মানিকছড়ির অপ্রশস্ত পাহাড়ি সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে

পাহাড়ি জনপদ রাঙ্গামাটি শহরের প্রবেশদ্বার মানিকছড়ি। পাহাড়ি সড়ক পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে হয় যাত্রীবাহী পরিবহন চালকদের।

পাহাড়ি জনপদ রাঙ্গামাটি শহরের প্রবেশদ্বার মানিকছড়ি। পাহাড়ি সড়ক পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে হয় যাত্রীবাহী পরিবহন চালকদের। ওই সড়কে যানবাহনের চলাচলও বেড়েছে। পাহাড় কেটে তৈরি করা সড়কটি অপ্রশস্ত হওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকিও রয়েছে। ওঠা-নামার ক্ষেত্রে অনেক সময় পরিবহনগুলো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। এ কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মানিকছড়ির পাহাড়ি সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে হতাহতের সংখ্যাও বাড়ছে।

যদিও রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঝুঁকির বিষয়টি তারা অবগত। এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণে চিন্তা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, জেলা শহরের প্রবেশ ও বের হওয়ার একমাত্র প্রধান সড়ক এটি। এ কারণে পাহাড়ি সড়ক বেয়েই শহরে প্রবেশ ও বের হতে হয় সব ধরনের যানবাহনকে। মানিকছড়ির ট্রাফিক মোড় থেকে প্রায় ভেদভেদী রূপনগর পর্যন্ত দীর্ঘ খাড়া পাহাড়ি সড়ক বেয়ে উঠতে হয়। বিভিন্ন সময় মালবাহী যানবাহন সড়কের মাঝখানে আটকে যাচ্ছে। পরবর্তী সময়ে মালপত্র সরিয়ে যানবাহনগুলোকে উদ্ধার করতে হয়। আবার নামার পথে গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় ঘটছে দুর্ঘটনা।

সড়কে চলাচলকারী যানবাহন চালকরা জানান, রাঙ্গামাটি জেলা শহর, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে যাতায়াতের জন্য প্রধান সড়ক এটি। মানিকছড়ি পাহাড় বেয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয় তাদের। অপ্রশস্ত ও বিকল্প সড়ক না থাকায় বাধ্য হয়ে পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে হয়।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৩১ মে মানিকছড়ি পাহাড়ে যাত্রীবাহী বাস উল্টে সাজেদা আক্তার নামে এক নারী নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন আরো ১৯ জন। ২০১৮ সালের ২৩ আগস্ট যাত্রীবাহী বাস পাহাড়ি সড়ক দিয়ে নামার সময় চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এ সময় বাসের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মো. সাহেদ নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন আরো দুই মোটরসাইকেল আরোহী। ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ে ধাক্কা লেগে উল্টে যায়। এ সময় বাসে থাকা ১৬ যাত্রী আহত হন। ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাঁচজন আহত হন।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দেশের প্রাচীন ১৯টি জেলার মধ্যে একটি রাঙ্গামাটি। সড়কসহ অন্যান্য অবকাঠামো যখন নির্মাণ করা হয়েছে, বেশির ভাগই করা হয়েছে পাহাড় কেটে। পরিকল্পনার ক্ষেত্রে ত্রুটি থাকায় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না থাকায় রাঙ্গামাটি শহরের প্রবেশমুখে বড় ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। এখন যদি সড়কটি প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়, তাহলে পাহাড় কাটার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রেখে সড়কটি নিরাপদ করা দরকার।’

এ ব্যাপারে সওজ রাঙ্গামাটি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মানিকছড়ির সড়ক নিয়ে স্বল্পমেয়াদি কোনো উদ্যোগ আপাতত নেই। সড়কটি মোটামুটি প্রশস্ত থাকলেও দীর্ঘ পাহাড় বেয়ে ওঠা-নামার ক্ষেত্রে অনেক সময় পরিবহনগুলো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বাকি অংশে চার লেন তৈরির যে সম্ভাবতা যাচাই চলছে; সেখানে বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে পরামর্শ দেবেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে পারবে।’

আরও