তিন পার্বত্য জেলায় পরিবেশ অক্ষুণ্ন রেখে বালি উত্তোলনযোগ্য উন্মুক্ত স্থান, ছড়া ও নদী নেই। এজন্য বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় বালুমহালও নেই। প্রশাসনও পরিবেশ বিধ্বংসী বালি উত্তোলন রোধে তৎপর। তার পরও বান্দরবানের থানচি উপজেলার বলিপাড়া ইউনিয়নে সাঙ্গু নদের বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। দেড় মাস ধরে ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলনের ফলে ওই অংশে নদের তলদেশের গভীরতা অস্বাভাবিক বেড়েছে। এতে মৎস্য ও জলজ প্রাণী, ফসলি জমি এবং উদ্ভিদ বিনষ্টসহ বর্ষাকালে পাহাড় ধসের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ইউনিয়নের ছয় নম্বর ওয়ার্ডের কোওয়াইংজে পাড়ার কাছে নদের তলদেশ থেকে বালি তুলছেন মো. আলতাজ মিয়াসহ কয়েকজন শ্রমিক। বালি তোলার কারণে কমবেশি ৪০ শতাংশ সমপরিমাণ নদের পাড়ে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এ গর্তে মাছসহ জলজ প্রাণী আটকে পড়েছে। নদের পাড়েই মজুদ করা হচ্ছে উত্তোলন করা বালি। কমবেশি দেড় একর ফসলি জমিতে মজুদ করা হয়েছে তিনটি বালির স্তূপ। এরই মধ্যে দুই শতাধিক ট্রাকবোঝাই বালি পাচার হয়েছে। শুধু রাতের আঁধারে ট্রাকে করে বালিগুলো পাচার করা হয়। বালি উত্তোলন করা অংশে আনুমানিক পাঁচ একর জায়গায় অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে নদের তলদেশের গভীরতা। এর ফলে নদের ওই অংশের জীববৈচিত্র্য ও নদের পাড়ের উদ্ভিদ বিনষ্টসহ বর্ষায় পাহাড় ধসের ঝুঁকি রয়েছে।
সরজমিনে দেখা গেছে, নদের পাড়ে সৃষ্ট গর্তে জমানো পানি মেশিন দিয়ে নদে ফেলছেন শ্রমিকরা। সেখানে কথা হয় শ্রমিক আলতাজ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বালি উত্তোলনের মূল ঠিকাদার লামা উপজেলার ফাইস্যাখালী ইউনিয়নের বগাইছড়ি পাড়ার কাজী নুরুল আনোয়ার। উপ-ঠিকাদার হিসেবে এ কাজের তদারক করছেন বলিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াঅং মারমা, ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার উচনু মারমা ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মংথোয়াইসা মারমা। এর আগে ৮-১০ ট্রাক বালি নেয়া হয়েছে। মজুদ করা তিনটি বালির স্তূপে ৮০০ ট্রাক সমপরিমাণ বালি রয়েছে।’
তবে মেম্বার মংথোয়াইসা মারমা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘৪০-৪৫ দিন ধরে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। নিজেদের পাড়ায় হওয়ায় ঠিকাদার আনোয়ার, মেম্বার উচনুসহ গণ্যমান্য ব্যক্তির অনুরোধে আমি শুধু দেখাশোনা করছি। এরই মধ্যে ১৫ ট্রাক বালি নেয়া হয়েছে।’
মেম্বার উচনু মারমা বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী প্রতি ফুট বালি ১৭ টাকায় বিক্রি করছি। এছাড়া কোওয়াইজে পাড়ার ব্রিকসলিং সড়কের কাজে দুই ট্রাক বালি বিক্রি করেছি।’ তবে এ পর্যন্ত কত ট্রাক বালি বিক্রি হয়েছে তা জানাতে চাননি তিনি।
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঠিকাদার কাজী নুরুল আনোয়ার। তিনি বলেন, ‘থানচি থেকে আমি বালি নেই না। কক্সবাজারের চকরিয়া ও বান্দরানের সুয়ালক থেকে বালি সংগ্রহ করি। থানচিতে শুধু কোওয়াইজে পাড়ায় নয়, নাইদারি পাড়াসহ একাধিক স্থান থেকে বালি উত্তোলন করা হয়। এর মধ্যে থানচি কলেজের পেছনের ঘাট থেকে চারটি মেশিন দিয়ে বালি উত্তোলন চলছে। এর মধ্যে দুটি ড্রেজার মন্টু ঘোষ ও চকরিয়ার মিজানের। অন্য দুটি চহাই মারমা ও অনিল ত্রিপুরার। আমি বালি উত্তোলন করি না। যারা তোলে তাদের কাছ থেকে বালি কিনে নিই।’
এ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বলিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াঅং মারমা। তার দাবি, তিনি অবৈধভোবে পাথর ও বালি উত্তোলনের বিরুদ্ধে সবসময় প্রতিবাদ করে আসছেন।’ তবে চলমান বালি উত্তোলন বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের সদুত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান তিনি।
অবৈধভাবে বালি উত্তোলন বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমি বান্দরবানে একটা মিটিংয়ে এসেছি। থানচি গিয়েই আইনগত ব্যবস্থা নেব। জড়িতদের ছাড় দেয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’