কয়েক ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি আবাসিক হলসহ
ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে নজিরবিহীন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। যার
কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। শুক্রবার (১২ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে
৯টা পর্যন্ত হওয়া বৃষ্টির কারণে এ জলাবদ্ধতা তৈরি হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাজী মুহাম্মদ মুহসিন হল, এফ রহমান হল, সূর্যসেন হল, সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ হল, রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হল, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল, বঙ্গমাতা হল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ড. শাহনেওয়াজ হোস্টেল, নিউমার্কেট এলাকায়ও কোমর সমান পানি প্রবাহিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কয়টি হল প্লাবিত হয়েছে, তার মধ্যে কুয়েত মৈত্রী হল এবং বঙ্গমাতা হল অন্যতম। এটি প্রথম নয়, এর আগে কয়েকবার প্লাবিত হয়েছে এ হল দুটি, মৈত্রী হলে পানি প্রবাহিত হয়েছে নিচতলার ১০৬ থেকে ১২০ নং রুম, টিভি রুম, অডিটোরিয়াম এবং ক্যান্টিন। এ হলের আশপাশে ঘুরে দেখা যায়, দুই হলের গেট থেকে শুরু করে পেছন পর্যন্ত কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও কোমর পর্যন্ত পানি জমে গেছে। বন্ধ আছে ক্যান্টিনসহ অন্যান্য ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এ দুই হলের নারী শিক্ষার্থীরা। কুয়েত মৈত্রী হল থেকে আজিমপুর যেতে জলাবদ্ধতার সুযোগ নিয়ে রিকশাচালকরা স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।
মাস্টারদা সূর্যসেন হলে তেমন জলাবদ্ধতা দেখা না গেলেও ভারি বৃষ্টিপাতে
পাইপ দিয়ে পানি চুইয়ে রিডিংরুম এবং মসজিদের বেহাল দশা দেখা যায়। অনেকের বই, খাতা ভিজে
নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ যেন বিলের রূপ নিয়েছে।
ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের হলের নিচতলার সবগুলো রুমের মধ্যে পানি প্রবেশ করেছে। বাইরে গলা সমান পানি। এ ব্যাপারে আমরা হল প্রভোস্ট স্যারকে সেই সকাল থেকে ফোন দিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু ফোন রিসিভ করছে না। এই অনিয়ম ও অবহেলার শেষ কোথায়?
বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের চতুর্থ বর্ষের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক
শিক্ষার্থী বলেন, হলের ভেতরে খুবই খারাপ অবস্থা। হলের লন পুরোটা ডুবে আছে। ক্যান্টিন
ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ভেতরেও পানি ঢুকে গেছে। হলের সামনে থেকে শুরু করে ভেতর পর্যন্ত
মোটামুটি কোমর পানি এখন। হলের নিচতলার রুমগুলোতে হাঁটুর কাছাকাছি পানি ছিল, এখন একটু
কমেছে। বিদ্যুৎ নেই আবার বিশুদ্ধ পানির সংকট। সবারই খুব খারাপ অবস্থা। হল প্রশাসন এখনো
কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি।
এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. নাজমুন
নাহারকে ফোন দিলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
মাস্টারদা সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আজকে যে বৃষ্টি হয়েছে এটা অস্বাভাবিক, আমার হলে রিডিং রুম এবং মসজিদে পাইপের পানি চুইয়ে ভিজে গেছে। অনেক শিক্ষার্থীর বই, খাতা নষ্ট হয়েছে। রিডিং রুমের ছাদে ময়লা জমে থাকার কারণে পানি বের হতে পারেনি। ফলস্বরূপ এমনটা হয়েছে।
হলের পানি নিষ্কাশনের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান বলেন, সকাল থেকেই আমরা পানি নিষ্কাশন
ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের চেষ্টা করছি। পানি নিষ্কাশনের জন্য সকাল থেকেই সিটি করপোরেশনের
লোকজন কাজ করছে। সমস্যা হচ্ছে নিচের ড্রেনেজ কন্ডিশন ভালো নয়, ফলে পানি সহজে বের হচ্ছে
না।