হাসান মাহমুদের আগুনে বোলিংয়ে গতকাল চেন্নাই টেস্টের প্রথম দিনের প্রথম দুটি সেশনে কর্তৃত্ব করে বাংলাদেশ। ডানহাতি এ পেসার লণ্ডভণ্ড করেন ভারতের টপ ও মিডল অর্ডার। যদিও তৃতীয় সেশনে ‘ব্যাটন’ চলে যায় ভারতের হাতে। ১৪৪ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারানোর পর দুই স্পিনিং অলরাউন্ডার রবিচন্দ্র অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা সপ্তম উইকেটে রেকর্ড ১৯৫ রানে অবিচ্ছিন্ন থেকে ভারতকে নিরাপদে পৌঁছে দেন। দিন শেষে ভারতের সংগ্রহ ৮০ ওভারে ৩৩৯/৬।
৩৮ বছর বয়সী অশ্বিন ১০০ টেস্টে ৫১৬ উইকেটের মালিক। অসংখ্য মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে এ স্পেশালিস্ট স্পিনার। দলের প্রয়োজনে চওড়া হয় তার ব্যাটও। গতকাল আরেকবার দলের ত্রাতা হয়ে তুলে নেন ষষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরি। ১১২ বলে ১০২ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলে তিনি অপরাজিত। তার সঙ্গে অনবদ্য ব্যাটিং করা জাদেজা ১১৭ বলে ৮৬ রান করে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। তিনি পঞ্চম সেঞ্চুরির সামনে। দুজন ৩৭.৪ ওভার ব্যাটিং করে ১৯৫ রান তুলেছেন ৫.১৭ গড়ে! দুজনের দাপটে শুধু তৃতীয় সেশন থেকেই ৩২ ওভারে ভারত পেয়েছে ১৬৩ রান!
কোনো টেস্টে প্রথম দিন এটাই সপ্তম উইকেটে সবচেয়ে বেশি রান তোলার রেকর্ড। এর আগে ২০০৯ সালে ভারতের বিপক্ষে হ্যামিল্টন টেস্টে সপ্তম উইকেটে প্রথম দিন রেকর্ড ১৮৬ রান তুলেছিলেন কিউই জেসি রাইডার ও ড্যানিয়েল ভেট্টোরি। সব মিলিয়ে সপ্তম উইকেটের রেকর্ডটা অবশ্য অনেক দূরে, ৩৪৭ রানের। ১৯৫৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এ রান করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডেনিস অ্যাটকিনসন ও ক্লেয়ারমন্ত পেদেইজা। সপ্তম উইকেটে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন অশ্বিন। ২০১৩ সালে কলকাতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে রোহিতকে নিয়ে ২৮০ রান তুলেছিলেন তিনি।
আট নম্বরে নেমে এটা অশ্বিনের চতুর্থ সেঞ্চুরি। আট কিংবা তার নিচে ব্যাটিং করে এর চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি আছে শুধু ড্যানিয়েল ভেট্টোরির (৫টি)।
বাংলাদেশের খেলা সাম্প্রতিক টেস্ট ম্যাচগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সপ্তম উইকেটের কী জাদু! সম্প্রতি রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৩৩২ রানে ৬ উইকেট পতনের পর মুশফিক ও মিরাজের ব্যাটে ৫০০ পেরোয় বাংলাদেশ (৫৬৫)। এ টেস্টও জিতেও যায় টাইগাররা। রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্টেও তাই। প্রথম ইনিংসে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর লিটনের সেঞ্চুরিতে ২৬২ রান তোলে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানও ৮১ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর রিজওয়ানের লড়াইয়ে দল ১৫০ পেরোয়। যদিও জিততে পারেনি পাকিস্তান; জিতেছে বাংলাদেশই।
এর আগে সকালে ধ্রুপদ এক স্পেলে ভারতকে হতবিহ্বল করেন হাসান মাহমুদ। অথচ তার টেস্ট অধ্যায় খুব বেশি দিনের নয়। গত মার্চে হঠাৎ করেই শ্রীলংকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ডাক পড়েছিল তার। এর আগে কখনই টেস্ট না খেলা এ বোলারকে নিয়ে বড় আশা ছিল না হয়তো কারোরই। তবু নির্বাচকদের নিরাশ করেননি ডানহাতি এ পেসার। দুই ইনিংস মিলে নিলেন ৬ উইকেট।
এরপর গত মাসে পাকিস্তান সফরে আলোয় আসেন তিনি। রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টে নিলেন ৩ উইকেট। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে কোনো উইকেট না পেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে অবিশ্বাস্য বোলিং করে ৪৩ রানে তুলে নিলেন ৫ উইকেট। পাকিস্তান ১৭২ রানে গুটিয়ে গেলে বাংলাদেশ পায় ১৮৫ রানের টার্গেট। সেবার ৬ উইকেটের জয়ে ইতিহাস গড়ে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। রাওয়ালপিন্ডির ফর্মটা হাসান টেনে নিলেন চেন্নাইতে। গতকাল প্রথম সকালে চেন্নাইয়ের উইকেটে আগুন ঝরালেন, লণ্ডভণ্ড করলেন ভারতের বিশ্বখ্যাত টপ অর্ডার।
সকালে দুদিকেই সুইং করিয়েছেন; দারুণ লাইন, লেংথে বল করছিলেন। ব্যাটসম্যানদের সামনে টেনে এনে ড্রাইভ খেলতে প্রলুব্ধ করেছেন। অনেকটা বাজে বলে শুভমান গিলের উইকেট পেলেও রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির উইকেট নেন দারুণ দুই ডেলিভারিতে। রোহিতকে আউট করা ডেলিভারিটি ক্ল্যাসিক টেস্ট ম্যাচ উইকেট। আর অফ স্টাম্পের বাইরে ড্রাইভ করার চেষ্টায় আউট হন কোহলি। লাঞ্চ থেকে ফেরার পর পরই পন্তকে সাজঘরের পথ দেখান হাসান। তার গড়ে দেয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে পরে জশস্বী জসওয়ালকে ফেরান নাহিদ রানা, আর লোকেশ রাহুলকে সাজঘরের পথ দেখান মেহেদী হাসান মিরাজ।
এর আগে মাত্র ৩ টেস্টের ক্যারিয়ারে ১৪ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব দেখান হাসান। ৭ ইনিংসে তার উইকেট সংখ্যা এখন ১৮। হয়তো আজ নামের পাশে আরো কিছু উইকেট যোগ করতে সমর্থ হবেন তিনি।
সেঞ্চুরিয়ান অশ্বিন মনে করেন, আজ দ্বিতীয় দিনের শুরুতেও পেসারদের সাহায্য করবে উইকেট। ম্যাচের শেষের দিকে অবশ্য স্পিনাররাই রাজত্ব করবে। দিনের খেলা শেষে তিনি সঞ্চালককে বলেছেন, ‘বেশি স্পিন করলে বাউন্সও হবে। স্পিনাররা শেষের দিকে সুবিধা পাবে। নতুন বলে আগামীকাল সকালেও পেসাররা সুবিধা পাবে। আমাদের আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।’ ষষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরি নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে খেলাটা সব সময়ই বিশেষ। সর্বশেষ যখন এখানে খেলেছিলাম, সেঞ্চুরি পেয়েছি।’
অশ্বিন ১০ চার ও ২ ছক্কায় ১১২ বলে ১০২ রান করে অপরাজিত আছেন। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং নিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের উইকেটে ঋষভের মতো একটু আক্রমণাত্মক খেলাটাই ভালো।’
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত প্রথম ইনিংস: ৮০ ওভারে ৩৩৯/৬ (অশ্বিন ১০২*, জাদেজা ৮৬*, জসওয়াল ৫৬, ঋষভ ৩৯; হাসান ৪/৫৮, মিরাজ ১/৭৭, নাহিদ ১/৮০)—প্রথম দিন শেষে।