ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের সংঘাতের জেরে আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে লেবানন। গত প্রায় এক বছরের যুদ্ধের মধ্যে সম্প্রতি দেশটিতে সবচেয়ে তীব্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। আগস্টের শুরু থেকে দেশটিতে এ অস্থিরতা বাড়তে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের শ্রমবাজারেও। অনেক কর্মী ভিসা থাকার পরও নিরাপত্তা শঙ্কায় দেশটিতে যেতে পারছেন না। আবার অনেকের ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে।
নতুন করে কর্মী ভিসাও নবায়ন করা যাচ্ছে না। দেশটিতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস সেখানে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে চিঠি দেয়ার পর নতুন করে যেতে পারছেন না কর্মীরা। পাচ্ছেন না বিএমইটি ছাড়পত্র।
বিএমইটি ছাড়পত্র পেতে দেরি হওয়ায় ভিসার তিন মাস মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা জানিয়েছেন বগুড়ার শামীম হোসেন। তিনি বণিক বার্তাকে জানান, জুলাইয়ে দেশের পরিস্থিতি খারাপ ছিল। সবকিছু অচল ছিল। আগস্টে নতুন সরকার আসার পর লেবাননের বাংলাদেশ দূতাবাস দেশটিতে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। এ অবস্থায় ছাড়পত্র না পাওয়ায় ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
কর্মী ভিসায় লেবাননে যাওয়ার সব প্রস্তুতি সেরেছেন খুলনার মাহমুদুল হাসান। শুধু বিএমইটি ছাড়পত্র পেলেই যেতে পারতেন দেশটিতে। ভিসার মেয়াদ আছে ৩৯ দিন। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আগস্ট মাসে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু শুনছি ছাড়পত্র দেয়া নাকি বন্ধ আছে। বিএমইটি থেকে ছাড়পত্র না দিলে টিকিটও কাটতে পারব না। এখন পর্যন্ত ছাড়পত্র পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। এদিকে ভিসার মেয়াদও আছে মাত্র এক মাস। দেশটির পরিস্থিতি কবে ঠিক হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। এক অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে।’
গত ৮ আগস্ট লেবাননের বৈরুতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি চিঠি পাঠায়। চিঠিতে লেবাননের সামগ্রিক অবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় অনিশ্চিত সময়ে দেশটিতে যেতে আগ্রহী কর্মীদের লেবাননে ভ্রমণ না করার বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
প্রথম সচিব (শ্রম) ও দূতালয় প্রধান মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের সই করা চিঠিতে বলা হয়, ‘লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে চলমান অবনতিমূলক সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিতে লেবাননে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশন এবং অনারারি কনস্যুলেটগুলো তাদের কার্যক্রম স্থগিত অথবা সীমিত করেছে। পাশাপাশি লেবাননে বসবাসরত বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের অতিসত্বর লেবানন ত্যাগের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশ লেবাননগামী ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে। এছাড়া বিভিন্ন দূতাবাস থেকে সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকদের লেবানন ভ্রমণ পরিহার করার জন্য নিয়মিতভাবে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’
চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘লেবাননের সামগ্রিক অবনতিশীল নিরাপন্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে লেবাননে আসতে আগ্রহী কর্মীদের লেবাননে গমন না করার বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করা সমীচীন হবে বলে দূতাবাস মনে করে।’