রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সরকারি কর্মচারীদের বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে সতর্ক থাকতে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। নয় দফা নির্দেশনা দিয়ে মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সব সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে।
গত ২৮ অক্টোবর পাঠানো চিঠিতে সচিবসহ দপ্তর-সংস্থার প্রধান ও মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার আগে কয়েকটি বিষয়ে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। কোন প্রতিষ্ঠান থেকে আমন্ত্রণ এসেছে, অনুষ্ঠানের পেছনে কারা আছে, এসব বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা নিতে প্রয়োজনে গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে নির্দেশনায়। বিতর্কিত ব্যক্তির সঙ্গে কোনো অনুষ্ঠানে অতিথি হওয়া যাবে না। অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র, ক্রেস্ট, সনদ, সাজসজ্জা, ব্যানার, পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন, ট্রফি, স্যুভেনির, লোগো ইত্যাদিতে বিতর্কিত কারো ছবি আছে কিনা তাও খেয়াল রাখতে হবে।
বর্তমানে শীর্ষ পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা কম হওয়ায় সরকারি কর্মচারীদের সচিবালয় ও মাঠ প্রশাসনের নেতৃত্ব দিতে হচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েকটি এলাকায় বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এসব সমস্যা এড়িয়ে চলতেই মূলত নয় দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
যশোরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আজহারুল ইসলামের উপস্থিতিতে গত ২৫ অক্টোবর একটি অনুষ্ঠানে নৃত্যের সঙ্গে বাজানো গানে পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম ছিল। ওইদিন বিষয়টিতে বিব্রত হয়ে ডিসির নির্দেশে অনুষ্ঠানসংশ্লিষ্ট পাঁচজনকে আটক করা হয়। পরে মুচলেকা দিয়ে তারা থানা থেকে ছাড়া পান।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নয় দফা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর যেসব দিবস বাতিল করা হয়েছে, সেগুলো যাতে পালন না হয় তা নিশ্চিত করা। বাতিলকৃত দিবস বা ব্যক্তি সম্পর্কে থাকা বই, স্যুভেনির, ক্রেস্ট, স্মারক অফিসে থাকলে সেগুলো সরানোর জন্যও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লিখিত বক্তব্য প্রস্তুতের নির্দেশ দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলেছে, সব ধরনের অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যের বাইরে কোনো স্লোগান বা জয়ধ্বনি থেকে বিরত থাকতে হবে।
এর আগে ২৪ অক্টোবর বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসানের উপস্থিতে সিভিল সার্জন জালাল উদ্দীন আহমেদ তার বক্তব্য শেষে ‘জয় বাংলা’ উচ্চারণ করেন। তার ওই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর প্রতিক্রিয়া দেখান স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেয়ায় বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করার পর গত সোমবার জালাল উদ্দীন আহমেদকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
সচিবদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সরকারি কর্মচারীদের অধিকতর সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। সম্প্রতি মাঠ পর্যায়ের কিছু অফিসের কর্মকাণ্ডের সংবাদ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়ায় বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যা অনভিপ্রেত। নিজ নিজ আওতাধীন দপ্তর-সংস্থার কর্মচারীরা যাতে গুজবে বিভ্রান্ত না হন তা নিশ্চিত করতেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
সরকারের সব সচিব বরাবর পাঠানো নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, সরকারের এসব নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট সচিব তার আওতাধীন দপ্তর, সংস্থা বা অফিসের সবাইকে অবহিত করতে উপানুষ্ঠানিক চিঠি দেবেন, যাতে সব পর্যায়ের সরকারি কর্মচারী বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন।