পদ্মা সেতুর নদী শাসন

ভাঙনের কারণে ব্যয় বাড়ছে আরেক দফা

পদ্মা সেতুর সুরক্ষায় নদীর পাড় বাঁধাই, ভাঙনপ্রবণ স্থানে জিও ব্যাগ, কংক্রিটের ব্লক কিংবা পাথর স্থাপন, খননসহ বহুমাত্রিক কাজ চলছে। পদ্মা বহুমুখী নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে নদী শাসনের এসব কাজে এখন

পদ্মা সেতুর সুরক্ষায় নদীর পাড় বাঁধাই, ভাঙনপ্রবণ স্থানে জিও ব্যাগ, কংক্রিটের ব্লক কিংবা পাথর স্থাপন, খননসহ বহুমাত্রিক কাজ চলছে। পদ্মা বহুমুখী নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে নদী শাসনের এসব কাজে এখন পর্যন্ত ব্যয়ের পরিমাণ ৯ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। কাজ যখন শেষ পর্যায়ে তখন নদী শাসন ব্যয় আরো ২৬৩ কোটি টাকা বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে পদ্মা সেতু নির্মাণকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।

দ্বিতীয়বারের মতো ব্যয় বৃদ্ধির দুটি কারণ উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। একটি কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, নকশা চূড়ান্তের পর মাওয়া প্রান্তে মূল সেতুর উজানে নদী শাসনকাজের সীমানা বরাবর ২০১২ সালে ভাঙন দেখা দেয়। এতে ঠিকাদারের কাজের কিছু এলাকা নদীতে বিলীন হয়। ভাঙনের কারণে নদীর তলদেশের গভীরতা বেড়ে যাওয়ায় আগের নকশায় আর কাজ করা যায়নি। ফলে নতুন নকশা করা হয়। আবার প্রাকৃতিকভাবে নদী ভরাট হতেও একাধিক বর্ষা মৌসুম প্রয়োজন। এসব কারণে নদী শাসনকাজ বিলম্বিত হয়েছে।

দ্বিতীয় কারণ হিসেবে সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, জাজিরা প্রান্তে কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট, স্পিডবোটঘাট ও আশপাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় যোগাযোগ সচল রাখতে প্রকল্প এলাকা প্রায় তিন বছর ধরে দখলে রাখে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। ঠিকাদার প্রকল্প এলাকা দেরিতে বুঝে পাওয়ায় কাজে বিলম্ব হয়।

মাঠ পর্যায়ে নদী শাসনের কাজটি করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিতীয় দফায় ব্যয় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় গতকাল; সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদের ১১৪তম সভায়। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে সভার আলোচ্যসূচি তুলে ধরেন সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। 

সংবাদ সম্মেলনে বণিক বার্তার এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘সিনোহাইড্রো করপোরেশনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পদ্মা সেতুর নদী শাসন ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি‌ আমাদের বোর্ড সভায় অনুমোদন হয়েছে। এখন বিষয়টি সরকারের ক্রয় কমিটিতে অনুমোদনের জন্য যাবে।’

সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সময় বাড়ানো কারণ দেখিয়ে সিনোহাইড্রো করপোরেশন প্রায় ৬৪০ কোটি টাকা দাবি করেছিল। পরে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ২৬৩ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এক বছরের ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ডসহ নদী শাসনের কাজ আগামী ৩০ জুন (২০২৪) সম্পন্ন হওয়ার কথা।

নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, টোল প্লাজা, সার্ভিস এরিয়াসহ পুরো পদ্মা সেতু প্রকল্পে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এর মধ্যে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন করলে নদী শাসনকাজের ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে ৯ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। 

পদ্মা সেতু প্রকল্প কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নদী শাসনকাজের আওতায় মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ১ দশমিক ৬ ও শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ১২ দশমিক ৪ কিলোমিটার পাড় বাঁধাই করা হচ্ছে। দুই পাড়ে স্থাপন করা হচ্ছে ১০ লাখ পাথরের ব্লক। নদীর পাড় ও তীরে ১ কোটি ৩৩ লাখ কংক্রিট ব্লক বসানো হচ্ছে। নদীতীর সংরক্ষণে ফেলা হচ্ছে ৮০০ কেজি ওজনের প্রায় ৩৯ লাখ ও ১২৫ কেজি ওজনের প্রায় ১ কোটি ৭২ লাখ জিও ব্যাগ। পদ্মার বিভিন্ন অংশে প্রায় ছয় লাখ ঘনমিটারজুড়ে চলছে ড্রেজিংয়ের কাজও।

২০১৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে নদী শাসনকাজ শুরু করে ঠিকদারি প্রতিষ্ঠান। শুরুতে ব্যয় ধরা হয় ৮ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের জুনে। কিন্তু সিনোহাইড্রো ব্যর্থ হলে মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়। পাশাপাশি প্রায় ৮৭৮ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ায় সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। 

আরও