সাগরে ইলিশের আকাল। দুএকটি ট্রলার অল্প কিছু মাছ নিয়ে তীরে ফিরলেও বেশির ভাগ ট্রলার আসছে শূন্য হাতে। সরবরাহ কমে যাওয়ায় পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, আলীপুর ও মহীপুর মৎস্য আড়তে আগের মতো কর্মব্যস্ততা নেই।
কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও অনাবৃষ্টির কারণে ইলিশ মাছ কম পানিতে আসছে না। এছাড়া কুয়াকাটাসংলগ্ন সমুদ্রে দীর্ঘ ডুবোচর থাকায় রামনাবাদ, আগুনমুখা, আন্ধারমানিক ও বলেশ্বর নদ-নদীর মোহনায় ইলিশের আনাগোনা কমে গেছে।
জেলেদের দাবি, কুয়াকাটাসহ উপকূলীয় এ অঞ্চলে ৩০-৩৫ হাজার জেলে রয়েছেন। প্রত্যেকেই ঋণগ্রস্ত। মাছ না পেয়ে চিন্তায় পড়েছেন তারা। হিমশিম খেতে হচ্ছে সংসার চালাতে।
মৎস্য পল্লীগুলো ঘুরে দেখা যায়, আড়তগুলোয় আগের মতো কর্মব্যস্ততা নেই। জেলে ও শ্রমিকরা বেকার দিন পার করছেন। যুবক শ্রেণীর শ্রমিকরা আড়তে ভিড় করে টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখছেন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা চায়ের দোকানে বসে গল্প ও আড্ডায় সময় পার করছেন। কিছু জেলে পুরনো জাল সংস্কার করছেন। এক কথায় কর্মব্যস্ত মাছ বাজারের মানুষগুলো কর্মহীন অবস্থায় সময় পার করছেন।
জেলে মো. মাসুম বলেন, ‘দুই-আড়াই মাস ধরে মাছ ধরা পড়ছে না। ট্রলার ঘাটে এলে কিছু সময় কাজ থাকে। দিনের বেশির ভাগ সময় অলস থাকতে হয়। আয় কম, সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে।’
মনি ফিশের মালিক জলিল হাওলাদার বলেন, ‘সমুদ্রে মাছ কম। বাজার-সওদা করে ট্রলার সাগরে পাঠাচ্ছি। দিন শেষে শূন্য হাতে ফিরে আসছে জেলেরা।’
শিববাড়িয়া নদীর পাশের কয়েকটি মৎস্য আড়তে পুরনো জাল বুনছিলেন জেলেরা। কথা হয় তাদের সঙ্গে। তারা জানান, গরমের কারণে সাগরে মাছ নেই। বৃষ্টি না হলে সাগরে গিয়ে লাভ নেই। গত দেড় মাসে পাঁচবার সাগরে গিয়ে শূন্য হাতে ফিরে আসতে হয়েছে। প্রতিবারই আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তাদের। এখন সাগরে না গিয়ে পুরনো জাল বুনছেন তারা। মাছের দেখা মিললে সমুদ্রে যাবেন।
সাগরে ইলিশ কমে যাওয়ার কারণে হিসেবে কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, ‘ইলিশ গভীর সমুদ্রের মাছ। জলবায়ু পরিবর্তন, প্রচণ্ড গরম ও অনাবৃষ্টির কারণে মাছ কম পানিতে আসছে না। তাই কুয়াকাটার উপকূলে কম ইলিশ ধরা পড়ছে। আশা করছি, আবহাওয়া পরিবর্তন হলে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়বে। এছাড়া কুয়াকাটাসংলগ্ন সমুদ্রে দীর্ঘ ডুবোচর থাকায় রামনাবাদ, আগুনমুখা, আন্ধারমানিক ও বলেশ্বর নদ-নদীর মোহনায় ইলিশের আনাগোনা কমে গেছে।’