বিশ্ব পর্যটন দিবস পালিত

পরিকল্পিত উন্নয়ন করলে বদলে যাবে কক্সবাজার

প্রতি বছরের মতো এবারও কক্সবাজারে পালন করা হয়েছে বিশ্ব পর্যটন দিবস। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে র‌্যালি এবং বিকেলে লাবনী পয়েন্টে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে 'পর্যটন শান্তির সোপান' প্রতিপাদ্যে পালিত হয় দিবসটি।

প্রতি বছরের মতো এবারও কক্সবাজারে পালন করা হয়েছে বিশ্ব পর্যটন দিবস। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে র‌্যালি এবং বিকেলে লাবনী পয়েন্টে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে 'পর্যটন শান্তির সোপান' প্রতিপাদ্যে পালিত হয় দিবসটি।

অতীতের মতো জমকালো কোনো আয়োজন না থাকলেও দিবসটি ঘিরে কক্সবাজার বেড়াতে আসেন পর্যটকরা। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কক্সবাজারে ঘুরে বেড়ানোর প্রধান স্পট সৈকত। দেখার জন্য রয়েছে মডেল মসজিদ, রাখাইন সম্প্রদায়ের বৌদ্ধ মন্দির ও তাদের বৈচিত্র্যময় জীবনধারা, সাফারি পার্ক, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, সোনাদিয়া দ্বীপ, কুতুবদিয়া দ্বীপ, চকরিয়া ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক ও হিমছড়ি ঝর্ণা।

তবে অভিযোগ রয়েছে, পর্যটন স্পট হলেও এসবের সুরক্ষা কিংবা সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সংশ্লিষ্টদের কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় না। সরকার বিভিন্ন সময় নানামুখী পদক্ষেপের কথা বললেও কার্যত তা কিছুই হয়নি। উল্টো কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা, কলাতলী, লাবনী পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানের বালুকাবেলা দখল হয়েছে অসাধু চক্রের হাতে। তৎকালীন কতিপয় ক্ষমতাসীন প্রভাবশালীদের থাবা থেকে রক্ষা পায়নি সৈকতের সরকারি জমি। একের পর এক দখল করে নির্মাণ করা হয় অপরিকল্পিত ও অবৈধ স্থাপনা।

এদিকে, এর আগে সৈকতের বালিয়াড়িতে অস্থায়ী দোকানের লাইসেন্সও দিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। এতে শ্রীহীন হয়ে পড়ে সমুদ্র সৈকত। এসব কারণে পর্যটকদের বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা যায়। আবার অনেক সময় ছিনতাইকারী ও টমটম চালকদের হাতে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন অনেক পর্যটক। রয়েছে ভাতের হোটেল ও আবাসিক হোটেলগুলোতে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ।

সৈকতের দরিয়ানগর, হিমছড়িতে কিছুটা সংস্কার হলেও অন্য কোথাও আর সংস্কার হয়নি। নেই কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থাও। ফলে পর্যটক আকর্ষণ করতে পারছে না কক্সবাজার। 

পর্যটকরা জানিয়েছেন, কক্সবাজারে প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক আসলেও পর্যটকদের আকৃষ্ট করার কোনো আয়োজন নেই। তাদের মতে, দীর্ঘতম সৈকত ঘিরে গড়ে উঠেছে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প। এ শিল্পকে নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় নানা পরিকল্পনার কথা বলা হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। পর্যটক ও উদ্যোক্তারা বলছেনসমুদ্র সৈকত রক্ষা করে পরিকল্পিত উন্নয়ন বাস্তবায়ন করলে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হবে কক্সবাজার। 

কক্সবাজার পরিবেশ আন্দোলনের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম বলেন, অবৈধ পাহাড় কাটা, বনাঞ্চল নিধন, সরকারি খাসভূমি দখল ও অপরিকল্পিত ইমারত তৈরির ফলে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। ব্যবসার নামে যত্রতত্র নির্মাণ করা হচ্ছে ইট-পাথরের স্থাপনা। সৈকতে গড়ে তোলা হয়েছে ঝুঁপড়ি দোকান। এতে সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।

তবে পর্যটন করপোরেশন কক্সবাজারের ব্যবস্থাপক রায়হান উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ করা হচ্ছে। আর পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কাজ করছে পর্যটন বোর্ড। আশা করছি ভালো কিছু হবে।

রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন সময় দেশে নানা সমস্যার কারণে ব্যবসা অত্যন্ত মন্দা গেছে। অনেকে তো রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেয়ার চিন্তা করেছিল। তবে এখন কিছুটা পরিবর্তন হচ্ছে। আস্তে আস্তে বন্ধ থাকা রেস্তোরাঁও খুলছে। তবে আগের মতো সে অবস্থা নেই। তারপরও আমরা আশাবাদী ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারব।

কক্সবাজার হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষায় বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে বারবার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের সহকারী সুপার আবুল কালাম বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সর্বদা সচেষ্ট ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোন।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, পর্যটন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে কউক, সড়ক ও জনপদ, কক্সবাজার পৌরসভা, পর্যটন কর্পোরেশনের শৈবাল-প্রবাল, বিমান বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করে করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে নাগরিকদের নিয়ে একটি সুপারভিশন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে যা যা করার সবকিছু সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে বাস্তবায়ন করা হবে। 

আরও