রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পদত্যাগের পর রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রাবিপ্রবি) কার্যত প্রশাসন-শূন্য রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে দরপত্র ছাড়াই ক্রয় করা হয়েছে চেয়ার-টেবিলসহ অন্য আসবাব। নিয়ম অনুযায়ী, টেন্ডার প্রক্রিয়া বা দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আসবাব সরবরাহের কথা থাকলেও তার কিছুই অনুসরণ করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটি শহরের মেসার্স বি. আলম ট্রেডার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব আসবাবপত্র সরবরাহ করে। সরবারহকৃত আসবাবপত্রের মধ্যে রয়েছে কর্মকর্তাদের জন্য এক্সিকিউটিভ টেবিল ও চেয়ার, ফাইল কেবিনেট। এর মধ্যে দুটি মডেলের পাঁচটি টেবিল (কাস্টমাইজড), আটটি চেয়ার ও ১১টি ফাইল কেবিনেট রয়েছে। মেসার্স বি. আলম ট্রেডার্সের দেয়া ডেলিভারি চালানের কপি প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।
বি. আলম ট্রেডার্সের সরবরাহকৃত রিগ্যাল ফার্নিচার ব্র্যান্ডের ২৪টি আসবাবপত্রের বাজার মূল্য যাচাই করে দেখা গেছে, ভ্যাট-ট্যাক্স ছাড়াই ৬ লাখ ২৮০ টাকার কেনাকাটা করা হয়েছে। নির্দিষ্ট মডেলের বাজার মূল্য অনুযায়ী রিগ্যাল ফার্নিচার ব্র্যান্ডের চারটি টেবিলের প্রতিটির দাম ৪৮ হাজার ৭৫০ টাকা, অন্য আরেকটি মডেলের দাম ৫০ হাজার ৬০০, চেয়ার ১৪ হাজার ২৫০ এবং প্রতিটি ফাইল কেবিনেটের দাম ২১ হাজার ৮৮০ টাকা। তবে দরপত্র আহ্বান ছাড়া আসবাবপত্র ক্রয় করায় মোট কত টাকা মূল্য ধরা হতে পারে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ প্রসঙ্গে তথ্য দেয়নি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বি. আলম ট্রেডার্স ও রাবিপ্রবির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগও।
রাবিপ্রবি সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রয়-সংক্রান্ত প্রক্রিয়া দু’ভাবে হয়ে থাকে। এর মধ্যে প্রথমত বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন বিভাগের কাছ থেকে চাহিদাপ্রাপ্তি সাপেক্ষে ক্রয় প্রস্তাব পাঠায় ক্রয় বিভাগ (প্রকিউরমেন্ট ডিপার্টমেন্ট)। আবার জরুরি প্রয়োজনেও ক্রয় করা হয়ে থাকে। তবে দুই প্রক্রিয়াতেই চাহিদার ভিত্তিতে ক্রয় বিভাগ পরিকল্পনা বিভাগে প্রস্তাব পাঠায়। পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার অনুমোদনের পর দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র আহ্বানে সর্বনিম্ন দরে দরপত্র জমা দেয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই কার্যাদেশ পেয়ে থাকে। যদিও সেপ্টেম্বরের আসবাবপত্র ক্রয় প্রক্রিয়ায় এসব নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৮ আগস্ট রাবিপ্রবির উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার ও উপ-উপাচার্য (প্রো-ভিসি) অধ্যাপক ড. কাঞ্চন চাকমা পদত্যাগ করেন। এর আগে রেজিস্ট্রার, প্রক্টরসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা পদত্যাগের পর রাবিপ্রবি কার্যত প্রশাসন-শূন্য রয়েছে। বন্ধ রয়েছে একাডেমিক কার্যক্রমও। এর মধ্যেই ক্রয় করা হয়েছে চেয়ার-টেবিলসহ অন্য আসবাবপত্র।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাঙ্গামাটি রাবিপ্রবির ক্রয় কর্মকর্তা (প্রকিউরমেন্ট অফিসার) বিভাস চাকমা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘৫ সেপ্টেম্বর কিছু আসবাবপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু এগুলো কারা এনেছে বা কীভাবে এনেছে—এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। প্রসিউরমেন্ট ডিপার্টমেন্টকে কোনো কিছুই জানানো হয়নি।’
আসবাবপত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স বি. আলম ট্রেডার্সের ম্যানেজার মো. শরীফ বলেন, ‘রাবিপ্রবিতে কত টাকার আসবাব গেছে এটা আমি সঠিক জানি না। আমি তো দোকানে বসি, অফিস ডিলগুলো আমাদের সিনিয়র ম্যানেজার জয়নাল ভাই দেখেন।’ যদিও পরে বিষয়টি জানতে বি. আলম ট্রেডার্সের সিনিয়র ম্যানেজার জয়নাল আবেদীনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে সদ্য পদত্যাগ করা রাবিপ্রবির প্রো-ভিসি ড. কাঞ্চন চাকমা বলেন, ‘দরপত্র আহ্বান হয়েছে কিনা এ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। এটা তৎকালীন ভিসি ও পরিকল্পনা বিভাগ জানতে পারবে। আমাকে টেন্ডার কমিটিতেও রাখা হয়নি।’
রাবিপ্রবির দরপত্র কমিটির সদস্য ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর রাঙ্গামাটি অফিসের সহকারী প্রকৌশলী আলো জ্যোতি চাকমা বলেন, ‘জুলাই ও আগস্টে আসবাবপত্র ক্রয়-সংক্রান্ত কোনো দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। দরপত্র আহ্বান করা হলে তো কমিটির সদস্য হিসেবে আমাকে জানানোর কথা। আমাকে কিছুই জানানো হয়নি।’
আসবাবপত্র কেনাকাটায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল গফুর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘তৎকালীন ভিসি দায়িত্বে থাকাকালীন বি. আলম ট্রেডার্সের লোকজনকে ডেকে কাস্টমাইজড আসবাবপত্রের অর্ডার দিয়েছেন। এ আসবাবপত্র ক্রয়ের জন্য বরাদ্দও আনা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে তিনি পদত্যাগ করেছেন; এ কারণে তিনি দায়িত্বে না থাকলেও অর্ডার করা আসবাবপত্র সরবরাহ করা হয়েছে।’
তবে এসব বিষয়ে জানতে রাবিপ্রবির সদ্য পদত্যাগ করা ভিসি অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতারকে একাধিকবার ফোন দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।