বান্দরবানের লামায় কাঠ পাচার ও ইটভাটার জ্বালানি সরবরাহ করতে অনুমোদন ছাড়াই পাহাড় কেটে এবং ঝিরিতে বাঁধ দিয়ে রাস্তা তৈরি করছেন কাঠ ব্যবসায়ীরা। এ কাজে এক জনপ্রতিনিধিরও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। বিধি অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ ব্যক্তি ও কোম্পানি পর্যায়ে মালিকানাধীন যেকোনো গাছ কাটতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু এক্ষেত্রে তা মানা হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জড়িতদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছে বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তর।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, লামা বন বিভাগের ডলুছড়ি রেঞ্জের আওতাধীন সরই ইউনিয়নের রেংয়ানপাড়ায় মেরিডিয়ান নামের একটি কোম্পানির বনজ বাগান রয়েছে। জেলা প্রশাসনের লিজ দেয়া ভূমিতে বাগানটি সৃজন করা হয়। এ বাগানের গাছ কেটে ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে পাচার করার জন্য পাহাড় কেটে রাস্তা করছে ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিছের লোকজন। এদিকে বান্দরবান বন বিভাগের টংকাবতি রেঞ্জের আওতাধীন চিনিপাড়ায় উত্তর ও দক্ষিণ খেদার ছড়াঘেঁষে পাহাড়ের পাদদেশ কেটে ও ছড়ার একাধিক স্থানে বাঁধ দিয়ে রাস্তা করা হচ্ছে। কাঠ পাচারের জন্য রাস্তাটি করছেন লোহাগাড়া উপজেলার কলাউজান ইউনিয়নের মো. আব্দুছ শুক্কুর।
গত ২৫ নভেম্বর সরজমিন দেখা গেছে, টংকাবতি ইউনিয়ের চিনিপাড়া সড়কের ঢালু অংশ শেষে রঙিন খালে একটি ব্রিজ রয়েছে। ব্রিজটির বাম দিকে উত্তর ও দক্ষিণ খেদার ছড়া নামের দুটি ছড়া মিলিত হয়েছে রঙিন খালে। ব্রিজ থেকে উত্তর খেদার ছড়ার উজান দিকে পাহাড়ের পাদদেশ কেটে করা কাঁচা রাস্তা দিয়ে দুই কিলোমিটার ভেতরে গিয়ে একটি এক্সক্যাভেটর দেখা যায়। তার আগে সড়কটির পাশে বুনো কয়েকটি বড় গাছের মজুদ রাখা রয়েছে। ছড়া ঘেঁষা পাহাড়ের পাদদেশ কেটে গাড়ি চলাচলের উপযোগী রাস্তা করতে ছড়াটির সাতটি স্থানে বাঁধ দেয়া হয়েছে। ছড়ার পাড় ও পাহাড়ের পাদদেশ কাটা মাটি ছড়ায় ফেলা হচ্ছে। ফলে ছড়াটি সংকুচিত হয়ে গেছে।
অন্যদিকে লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের রেংয়ানপাড়ায় দেখা গেছে, একটি বাগানের নানা প্রজাতির ছোট-বড় গাছ কাটা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানায়, এটি মেরিডিয়ান কোম্পানির বাগান। ক্যাজুপাড়া বাজার-লুলাইন সড়কের বাম পাশঘেঁষে বাগানটির অবস্থান। এ বাগানের গাছ কেটে টুকরো করা কাঠও মজুদ রয়েছে। একই সঙ্গে একটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে কাঁচা রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। গাছ ও পাহাড় কাটার কাজ তদারককারী রফিক নামের এক ব্যক্তি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মেরিডিয়ান কোম্পানির বাগানের গাছ কিনেছেন সরই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিছ। আমি দৈনিক মজুরিতে কাজ করি।’
সেলফোন নম্বর না থাকায় মেরিডিয়ান কোম্পানির এমডি কামালের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সংগ্রহে থাকা একটি সেলফোন নম্বরে কল করা হলে অন্য প্রান্ত থেকে রিসিভ করে ‘তিনি কামাল নন’, মিসেস কামাল বলে পরিচয় দেন এক নারী। কামালের সেল নম্বরে কল দেয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুটিবিলা লাকড়িপাড়ায় মদিনা ব্রিকস নামে একটি ইটভাটা রয়েছে। এ ভাটার জন্য মেরিডিয়ান কোম্পানির বাগানের গাছ কেটে জ্বালানি কাঠ আনা হচ্ছে। বাগান থেকে ভাটায় কাঠ পরিবহনের পথে ক্যাজুপাড়া বাজারে রয়েছে ডলুছড়ি বনবিটের একটি পাহারা চৌকি।
সরই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিছের দাবি মেরিডিয়ানের বাগান এলাকায় জনস্বার্থে নিজের টাকায় রাস্তা করে করছেন তিনি। সেলফোনে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘রাস্তাটির জন্য ৪০ দিনের কর্মসূচির আওতায় বেঙপাড়ার জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।’
৪০ দিনের কর্মসূচিতে সরই ইউনিয়নে বেঙপাড়া বা নোয়াপাড়ার নামে কোনো প্রকল্প নেই বলে নিশ্চিত করেছেন লামা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম। সরই ইউনিয়নের ওই স্থানে গাছ কাটার অনুমোদন নেই বলে জানিয়েছেন লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আরিফুল হক বেলাল।