বান্দরবান পৌর
এলাকায় খোলাবাজারে বিক্রি (ওএমএস) কর্মসূচির আওতায় উৎপাদন না
করা মিলকে আটা মিলার হিসেবে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে
উপকারভোগীদের মাঝে ওএমএস আটা বিক্রয় দেখিয়ে অধিকাংশই ভুয়া মাস্টাররোল তৈরি করেছে।এছাড়া
ডিলার, মিলার ও সংশ্লিষ্টরা মিলে নানা অনিয়ম করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ স্বীকার
করেছেন মিলাররা।
শর্ত ভঙ্গ করার পরও নিয়োগ বাতিল না
করার অভিযোগও মিলেছে। তবে জেলা খাদ্যনিন্ত্রয়ণ কর্মকর্তার দাবি,
সব শর্ত পূরণসাপেক্ষে মিলার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আটা বিক্রয়েও কোনো ধরনের অনিয়ম নেই বলে
দাবি তার।
পৌর এলাকায় নিয়োগ পাওয়া মিলাররা হলেন বান্দরবান পূরবী ফ্লাওয়ার মিল ও বান্দরবান রাইস অ্যান্ড ফ্লাওয়ার মিল। মিলার ও ডিলার কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে নিয়োগ বাতিলের
বিধান রয়েছে বলে জানায় সূত্র।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ডিলারদের বিক্রি
করা আটার মান ভালো না হওয়ায় উপকারভোগীরা নিয়মিত আটা ক্রয় করেন না। এ সুযোগে যোগসাজশ
করে প্রতি ডিলারকে সপ্তাহে চার-ছয় বস্তা
আটা সরবরাহ করছেন মিলাররা। বরাদ্দের বাকি অংশগুলো
কেজিপ্রতি ৪-৫ টাকা করে বেশি দরে ডিলারদের দিয়ে কারচুপি করেন মিলাররা।
এজন্য মাস্টাররোলে উপকারভোগীদের স্বাক্ষর ও টিপসই জালিয়াতি করছেন ডিলাররা। অন্যদিকে ওএমএস বরাদ্দের গম ময়দা করে জেলার বাইরে বিক্রি
করছেন মিলাররা।
গত ২ এপ্রিল সরজমিনে পরিদর্শনকালে ১নং ওয়ার্ডের বালাঘাটা বাজারের ডিলার এনামুল হক
বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দৈনিক ১৩৪ আটার উপকারভোগী রয়েছেন। মিলার আবুল কাশেমের কর্মীরা এসে দৈনিক
৬৬৬ কেজি আটা দিয়ে যায়। জেলা অফিসের গাড়ি চালক এসে মাস্টাররোল
নিয়ে যায় জানিয়ে তিনি বলেন, অফিস থেকে কল করে বলেছে, আপনি (এ
প্রতিবেদক) আসবেন, এজন্য সব ঠিক রাখতে। এ সময় দেখা গেছে, আটা
বিক্রির মাস্টাররোলে উপকারভোগীদের দেয়া
স্বাক্ষরগুলোর অধিকাংশই এক হাতের করা স্বাক্ষর। অর্থাৎ স্বাক্ষরগুলোর শুরু ও শেষসহ
আ-কার, ই-কার, উ-কার প্রভৃতি একই ধরনের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিলার এনামুল হক কোনো
সদুত্তর দেননি।’
৯নং ওয়ার্ডের ডিলার সিরাজুল হকের দাবি,
মিলাররা তিনদিনে দুই টন করে আটা সরবরাহ করেন। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আগে দৈনিক এক টন
গমের সমপরিমাণ আটা সরবরাহ করা হতো। গত জানুয়ারি মাসের ১৬ তারিখ থেকে তিনদিনে দুই টন
করে আটা সরবরাহ করছেন মিলার।’
মিলার চাল ও আটা বুঝিয়ে দেয়ার কোনো রিসিভ কপি ডিলারদের বুঝিয়ে
দেয়া হয় না বলে স্বীকার করেছেন ২নং ওয়ার্ডের ডিলার মো. মঈন খান। তবে সরবরাহ করা চাল
ও আটার পরিমাণ ডিলারদের রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করা থাকে বলে জানান
তিনি।
কোনো অনিয়ম নাই বলে দাবি ৪নং ওয়ার্ডের
ডিলার ও নয়টি ওয়ার্ডের ডিলার মিলে করা সমিতি ও বান্দরবান বাজার মুদি দোকান ব্যবসায়ী
সমিতির সভাপতি বিমল কান্তি দাশের। তবে ডিলার
হিসেবে নিয়োগ পাওয়া তার ওয়ার্ডের মাস্টাররোল দেখাতে চাননি
তিনি।
সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নে নিয়োগ পাওয়া
দুটি মিলের একটি বান্দরবান পূরবী ফ্লাওয়ার মিল। মিলটির সহব্যবস্থাপক মো. হামিদুর রহমান
বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মিলে শুধু গম গুঁড়া করে ময়দা উৎপাদন হয়। ২০০১ সাল থেকে এই মিলে কাজ করছি, কখনো
আটা উৎপাদন করেছে বলে মনে পড়ে না বলে জানান তিনি।’
মালিকের নির্দেশে মাসে ৫০-৬০ বস্তা
আটা উৎপাদন করা হয় বলে জানান বান্দরবান রাইস অ্যান্ড ফ্লাওয়ার মিলের ফোরম্যান মো.
আব্দুল খালেক।
জেলার চাহিদা অনুযায়ী কলকারখানা গড়ে
ওঠে নাই বলে জানান বান্দরবান পূরবী ফ্লাওয়ার মিলের মালিক মো. আবুল কাশেম। বান্দরবান
চাল বাজারে তার দোকানে তিনি বণিক বার্তাকে জানান, দৈনিক ৪০ টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন অটো মিলে শুধু ময়দা উৎপাদন করা হয়।
উৎপাদিত ময়দাগুলো চন্দ্রঘোনা, চন্দনাইশ, বাঁশখালী, লোহাগাড়া, চকরিয়াসহ আরো কয়েকটি
জায়গায় বিক্রি করা হয় বলে জানান তিনি।
বান্দরবান সদর উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক
মো. ফরিদুল আলমের দাবি, নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া থাকলে রিসিভের প্রয়োজন নেই। ডিলারদের জমা দেয়া মাস্টাররোল দেখতে চাইলে তিনি বণিক বার্তাকে
বলেন, ‘দেখাব আর কী। আপনারা নিজেদের মানুষ।’ পরক্ষণে আবার বলেন, ‘যে
দায়িত্বে সে ছুটিতে।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সব শর্ত পূরণ
করেই মিলার নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানান জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক
জ্যোতি বিকাশ ত্রিপুরা। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘লোকবল সংকটের
কারণে চালককে দায়িত্ব দিয়ে করে কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। তাড়াহুড়ার
মধ্যে মাস্টাররোলে স্বাক্ষর এদিক-সেদিক
হতে পারে। ওএমএস কার্যক্রমে কোনো অনিয়ম হয় না বলে দাবি তার।’