৩৫ বছর পর জাবিতে শিবিরের আত্মপ্রকাশ, বামপন্থী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ক্যাম্পাসে সকল দলের অংশগ্রহণে সুস্থ ধারার রাজনৈতিক চর্চার পরিবেশ নিশ্চিতের কথা জানিয়ে প্রায় ৩৫ বছর পর প্রকাশ্যে এসেছেন ইসলামী ছাত্র শিবির জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার শীর্ষ তিন নেতা। এদিকে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী শিক্ষার্থীরা।

গতকাল মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রাতে গণমাধ্যমে সংগঠনটির প্রচার সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন সাকির পাঠানো এক বিবৃতিতে বিষয়টি জানা যায়। এতে সংগঠনটির সভাপতি হারুনুর রশিদ রাফি ও সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মুহিব কর্তৃক ক্যাম্পাসে জাকসু সচল করাসহ সুস্থ ধারার রাজনীতি নিশ্চিতের কথা বলা হয়।

বিবৃতিতে শিবির দাবি করে, দীর্ঘদিন ধরে কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ছাত্রশিবিরকে আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে নিষিদ্ধের একটি বয়ান তৈরি করে এসেছে। আদতে এই বয়ানের কোনো সত্যতা নেই। ১৯৮৯ সালের ১৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১৪২তম সভায় শিবির নিষিদ্ধের প্রস্তাবনা আসলেও এরকম কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। বরং সভার সিদ্ধান্ত ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাবহির্ভূত বিধায় এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব নয়। কোনো মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে না। ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধকরণ ও ট্যাগিংয়ের রাজনীতি মূলত ফ্যাসিবাদ কায়েমের সহায়ক শক্তি হিসেবেই কাজ করেছে।

এদিকে শিবিরকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত দাবি করে তাদের আত্মপ্রকাশের প্রতিবাদে মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল বের করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা।

মিছিল পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইজা মেহজাবিন বলেন, ১৯৭১ সালের গণহত্যার সহযোগী সংগঠন জামায়াত-শিবির। শেখ হাসিনার সরকারের হাতে যেমন ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতাকে হত্যার খুনের দাগ রয়েছে, তেমনি ৭১-এর গণহত্যার রক্তের দাগও জামায়াত-শিবিরের হাতে লেগে রয়েছে। এই গণহত্যার দায় তারা অস্বীকার করতে পারে না। আশির দশকেও ছাত্রশিবির একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিকৃষ্টতম কার্যক্রম চালিয়েছে। এখন আবারও তারা পুনর্বাসিত হওয়ার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। আমরা বারবার সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে প্রতিহত করে এসেছি। যার ফলশ্রুতিতে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ছাত্রশিবিরকেও এদেশের ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না।

ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের একাংশের সভাপতি অমর্ত্য রায় বলেন, ছাত্রশিবিরকে কোনোদিন দেখিনি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আন্দোলন করতে, কোনো দিন ওরা শ্রমিক হত্যা নিয়ে আন্দোলন করেনি। তারা সব সময় শাহবাগ আর শাপলা চত্বর ভাগাভাগি করতে ব্যস্ত। এ রকম বিভাজনের রাজনীতি করে আওয়ামী লীগ। যে রাজনৈতিক দলের হাতে রক্তের দাগ রয়েছে, সেই সংগঠনকে রাজনীতি করতে হলে বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসতে হবে। সেটা সামাজিক বিচারও হতে পারে, আইনি বিচার হতে পারে। এ জন্য ১৪ হাজার শিক্ষার্থীর কাছে ক্ষমা চেয়ে তাদের ক্যাম্পাসে আসতে হবে।

তবে মিছিলের প্রতিক্রিয়ায় শিবিরের ফেসবুক পেইজে উল্লেখ করা হয়, ইসলামি ছাত্র শিবিরের গণতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি করার প্রতিবাদে করা মিছিলকে স্বাগত জানাই।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৯ সালে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান কবির ও ১৯৯৪ সালে ছাত্রদল নেতা শওকত কবির দীপু নিহতের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্র সংগঠনগুলোর ঐকমত্যে ক্যাম্পাসে ছাত্র শিবিরের রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে এ সংক্রান্ত দাবি উপস্থাপন করা হলেও নিষিদ্ধের বিষয়টি সিন্ডিকেটের আওতাবহির্ভূত বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

আরও