সমাজচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় যারা বিরোধী দলে ছিল তারা ভেবেছিল তাদেরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। ফলে আমরা যারা ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছি, তারা আমাদের ভালো চোখে দেখেনি। আমাদের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের লেলিয়ে দিয়েছে, অপপ্রচার চালিয়েছে। আমাদের দেশের তরুণরা যে লড়াইটি করছে, এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির অংশ। বিএনপির যে রাজনৈতিক জ্ঞান, তার চেয়ে তরুণদের রাজনৈতিক জ্ঞান বেশি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (২ নভেম্বর) রাজধানীর প্রেসক্লাবে ‘প্যালেস্টাইন-ইসরায়েল সমস্যা ও সমাধান’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ফরহাদ মজহার বলেন, আমরা বলেছিলাম আমাদের যে লড়াই, আর ফিলিস্তিনের যে লড়াই, দুটি এক। কিন্তু তারা (বিএনপি) বলেছিল- না, এ কথা বলা যাবে না। কেন বলা যাবে না? কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। আমি সেই রাজনৈতিক দলগুলোকে বলব, আপনারা তখন ভুল করেছেন। আপনারা এখন যে ভুলটি করছেন, আপনারা চুপ্পুকে (রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন) বহাল রাখার কথা বলছেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে সে বলেছে, আমার কাছে পদত্যাগপত্র আছে। আর এখন সে অস্বীকার করছে। তাকে রাখার জন্য আপনারা অস্থির হয়ে গিয়েছেন। তরুণরা দেখিয়ে দিয়েছে, আপনাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তাদের চেয়ে অনেক কম।
তিনি বলেন, জনগণ ফ্যাসিস্ট সরকারকে উৎখাত করেছে। ফ্যাসিজমের বিলুপ্তি চেয়েছে। আজকে যেই তরুণদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, তারা অবশ্যই ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে ইসরায়েলকে একটি উচিত শিক্ষা দেবে। আমরা নিজেদের জনগণকে রক্ষায় যেভাবে জীবন দিচ্ছি, সেভাবে ফিলিস্তিনের জনগণকে রক্ষায় জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। এ দেশের সাধারণ মানুষ সব সময় মজলুমদের পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্র সারা দুনিয়ায় সাম্রাজ্যবাদ কায়েম করেছে। এর বিলোপ করতে হবে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের বর্বরতা মানবসভ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। পরাশক্তিগুলো কথায় কথায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বুলি আওড়ালেও ইসরায়েলি বর্বরতার ক্ষেত্রে নীরব। ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের সব ধরনের অমানবিক আচরণ ও বর্বরতায় সহযোগিতা করে পশ্চিমারা। পাশ্চাত্যের এ দ্বিমুখী নীতি থেকে বেরিয়ে এসে ফিলিস্তিন সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে।
ফরহাদ মজহার বলেন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সমস্যা ধর্মীয় নয়। এটিকে ধর্মীয় লেবাস দিয়ে সংঘাতটি গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। যার মূল উদ্দেশ্য মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ কায়েম এবং সেখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করা। আমরা ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়াসহ বিভিন্ন দেশে একই পরিস্থিতি দেখেছি। তারা মিথ্যা ও ঠুনকো অভিযোগে এসব দেশের সভ্যতা ধ্বংস করেছে। সেখানে লুটপাট চালিয়েছে। তারা এখন ফিলিস্তিনের সব ইতিহাস ধ্বংস করে দিচ্ছে। যাতে ইসলাম বলে কিছু আছে; আগামীতে যাতে এর কোনো চিহ্ন না থাকে, সে চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ইসলামের নাম মুছে দেয়ার যে নীতি, এটি জায়নিস্ট নীতি। ইসরায়েল এটি করছে ফিলিস্তিনে। একই নীতি আমরা ভারতে দেখতে পাচ্ছি। ভারতে মুসলিম নামে যেসব সড়ক রয়েছে, যেসব জায়গা রয়েছে সেগুলোর নাম বদলে দিচ্ছে। ভারতে ঐতিহ্যবাহী মসজিদগুলো গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। অজুহাত দেয়া হচ্ছে মসজিদগুলোর নিচে শিবলিঙ্গ পাওয়া যাচ্ছে। এভাবে তারা ইসলামকে মুছে দিতে চাচ্ছে। এই অসভ্য সভ্যতা আমাদের পাশে গড়ে উঠছে। ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনে ঘটা গণহত্যা আগামীতে ভারতেও ঘটতে পারে। যেটি আন্তর্জাতিক মহল আশঙ্কা করছে। ভূরাজনৈতিকভাবে আমাদের শত্রুকে আমরা চিনি। আমরা আজকে ইরানকে ধন্যবাদ জানাই। তারা ইসরায়েলের হাত থেকে ফিলিস্তিনের জনগণকে রক্ষায় নিজেদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করছে।
তিনি বলেন, ভূরাজনীতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশের পাসপোর্টে বিশ্বের সব দেশে ভ্রমণের অনুমতি থাকলেও ইসরায়েল ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ ছিল। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ইসরায়েল ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা লেখাটি তুলে দেয়। সেটি পুনরায় বহাল করতে হবে। ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষে আমরা মুসলিমরা এক নই। নোয়াম চমস্কি যিনি দুনিয়া বিখ্যাত বুদ্ধিজীবী এবং ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত; তিনিও এ ব্যাপারে বহু বছর ধরে সোচ্চার। এভাবে পৃথিবীর সব শান্তিকামী, মানবতাবাদীরা ফিলিস্তিনিদের পাশে রয়েছে। ফলে এটি ইয়াহুদি বনাম মুসলমানের লড়াই নয়। খুনি যুক্তরাষ্ট্র যে একটির পর একটি রাষ্ট্র ধ্বংস করছে এটি তার বিরুদ্ধে লড়াই।