কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে করতোয়া নদীর পানি বেড়েছে। এতে ভাঙন দেখা দিয়েছে নদীতীরবর্তী বিভিন্ন গ্রামে। ঝুঁকিতে রয়েছে ১৫-২০টি পরিবারের বাড়িঘর। ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ নদীতীরের বাসিন্দাদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদীভাঙনের শঙ্কায় থাকে ঘোড়াঘাট পৌরসভার নাপিতপাড়া, হিন্দুপাড়া ও বড়গলি গ্রামের শতাধিক পরিবার। বিগত বছরগুলোয় এ তিনটি গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়ি বিলীন হয়েছে নদীতে। প্রতি বছর বর্ষায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পাউবোর কাছে ধরনা দিয়েও কোনো সুফল পাননি ভুক্তভোগী। গত বছর গ্রাম তিনটি পরিদর্শন করেন দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক। ভাঙন ঠেকাতে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলেন। তবে সে আশ্বাস বাস্তবে রূপ নেয়নি। তাদের দেয়া আশ্বাসের অপেক্ষায় থেকে নদীভাঙনে হারিয়ে গেছে বসতভিটা। করতোয়ার পানি বাড়ায় এ বছরও বিলীন হওয়ার পথে ১৫-২০টি পরিবারের ঘরবাড়ি।
সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামগুলোর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়ার পানি বেড়েছে। এসব গ্রামের সাত-আটটি ঘরের অর্ধেকাংশ নদীতে বিলীন হয়েছে। অবশিষ্ট ঘরে গরু-ছাগল নিয়ে কোনোমতে দিন কাটাচ্ছে পরিবারগুলো।
বৃদ্ধ মালতি রানী বলেন, ‘আমার আর কিছু নেই। ভাঙা ঘরে বৃষ্টির পানি পড়ত। সেই ঘরও নদীতে হারিয়ে গছে। কোথায় থাকব। কী করব। কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। গরিবের কষ্ট কেউ দেখে না।’
নিতাই সাহা বলেন, প্রতি বছর ভাঙনের বিষয়টি এমপিকে জানানো হয়। মেয়রের কাছেও গিয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু দিনশেষে ফল শূন্য। সবাই শুধু আশা দিয়ে যান। হবে হচ্ছে আরো কত কী। গত বছর এমপি এসে আমাদের অবস্থা দেখে গেছেন। ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তবে তিনি যাওয়ার পর আমাদের শুধু চাল আর ডাল দেয়া হয়েছে। ঘরবাড়ি রক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।’
শান্তি রানী নামে এক গৃহবধূ বলেন, ‘নদীর পানি আমাদের ঘরের পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। রাতে ভয়ে ঘুমাতে পারি না। কখন বুঝি ঘরসহ নদীতে ডুবে যাই। দিনে রান্না করতে গেলে আতঙ্কে থাকতে হয়।’
এ ব্যাপারে ঘোড়াঘাট পৌরসভার মেয়র আব্দুস সাত্তার মিলন বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা আমার কাছে এসেছিলেন। আমি বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্যকে জানিয়েছি। পৌরসভার পক্ষ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডকেও বারবার চিঠি দেয়া হয়েছে। নদী শাসনের মাধ্যমে ভাঙন ঠেকাতে না পারলে পৌরসভার একাধিক ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি গ্রাম বিলীন হয়ে যেতে পারে।’
দিনাজপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘আমি এখানে নতুন এসেছি। পৌর মেয়রের কাছে থেকে বিষয়টি জেনেছি। গ্রামগুলো পরিদর্শন করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। সেখান থেকে অনুমোদন পেলেই কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে।’