ইউজিসির চিঠির জবাবে বার কাউন্সিল

আইন বিভাগে শিক্ষার্থী আসন ৫০-এর বেশি নয়

ডুয়াল সেমিস্টারভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে সমন্বয় করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এলএলবি (ব্যাচেলর অব ল) প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি আসন সংখ্যা পুনরায় নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিলকে চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। রূপান্তরিত পদ্ধতিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আইন বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি আসন ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ করতে বার কাউন্সিলকে

ডুয়াল সেমিস্টারভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে সমন্বয় করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এলএলবি (ব্যাচেলর অব ল) প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি আসন সংখ্যা পুনরায় নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিলকে চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। রূপান্তরিত পদ্ধতিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আইন বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি আসন ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ করতে বার কাউন্সিলকে অনুরোধ জানায় ইউজিসি। যদিও বার কাউন্সিল বলছে, ইউজিসির প্রস্তাব আমলে নেয়ার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে আদালতের একটি রায়কে বাধা হিসেবে দেখছেন তারা।

ওই চিঠির জবাবে সম্প্রতি ইউজিসিকে আরেকটি চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। এ চিঠিতে বার কাউন্সিল বলছে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একটি রায়ে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অভিন্ন যে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে সে অনুযায়ী, এলএলবি প্রোগ্রামে সেমিস্টারপ্রতি ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির কোনো অনুমতি নেই। আদালত কর্তৃক কোনোরূপ আদেশ বা রায় ব্যতিরেকে এলএলবি প্রোগ্রামে প্রতি সেমিস্টারে ৫০ জনের অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি করার আইনগত সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুখ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক ও অবকাঠামো সক্ষমতা সাপেক্ষে ডুয়াল সেমিস্টার কার্যক্রমের সঙ্গে শিক্ষার্থী আসন সমন্বয় করে দেয়া হচ্ছে। তবে আইন বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালন ও আসন সংখ্যা নির্ধারণের ক্ষেত্রে বার কাউন্সিলের অনুমোদনের প্রয়োজন। তাই বার কাউন্সিলের সচিবের কাছে এ বিষয়ক একটি চিঠি পাঠানো হয়। যদিও আদালতের আগের একটি রায় থাকায় তা সম্ভব নয় বলে বার কাউন্সিল থেকে জানানো হয়েছে।’

এদিকে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ভর্তির আসন সংখ্যা নিয়ে আদালতের রায় রিভিউ করতে আদালতে যাচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। কয়েকটি বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিগগিরই পুনর্বিবেচনার জন্য সমন্বিতভাবে আইনগত পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানা গেছে। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আগে এক শিক্ষাবর্ষে ১৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করার সুযোগ ছিল। আইন মেনে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতে ডুয়াল সেমিস্টারে যাওয়ার পর আসন সংখ্যা কমে ১০০ হয়ে গেল। যদিও শিক্ষকদের বেতন-ভাতা অন্যান্য খরচ আগের মতোই আছে। বরং কিছু ক্ষেত্রে তা বেড়েছে। তাই আমরা মনে করি, আসন সংখ্যা সমন্বয়করণের বিষয়টি খুবই যৌক্তিক। এ বিষয়ে কিছু আইনগত সুরাহা প্রয়োজন, আমরা তার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ 

এর আগে ইউজিসি থেকে বার কাউন্সিলে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্দেশনা অনুযায়ী, এর আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ব্যাচেলর অব ল প্রোগ্রামে বছরে তিন সেমিস্টারে সর্বোচ্চ ৫০ জন করে মোট ১৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারত। সে অনুযায়ী আগামী ১ জানুয়ারি থেকে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি প্রোগ্রামে বাই-সেমিস্টার পদ্ধতিতে প্রতি সেমিস্টারে সর্বোচ্চ ৫০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করলে বছরে মোট ১০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। সে বিবেচনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এলএলবি প্রোগ্রামে বছরে তিন সেমিস্টারের পরিবর্তে দুই সেমিস্টারে মোট আসন সংখ্যা অক্ষুণ্ন রেখে দুটি সেকশনে বিভাজনপূর্বক প্রতি সেমিস্টারে মোট ৭৫ জন করে বছরে মোট ১৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘জাতীয় সংসদে অনুমোদনকৃত আইনি ক্ষমতাবলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রম, পাঠ্যক্রম ও শিক্ষার্থী আসনের বিষয়গুলো কমিশন থেকে নির্ধারণ ও অনুমোদন করা হয়। 

তবে দারুল ইহসানের ঘটনার পর আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম বিষয়ে বার কাউন্সিলের অনুমোদনের বিষয়টি যুক্ত হয়। তাই বাই-সেমিস্টারকে কেন্দ্র করে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আসন সংখ্যা সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নিয়ে বার কাউন্সিলকে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে তারা আদালতের অন্য একটি রায়ের রেফারেন্সে পরিবর্তনের সুযোগ না থাকার কথা জানিয়েছে। তবে যেহেতু সংসদে পাসকৃত আইনে কমিশনকে আসন নির্ধারণের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, আমরা মনে করছি, আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে।’

আরও