প্রশাসনের অভিযানের পরও বালি উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না

নোয়াখালীতে হুমকির মুখে মুছাপুর রেগুলেটর ও ক্লোজার বাঁধ

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুরে ছোট ফেনী নদী থেকে বছরের পর বছর বালি উত্তোলন করছে প্রভাবশালীরা।

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুরে ছোট ফেনী নদী থেকে বছরের পর বছর বালি উত্তোলন করছে প্রভাবশালীরা। প্রশাসনের অভিযানের পরও বালি উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। ফলে হুমকিতে রয়েছে সরকারের ব্যয়বহুল প্রকল্প মুছাপুর রেগুলেটর ক্লোজার বাঁধ। ধসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বসতবাড়ি, নদীর আশপাশের ফসলি জমি বেড়িবাঁধ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বালি উত্তোলনের শুরুটা প্রায় দেড় বছর আগে। এরই মধ্যে কয়েক লাখ ফুট বালি উত্তোলন করে প্রভাবশালীরা। কয়েক মাস আগে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে বালি উত্তোলন বন্ধে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন বৈঠক করে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুলিশের সহায়তায় বালি উত্তোলন বন্ধে অভিযান চালানো হয়। অভিযান চালিয়ে একাধিকবার বালি উত্তোলন বন্ধ করে প্রশাসন। কিন্তু দিন পরই পুনরায় বালি উত্তোলন করে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা জালাল উদ্দিন তার লোকজন।

স্থানীয়রা বলেন, জালাল উদ্দিন একসময় বিএনপি করলেও বর্তমানে আওয়ামী লীগের ছত্রচ্ছায়ায় নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আইয়ুব আলীর ছত্রচ্ছায়ায় সরকারি খাসজমি ভূমিহীনদের কাছে বিক্রি, নদী থেকে বালি উত্তোলন, নদীতে কারেন্ট জাল ব্যবহার করে ইলিশ মাছ নিধন করে আসছে জালাল। প্রতিনিয়ত বালি তোলার কারণে হুমকিতে রয়েছে সরকারের বড় প্রকল্প মুছাপুর ক্লোজার মুছাপুর রেগুলেটর। বালিবাহী ট্রাক চলাচল করায় স্থানীয় সড়ক ভেঙে যাচ্ছে। বিভিন্ন সড়কে তৈরি হচ্ছে খানাখন্দ। এরই মধ্যে ছোট ফেনী নদীর কিছু অংশের তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

সম্প্রতি সরজমিনে দেখা যায়, ছোট ফেনী নদীর পশ্চিম পাশে অন্তত দুই একর জমিজুড়ে বালির স্তূপ। নদীর তিনটি অংশে রয়েছে বালি তোলার ড্রেজার মেশিন। এক্সক্যাভেটর মেশিন দিয়ে ট্রাকে ভর্তি করা হচ্ছে বালি। এমন দৃশ্যের ছবি নিতে গেলে জালালের পাহারাদাররা বাধা দেয়।

তবে বালি উত্তোলনের অভিযোগ অস্বীকার করে জালাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাকে কিছু লোক ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। উল্টো অভিযোগ করেন ফেনী জেলার সেন্টু মিয়া, স্বপন মিয়াজীসহ কয়েকজন বালি উত্তোলন করছেন। তাহলে মৌলভীবাজারসংলগ্ন বিছমিল্লাহ বালির মাঠটি কার? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই।

তার বক্তব্যের সূত্র ধরে কথা হয় ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার ব্যবসায়ী সেন্টু মিয়ার সঙ্গে। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুরে তিনি কখনো আসেননি। তিনি সরকারি বালি মহাল লিজ নিয়ে সেখান থেকে বালি উত্তোলন করেন। তবে তা সোনাগাজী অঞ্চলে। মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলীর শেল্টারে জালাল উদ্দিনসহ কিছু লোক ছোট ফেনী নদীর কোম্পানীগঞ্জ অংশ থেকে দীর্ঘদিন বালি উত্তোলন করার কারণে আমার বৈধ ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জালাল উদ্দিনের কোনো অপরাধের দায় নেবেন না উল্লেখ করে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বলেন, ‘কেউ অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে সহায়তা করব।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসন একাধিকবার মুছাপুরে অভিযান চালিয়েছে। প্রশাসনের লোকজন যাওয়ার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বালি উত্তোলনকারীরা পালিয়ে যায়। ব্যাপারে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও