরে তিনি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রভাবশালী আমলাদের মাধ্যমে আমলাতন্ত্রকে রাজনীতির কাজে লাগানোর প্রয়াস দীর্ঘদিন থেকেই দেখা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে মন্ত্রিপরিষদ সচিবদের অগ্রণী ভূমিকায় থাকার কারণ হলো ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা থাকে বেশি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদিক হাসান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কেবিনেট সচিবদের বলা হয় সব সচিবের নেতা। যারা কেবিনেট সচিব হিসেবে কাজ করেছেন তাদের গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর ধারণা থাকে। কীভাবে এটা কাজ করে তারা ব্যাপারটা ভালোভাবে জানেন। এ পদের কেউ যখন রাজনীতিতে যুক্ত হন তখন তাদের আগের অভিজ্ঞতাটা বড় কাজে লাগে। রাজনীতিবিদরা বা যেকোনো দল বিষয়টিকে কাজে লাগাতে চান। ব্রিটিশ আমল থেকেই দেখা গেছে, আমলাদের নিয়ন্ত্রণ করা রাজনীতিবিদদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বেশির ভাগ আমলা রাজনীতিবিদদের কথা শুনতে চান না। পাকিস্তান আমলে তো শোনেননি। কিন্তু বাংলাদেশ আমলে শুনতে হয়েছে। তাই মন্ত্রিপরিষদ সচিবরা যখন রাজনীতিতে আসেন তারা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ কারণে আমলাদের মধ্যে এক ধরনের খারাপ ধারণারও সৃষ্টি হয় যে আমিও ওই জায়গায় যাব। ফলে তারা যখন সার্ভ করেন, রাষ্ট্রের পরিবর্তে রাজনৈতিক সরকারকে সার্ভ করেন।’

দেশের তৃতীয় কেবিনেট সচিব ছিলেন আবদুল মোমেন খান। ১৯৫৪ সালে তিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। লাহোরে সিনিয়র সিভিল সার্ভিস একাডেমিতে প্রশিক্ষণ কোর্সে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন তিনি। স্বাধীনতার পর ১৯৭৬ সালের ১৪ জুলাই তিনি কেবিনেট সচিব পদে যোগদান করেন। ১৯৭৭ সালের ১৪ জুলাই পর্যন্ত এ পদে ছিলেন।

আবদুল মোমেন খান ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের উপদেষ্টা কাউন্সিলে আমন্ত্রিত হন এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। তিনি ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-২৭ আসন (নরসিংদী এলাকা) থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আসনটি ১৯৮৪ সালে বিলুপ্ত হয়। আবদুল মোমেন খান লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্যও ছিলেন।

বাংলাদেশের চতুর্থ কেবিনেট সচিব ছিলেন মোহাম্মদ কেরামত আলী। ১৯৪৮ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রথম ব্যাচের সিএসপি অফিসার হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে তিনি ১৯৭৭ সালের ১৫ জুলাই কেবিনেট সচিব পদে যোগ দেন। ১৯৮২ সালের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত এ পদে ছিলেন। তিনি ১৯৯১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি যথাক্রমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, ডাক-তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।

দেশের পঞ্চম মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন এম মহবুবউজ্জামান। তিনি সিএসপি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে তিনি ১৯৮২ সালের ১৪ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে যোগদান করেন। এ পদে তিনি ছিলেন ১৯৮৬ সালের ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত। এম মহবুবউজ্জামান ১৯৮৭ সালের সেপ্টেম্বরে সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। এ পদে ছিলেন ১৯৮৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত।

তার উত্তরসূরি ষষ্ঠ মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মুজিবুল হককে পরে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি।

দেশের সপ্তম মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন আরেক সিএসপি কর্মকর্তা মোহাম্মদ খোরশেদ আনোয়ার, যিনি পরে এম কে আনোয়ার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন তিনি। ৩৪ বছরের পেশাগত জীবনে (১৯৫৬-১৯৯০) তিনি ফরিদপুর ও ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, টেক্সটাইল মিল করপোরেশনের সভাপতি, বাংলাদেশ বিমানের চেয়ারম্যান এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল ছিলেন।

প্রয়াত এম কে আনোয়ার বিএনপিতে যোগ দেন ১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে। ১৯৯৭ সালে তিনি দলটির অন্যতম সহসভাপতি হন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে বিএনপি। ওই মন্ত্রিসভায় তিনি বাণিজ্য, নৌ-পরিবহন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি পুনরায় বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি মোট পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি বিএনপি সরকারের সময়ে দুইবার মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

দলের সঙ্গে যোগসাজশে প্রকাশ্যে আমলাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রথম নজিরটিও তৈরি করেছিলেন এক সিএসপি কর্মকর্তা। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে তোলেন কয়েকজন সরকারি আমলা। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন ১৯৬৫ ব্যাচের কর্মকর্তা মহীউদ্দীন খান আলমগীর। সে সময় তিনি পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এর আগে সচিব হিসেবে ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে। আমলাদের মধ্যে আওয়ামী লীগপন্থী একটি প্লাটফর্ম তৈরি করেছিলেন তিনি। বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রে তখনো সিএসপি ক্লাবই সবচেয়ে প্রভাবশালী গোষ্ঠী। নিজে সিএসপি হওয়ায় মহীউদ্দীন খান আলমগীর এ ক্লাবের অনেকের আনুকূল্য ও সমর্থন পেয়েছেন। তার নেতৃত্বে আমলাদের একাংশ ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে সচিবালয়ের ভেতরে সভা-সমাবেশ ও মিছিল করা শুরু করে। অনেককে বিরোধী রাজনৈতিক দলের ডাকা হরতাল কর্মসূচিতে অংশ নিতেও দেখা যায়।

সচিবালয়কে কেন্দ্র করে গঠন করা হয় কর্মচারী সংহতি পরিষদ। এ সংগঠনও সরকার পতনের জন্য আন্দোলনকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে কর্মসূচি দিতে থাকে। এর পর ১৯৯৬ সালের ২৩ মার্চ সচিবালয়ের পাশে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘জনতার মঞ্চ’ স্থাপন করে আওয়ামী লীগ। মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নেতৃত্বে সচিবালয় থেকে কর্মকর্তারা মিছিল নিয়ে এসে মঞ্চে আরোহণ করেন।

রাষ্ট্রীয় পদে থেকে রাজনৈতিক দলের আনুগত্য প্রদর্শনের পুরস্কার হিসেবে ১৯৯৭ সালে তাকে পরিকল্পনা এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রথম চাঁদপুর থেকে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। ২০১২ সালে তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রে রাজনৈতিক প্রভাবের বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমলাতন্ত্রে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের প্রভাব ধীরে ধীরে বেড়েছে। প্রশাসন পরিচালনায় রাজনীতিবিদদের পরামর্শের বিষয় থাকলে সেটি ঠিক আছে, কিন্তু তারা হস্তক্ষেপ শুরু করলে সেটি ভালো না।’

আরও