রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান—তিন পার্বত্য জেলায় গত আগস্টের বন্যায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে ৭১ হাজারের অধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর্থিক হিসাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৮৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জেলাভিত্তিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ চূড়ান্ত করে খামারবাড়িতে প্রতিবেদন পাঠিয়েছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙ্গামাটি অঞ্চল।
কৃষি মন্ত্রণালয় ত্বরিতভাবে কৃষকের পাশেও দাঁড়িয়েছে প্রণোদনা দিয়ে। তবে প্রণোদনার বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তিন পার্বত্য জেলার ৭১ হাজার কৃষকের ফসলি জমি তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রণোদনার পাঁচ কেজি করে ধানবীজ পেয়েছেন মাত্র তিন হাজার কৃষক। তবে তালিকা অনুযায়ী উপজেলা পর্যায়ে কৃষকের মাঝে প্রণোদনার ধানবীজ শতভাগ বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএই। যদিও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তুলনায় প্রণোদনার ধান বিতরণ কার্যক্রমের আওতায় সব কৃষককে আনা যায়নি।
তবে ৭১ হাজার কৃষকের মধ্যে জুমচাষী, ফল, সবজি বাগান ও ধানচাষী থাকলেও আপাতত আমন ধান আবাদ উপযোগী এলাকার কৃষককে প্রণোদনার আওতায় আনা হয়েছে। রবি মৌসুমে অন্য কৃষককে ধান, সবজিসহ অন্যান্য ফসলের বীজ বিতরণ করা হবে। আপাতত কৃষককে মানসিকভাবে উৎসাহ ও কিছুটা ক্ষতি পোষাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে প্রথম ধাপে বিতরণকৃত প্রণোদনা। বিশেষত রোপা আমন ধানে পানির প্রয়োজনীয়তা থাকার কারণে অনেক এলাকা বর্তমানে আমন আবাদে উপযোগী না হওয়ায় সেসব এলাকা চিহ্নিত করে বীজ বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ির উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহীন ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আউশ, আমন ও অন্যান্য রবিশস্য মিলিয়ে বাঘাইছড়ির উপজেলার ১০ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করে খামারবাড়িতে পাঠানো হয়েছে। আপাতত বরাদ্দ পাওয়া ১ হাজার ৫০০ কেজি বিআর-২৩ আমন ধানবীজ ৩০০ কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। আমন ধানের জন্য সবসময় পানির প্রয়োজন থাকায় যেসব এলাকায় পানি থাকবে সেসব এলাকার কৃষকদের মাঝেই আমনবীজ বিতরণ করা হয়েছে।’
অপ্রতুল বরাদ্দের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘অপ্রতুল বরাদ্দ হয়েছে এটি সত্য। তবে আমরা আশাবাদী, সামনের রবি মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য বড় বরাদ্দ আসবে। এখন যে ধান বীজ বিতরণ করা হয়েছে সেটি ১২০ দিনের মধ্যেই ফলন আসবে। এটি কিছুটা ক্ষতি পোষাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।’
ডিএই রাঙ্গামাটি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক তপন কুমার পাল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘তিন পার্বত্য জেলার ৭১ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; কিন্তু এর মধ্যে ধানচাষী, জুম চাষী, ফল ও সবজিচাষীরাও রয়েছে। আপাতত আমন ধান আবাদ উপযোগী এলাকার কৃষকের জন্য ১৫ টন ধানবীজ প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। আসন্ন রবি মৌসুমে অক্টোবরের দিকে আবারো ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের মাঝে ধান, ফল, সবজিসহ অন্যান্য বীজ প্রণোদনা দেয়া হবে। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে ধাপে ধাপে সব কৃষককে প্রণোদনা কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙ্গামাটি অঞ্চল কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে তিন পার্বত্য জেলায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৫১ হেক্টর কৃষি জমিতে আউশ ধান, রোপা আমন ধান, গ্রীষ্মকালীন সবজি, আদা, হলুদ, কলা, পেঁপেসহ অন্যান্য ফসলের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে তিন পার্বত্য জেলার ১৫ হাজার ৮২৭ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১২ হাজার ৭৭৭ হেক্টর জমির ফসল। আবাদ হিসাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ জমির ফসল। আর্থিক হিসাবে তিন জেলার ৭১ হাজার ২৫০ কৃষক ৩৮৩ কোটি ৮ লাখ টাকার ক্ষতির মুখে।
ডিএইর আমন ধান বীজ বিতরণ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তিন পার্বত্য জেলায় ১৫ টন বিআর-২৩ জাতের আমন ধান বীজ বিতরণ করা হয়েছে। প্রত্যেক কৃষককে পাঁচ কেজি করে বীজ দেয়া হয়েছে। সে হিসাবে ১৫ টন ধান বীজ পেয়েছেন মাত্র তিন হাজার কৃষক। এর মধ্যে পাঁচ টন ধান বীজ পেয়েছে রাঙ্গামাটির এক হাজার কৃষক, তিন টন ধান বীজ পেয়েছে খাগড়াছড়ির ৬০০ কৃষক এবং সাত টন ধান বীজ পেয়েছে বান্দরবানের ১ হাজার ৪০০ কৃষক। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ও প্রণোদনার পাঁচ কেজি হারে ধানপ্রাপ্ত কৃষকের সংখ্যা তুলনা করে দেখা গেছে রাঙ্গামাটির ১২ হাজার ১৬০ কৃষকের মধ্যে প্রণোদনার আওতায় এসেছে এক হাজার কৃষক, বান্দরবানের ৫৬ হাজার ২৫০ কৃষকের মধ্যে প্রণোদনা পেয়েছে ১ হাজার ৪০০ কৃষক এবং খাগড়াছড়ির ২ হাজার ৮৪০ কৃষকের মধ্যে প্রণোদনা পেয়েছে ৬০০ কৃষক।