গাইবান্ধা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঢোলকলমি

গাইবান্ধা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ঢোলকলমি। ঢোলকলমি বেড়ালতা বা বেড়াগাছ নামেও পরিচিত।

গাইবান্ধা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ঢোলকলমি। ঢোলকলমি  বেড়ালতা বা বেড়াগাছ নামেও পরিচিত। একসময় গ্রামীণ সড়কের পাশে, বাড়ির পাশে, মাঠে-ঘাটে, জলাশয় ও খাল-বিলের ধারে সর্বত্রই চোখে পড়ত এ ঢোলকলমি ।

পল্লী এলাকায় অবহেলায় বেড়ে ওঠা আগাছা হিসেবে পরিচিত বেড়ালতা বা ঢোলকলমি। ঢোলকলমি গুল্ম প্রজাতির উদ্ভিদ। এর কাণ্ড দিয়ে কাগজ তৈরি করা যায়। ঢোলকলমি গাছের ফুল সব বয়সী মানুষের নজর কাড়বে। পাঁচটি হালকা বেগুনি পাপড়ির ফুল দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। সারা বছরই ঢোলকলমির ফুল ফোটে। তবে বর্ষার শেষে শরৎ থেকে শীতে ঢোলকলমি ফুল বেশি দেখা যায়। ফুলের মধুর জন্য কালো ভোমরা আসে।

ঢোলকলমি গাছ অল্পদিনের মধ্যেই ঘন ঝাড়ে পরিণত হয়। এ গাছ জমির ক্ষয়রোধ করে ও সুন্দর ফুল দেয়। গ্রামাঞ্চলে এ গাছ জমির বেড়া হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অনেকে আবার জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করে থাকেন। নদীর তীরে কিংবা বিশাল ফসলের মাঠে ঢোলকলমি গাছে বসে পাখি পোকামাকড় শিকার করে খায়। গ্রামের শিশুরা ঢোলকলমির ফুল দিয়ে খেলা করে।

একসময় গাইবান্ধা জেলার গ্রামাঞ্চলে অধিকাংশ পরিবার ফসলের খেত, পুকুর ও বসতবাড়ির চারপাশে বেড়া দেয়ার প্রধান উপকরণ হিসেবে এ ঢোলকলমি ব্যবহার করেছে। কেউ কেউ কলমি গাছের সঙ্গে নেট ও বাঁশের চটা ব্যবহার করে বেড়াকে শক্তিশালী করছে। অনেকেই অতিরিক্ত অংশ রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেছে। ঢোলকলমির বীজ ও পাতায় থাকে বিষাক্ত উপাদান। তেতো স্বাদের সাদা কশ থাকায় এর পাতা গরু-ছাগল খায় না। তাই বেড়া হিসেবে এটা ব্যবহারের চাহিদা বেশি। ঢোলকলমি খরা ও বন্যাসহনীয় বলে প্রতিকূল পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে। 

নব্বইয়ের দশকে পোকার ভয়ে এ গাছ ধ্বংস করার একটা হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। দেশজুড়ে ভয়ংকর আতঙ্ক ছড়িয়েছিল ঢোলকলমি গাছে থাকা এক ধরনের পোকা। গুজব রটে যায়, এ পোকা এতটাই ভয়ংকর, কামড় দিলে মৃত্যু অবধারিত, এমনকি স্পর্শ লাগলেও জীবন বিপন্ন হতে পারে।

তখন এসব খবর রেডিও, টিভি, পত্রিকায় মহামারীর মৃত্যুর খবরের মতো করে কজন মরল কজন হাসপাতালে গেল সেভাবে প্রচারিত হয়েছিল। সারা দেশে সাধারণ মানুষ গণহারে, এমনকি স্থানীয় প্রশাসনও ঢোলকলমি গাছ কেটে সাবাড় করেছিল। ঢোলকলমি গাছের পোকাটির কারণে শুধু গ্রামে নয়, আতঙ্ক ছড়িয়েছিল ঢাকা শহরেও। আতঙ্ক যখন চরম পর্যায়ে তখন টিভিতে একজন বিশেষজ্ঞ পোকাটি ধরে এনে নিজের হাতের ওপর ছেড়ে দিয়ে হাঁটিয়ে, তারপর হাত দিয়ে পিষে মেরে প্রমাণ করেছিলেন যে এটি আসলে খুবই নিরীহ একটি কীট, মোটেও প্রাণসংহারী নয়। এর পর থেকেই আতঙ্ক কেটে যায় সারা দেশে।

আরও