সারা
দেশে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন নিশ্চিত করতে প্রকল্প নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১০৬টি বীর নিবাস। ২০২১-২২ অর্থবছরে ভবন
নির্মাণের দরপত্র হলেও কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের
মার্চে। সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয় এক বছর।
অথচ দেড় বছরে কাজ শেষ হয়েছে ৩৬টির। অর্ধনির্মিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে ৩২টি। এখনো ৩৮টি ভবনের কাজে হাত দেয়া হয়নি।
ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধারা জানান, বেশির ভাগ ভবনই নির্মাণাধীন অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও নির্মাণকাজে হাত দেয়নি ঠিকাদার। দপ্তরে দপ্তরে ধরনা দিয়েও মিলছে না প্রতিকার।
দীর্ঘ এক বছর শয্যাশায়ী থাকার পর ১৪ মে সোনাইমুড়ী উপজেলার অম্বরনগর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তার ছোট ছেলে গিয়াস উদ্দিন জানান, একটি বীর নিবাস বরাদ্দ হয় তার বাবার নামে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন বাড়ি এসে বিভিন্ন অজুহাতে ১ লাখ টাকা দাবি করেন। তবে সে টাকা তারা দেননি। ঠিকাদার রুবেল জানান, ১ লাখ টাকা না দিলে তিনি ঘরের কাজ ধরবেন না। পরবর্তী সময়ে তার বাবা বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েছেন। একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে যান। বীর নিবাস বরাদ্দ হলেও ১ লাখ টাকা দিতে না পারায় গত দেড় বছরেও ঘর নির্মাণ শুরু করেননি ঠিকাদার। জীবদ্দশায় টিনের চালায় কাটাতে হয়েছে তার বাবাকে।
৭৬ বছর বয়সী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস ছাত্তার। তার ঘরটিও এখনো নির্মাণ হয়নি। আবদুস ছাত্তার বলেন, ‘এক বছরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, জেলা প্রশাসনসহ বহু দপ্তরে গিয়েছি। এখন পর্যন্ত ঘরটি নির্মাণ হয়নি। দেড় বছর আগে ঠিকাদার ঘরটির নির্মাণকাজে হাত দেন। বিভিন্ন অজুহাতে ঠিকাদার ৮৫ হাজার টাকা নিয়েছেন আমার কাছ থেকে। একপর্যায়ে ৪০ শতাংশ কাজ করে উধাও হয়ে গেছেন। বর্তমানে তিনি এ ঘর নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ঘরটি এখন আমার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে থাকতে হচ্ছে আরেকজনের ভাঙা ঘরে।’
উত্তর অম্বর নগর গ্রামের মমিন উল্যাহ জানান, তিনি ঠিকাদারকে ১ লাখ টাকা দিয়েছেন। ঠিকাদার তখন কাজও করেছেন। চারপাশে ইটের গাঁথুনি দিয়ে চলে গেছেন। এক বছর এভাবে তার ঘরটি পড়ে রয়েছে। ইট, বালি, সিমেন্ট ও লোহার রডগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আদৌ ঘরটি হবে কিনা সেটাই বুঝতে পারছেন না। জীবদ্দশায় বীর নিবাসে থাকতে পারবেন কিনা সে আক্ষেপ থেকেই গেছে তার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোনাইমুড়ির অম্বর নগর গ্রামে নয়জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে বীর নিবাস বরাদ্দ হয়। এর মধ্যে মাত্র একটি ভবনের ছাদ ও তিনটি ভবনের ৩০ শতাংশ কাজ করেছে ঠিকাদার। অন্য পাঁচটি ভবনের কাজ শুরুই হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, এক-একটি বীর নিবাসের জন্য ঠিকাদারকে দেয়া হয়েছে সর্বনিন্ম ৮০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা। এরই মধ্যে গড়িয়েছে দেড় বছর, তবু শেষ হয়নি কাজ।
এসব ঘর নির্মাণ করছে একাধিক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সোনাইমুড়ীর অম্বর নগরের বীর নিবাসগুলোর কাজ করছেন ঠিকাদার রুবেল। তবে সেলফোনে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে সোনাইমুড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমি যোগদান করেছি কয়েক মাস হয়েছে। যোগদানের পর থেকে অনেক মুক্তিযোদ্ধা অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রণালয়কেও জানিয়েছি। ঠিকাদারদের এমন আচরণে আমি নিজেও ক্ষুব্ধ। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে বীর নিবাস নির্মাণ শেষ করার ব্যবস্থা করব।’