নানামুখী সংকটে রাঙ্গামাটির চন্দ্রঘোনা ক্রিশ্চিয়ান হাসপাতাল

রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীর পাড়ে ১৯০৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল চন্দ্রঘোনা ক্রিশ্চিয়ান হাসপাতাল।

রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীর পাড়ে ১৯০৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল চন্দ্রঘোনা ক্রিশ্চিয়ান হাসপাতাল। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে এটি চন্দ্রঘোনা মিশন হাসপাতাল নামেই পরিচিত হলেও নানামুখী সংকটে ভুগছে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, কুষ্ঠ রোগীর জন্য হাসপাতালে আলাদা বিভাগ থাকলেও বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি বরাদ্দ নেই। এজন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে। নার্সিং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থাকলেও স্থায়ী ভবন নেই। এছাড়া বিদেশী সহায়তা বন্ধ থাকায় আর্থিক সংকটও দেখা দিয়েছে। হাসপাতালে কর্মরতদের পর্যাপ্ত পারিশ্রমিকও দিতে পারছে না তারা।

চন্দ্রঘোনা ক্রিশ্চিয়ান হাসপাতালের দেয়া তথ্যানুযায়ী, হাসপাতালটি ১০০ শয্যার হাসপাতাল হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। হাসপাতালের আন্তঃবিভাগে প্রায় পাঁচ হাজার রোগী এবং বহির্বিভাগে প্রায় ২০ হাজার রোগী বছরে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেন। এছাড়া বছরে ২০ লাখ টাকা সমমানের চিকিৎসাসেবা বিনামূল্যে বিতরণ করা হয় রোগীকে। ১৯১৩ সালে চন্দ্রঘোনা ক্রিশ্চিয়ান হাসপাতালে কুষ্ঠ চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাসরত প্রায় তিন কোটি মানুষের জন্য এটিই একমাত্র বিশেষায়িত কুষ্ঠ চিকিৎসা কেন্দ্র। প্রতি বছরে প্রায় ২৫০ জনের বেশি কুষ্ঠ রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বিনামূল্যে কুষ্ঠ রোগের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা, চিকিৎসা, খাবার, থাকার ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা দেয়া হয়। রোগীদের বিকলাঙ্গতা প্রতিরোধের জন্য ব্যবহার্য উপকরণও দেয়া হয়। ২০০৯ সাল থেকেই বন্ধ রয়েছে বিদেশী অর্থায়ন। এতে হাসপাতালের কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠাকালীন সময় ১৯০৭-০৯ পর্যন্ত পরিচালকের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন ডা. জিও টেইলর। হাসপাতালের ষষ্ঠ পরিচালক হিসেবে প্রথম বাংলাদেশী পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ডা. এসএম চৌধুরী। তিনি ১৯৬৫ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৭ বছর দায়িত্বে ছিলেন; তিনিই সবচেয়ে দীর্ঘ সময় পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে বর্তমানে নবম পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন ডা. প্রবীর খিয়াং।

বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসায় হাসপাতালটি শুরু থেকেই পুরোপুরি বিদেশী সহায়তার ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু ২০০৯ সালের পর থেকে বিদেশী অর্থায়ন বন্ধ রয়েছে। যে কারণে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কুষ্ঠ রোগীদের ওষুধ, চিকিৎসা ও খাবারসহ অন্যান্য বিষয়টি হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে সরবরাহ করতে হয়। ফলে আমাদের জেনারেল হাসপাতালের ওপর চাপ পড়ে যায়। বছরে কুষ্ঠ হাসপাতালের জন্য ৫০-৬০ লাখ টাকা খরচ করতে হয় জেনারেল হাসপাতালের ফান্ড থেকে।’

বিশেষায়িত কুষ্ঠ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর ১৯৩৭ সালে চন্দ্রঘোনা ক্রিশ্চিয়ান হাসপাতালে প্রতিষ্ঠা করা হয় নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। বর্তমানে চালু থাকা নার্সিং ইনস্টিটিউটটি অবিভক্ত ভারতবর্ষের অন্যতম একটি প্রাচীন নার্সিং প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান থেকেই প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক সেবক-সেবিকা দেশের বিভিন্ন স্থানে নার্সিং পেশায় কর্মরত। প্রতিষ্ঠানটি পার্বত্য চট্টগ্রামের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ গ্রহণের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়ে এলেও রয়েছে স্থায়ী ভবন সংকট। এজন্য দুটির বেশি কোর্স চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

নার্সিং ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত ছয় হাজার শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ শেষে দেশের সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবায় অবদান রেখে যাচ্ছেন। এখানে দুই ধরনের কোর্স পরিচালিত হচ্ছে। একটি ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি এবং আরেকটি ১৮ মাস মেয়াদি মিডওয়াইফারি কোর্স। স্থায়ী ভবন নির্মাণ করা হলে নতুন কোর্স চালুর পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রবীর খিয়াং বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চন্দ্রঘোনা ক্রিশ্চিয়ান হাসপাতালের নার্সিং ইনস্টিটিউটটি ভারতবর্ষের অনেক প্রাচীন একটি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে হাসপাতালে পর্যাপ্ত ভবন নেই। নতুন একটি স্থায়ী ভবন হলে আমরা আরো কয়েকটি নার্সিং কোর্স চালু করতে পারব। এছাড়া হাসপাতালে স্টাফদেরও অন্যান্য হাসপাতালের স্কেল অনুযায়ী বেতন দিতে পালছি না। এসব সংকট কাটিয়ে ওঠা গেলে হাসপাতালে আরো বেশি সেবা দেয়া যাবে।’

আরও