পার্বত্য চট্টগ্রাম ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ

ছয় দশকে কার্যক্রম কেবল ৪৬১ জুমচাষীকে প্রণোদনা

বনভূমি সুরক্ষায় ঢালু পাহাড়ে জুম চাষ নিরুৎসাহিত করতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ।

বনভূমি সুরক্ষায় ঢালু পাহাড়ে জুম চাষ নিরুৎসাহিত করতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ। আটটি রেঞ্জে পদ রয়েছে ২২৯টি। তবে কর্মরত আছেন ৮১ জন। প্রতিষ্ঠার পরবর্তী সময়ে কেবল একটি ধাপে ৪৬১ জুমচাষীকে নিরুৎসাহিত কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়। পুনর্বাসনের লক্ষ্যে তাদের প্রণোদনাও দিয়েছিল ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ। কেবল একবারের জন্যই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এরপর আর কোনো কর্মসূচির আওতায় আসেননি পাহাড়ের প্রান্তিক জুমচাষীরা।

জুম গবেষকরা মনে করছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে। যে লক্ষ্যে এ বিভাগটি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল সে লক্ষ্যে কোনো অবদান রাখতে পারেনি বিভাগটি। নিজেদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম নেই বলেও স্বীকার করেছেন বিভাগটির কর্মকর্তারা।

ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. মো. জাহিদুর রহমান মিয়া বণিক বার্তাকে বলেন, ‘১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮৪-৮৫ অর্থবছরে একবারই ৪৬১ জনকে প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল। এরপর প্রকল্পটি আর চালিয়ে যাওয়া হয়নি। বাস্তব কথা হলো এখন দৃশ্যত আমাদের জুম নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যক্রম নেই। তবে আমরা বন রক্ষায় জুম নিয়ন্ত্রণ করতে চাই।’

তিন পার্বত্য জেলায় কী পরিমাণ জুম ভূমি রয়েছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কী পরিমাণ জুম ভূমি রয়েছে; এর সঠিক তথ্য আমাদের বিভাগের কাছে নেই। তবে তথ্য-উপাত্ত তৈরির কাজ চলমান।’

বর্তমান সময়ে ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে বলে মনে করেন উন্নয়নকর্মী ও জুম গবেষক তনয় দেওয়ান। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘জুমচাষীদের পুনর্বাসনের কোনো প্রকল্প তাদের (বন বিভাগ) মধ্যে নেই। সংরক্ষিত বনাঞ্চলে সেগুন বাগান সৃজন করার জন্য তারা জুমচাষীদের তখন ব্যবহার করেছেন; এখন তো কোনো বনায়ন কার্যক্রম নেই। সামাজিক বনায়নে তাদের কোনো কার্যক্রমও নেই, আর সামাজিক বনায়ন জুম নিয়ন্ত্রণের অধীনেও নয়। প্রকৃতপক্ষে ঝুম নিয়ন্ত্রণ বিভাগের এখন আর কোনো কাজ নেই। ব্রিটিশ আমলে করা সংরক্ষিত বনের জন্য প্রয়োজন হলেও এখন এটি অপ্রাসঙ্গিক। তারা যদি প্রকৃতপক্ষে জুমচাষীদের পুনবার্সন করে, বনভূমি রক্ষাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম করত, তাহলে সেটি ভালো হতো। এখন ঝুম নিয়ন্ত্রণ বিভাগ আসলে কী করে আমরাও কিছু জানি না। জুম নিয়ে কাজ করার পর দেখলাম পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক জেলা পরিষদেরও একটি বিষয় হয়ে ওঠে জুম চাষ। কিন্তু এখন জেলা পরিষদ, কৃষি বিভাগ কারো জুম চাষ নিয়ে কোনো কার্যক্রম নেই।’ এখানে জুম চাষ হলেও কেউই দায়িত্বশীল নয় বলে মনে করেন এ গবেষক।

ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ প্রতিষ্ঠার করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮৪-৮৫ অর্থবছরে জুম নিয়ন্ত্রণের একটি প্রকল্পের আওতায় ৪৬১টি জুমিয়া পরিবারকে নিরুৎসাহিত করার অংশ হিসেবে প্রণোদনা দেয়া হয়। এরপর জুমিয়াদের জন্য নতুন করে কোনো উদ্যোগ বা প্রকল্প নিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। প্রায় ছয় দশক ধরে নামেই ঝুম নিয়ন্ত্রণ হিসেবে টিকে আছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় কী পরিমাণ জুমভূমি বা ঢালু পাহাড়ি জমি রয়েছে; সেটিরও কোনো পরিসংখ্যা নেই প্রতিষ্ঠারটির কাছে। যদিও তারা বলছে, এখনো তথ্য-উপাত্ত তৈরির কাজ চলছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙ্গামাটি অঞ্চলের তথ্যমতে, রাঙ্গামাটি জেলায় ১২ হাজার ৭৯৯ হেক্টর, খাগড়াছড়ি জেলায় ১০ হাজার ৮০৩ হেক্টর ও বান্দরবান জেলায় ১৩ হাজার ৪১৫ দশমিক ৫ হেক্টর জুমভূমি রয়েছে। ডিএইর হিসাবে, পার্বত্য চট্টগ্রামে জুমভূমির পরিমাণ ৩৭ হাজার ১৭ দশমিক ৫ হেক্টর। তবে ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ বলছে, জুম নিয়ন্ত্রণে কার্যত কোনো কার্যক্রম না থাকলেও বিভাগটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল সুরক্ষাসহ পারমিট কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিভিন্ন মৌজার অধীনে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় ৬ হাজার ৩২৯ ও খাগড়াছড়ি জেলায় ১৮ হাজার ২৪৯ একর সংরক্ষিত বন রয়েছে। এছাড়া রাঙ্গামাটির ২৯ হাজার ৮৫৩ ও খাগড়াছড়ির ১ হাজার ৮২৫ একর ভূমি সংরক্ষিত বন গড়ে তোলার নির্বাচিত ও অধিগ্রহণের কাজ চলমান। অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন হলে আগের ২৪ হাজার ৫৭৮ একর সংরক্ষিত বনসহ ৫৬ হাজার ২৫৬ একর ভূমি তাদের সংরক্ষিত বন থাকবে।

আরও