খাগড়াছড়ির
দীঘিনালা থেকে মাইনী নদী মিলেছে রাঙ্গামাটির লংগদুতে কাচালং নদীর সঙ্গে। ষাটের দশকের আগে নদী পাড়ি দিয়ে রাঙ্গামাটির হাটবাজারে আসতেন বণিকরা। তবে এখন নদীর সে স্রোতধারা নেই।
মৃতপ্রায় নদী খননের উদ্যোগ নিয়েছে খাগড়াছড়ি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। লংগদু উপজেলার
মাইনীমুখে বন বিভাগের বিশ্রামাগার
এলাকার অংশে এখন চলছে খননকাজ। তবে নদী খননের বালি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে কাপ্তাই হ্রদ। বাজার সম্প্রসারণের নামে হ্রদের বিস্তীর্ণ অংশ ভরাটের অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে, মাইনীমুখ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন কমল হ্রদ ভরাট কাজের নেতৃত্ব দিলেও তার পেছনে পরোক্ষভাবে রয়েছেন লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল দাশ বাবু। তবে নদী খননের মাটি দিয়ে হ্রদ ভরাটের অভিযোগ অস্বীকার করে বাবুল দাশ জানিয়েছেন, ‘তাদের কারো ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই। জনগণের স্বার্থে সব করা হচ্ছে।’
মাইনীমুখ বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, ‘কলাবাজার, গরুর বাজার ও কাঠ বাজারের কারণে মাইনীমুখ বাজারের জায়গা সংকুচিত হয়েছে। মৌখিকভাবে চেয়ারম্যান আমার সঙ্গে সমন্বয় করছেন যে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাটি যদি এখানে ফেলা হয়, সেক্ষেত্রে বাজার সম্প্রসারণ করা যাবে। দখল ঠেকাতে এসিল্যান্ড সার্ভেয়ার দিয়ে ম্যাপ করেছেন। এরপর সেখানে লাল পতাকা টানিয়ে দেয়া হয়েছে।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, ‘মাইনীমুখ এ এলাকার মধ্যে বড় বাজার। কিন্তু হাট বসার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। তাই বাজারটি সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মাইনী নদী যখন খনন করা হচ্ছে, তখন আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেছি, নদী খননের মাটিগুলো যদি এখানে ভরাটের জন্য ফেলা হয়, তাতে আমাদের সুবিধা হয়। তাই জায়গা ভরাটের জন্য এখানে মাটি ফেলা হচ্ছে। এটার সঙ্গে অনেকেই জড়িত আছেন। তবে হ্রদ ভরাটের অনুমতির বিষয়টি আমার জানা নেই। এখানে একটা গ্রুপ ভাগ চাইছে, কিন্তু নিতে পারছে না। এজন্য কাপ্তাই হ্রদ ও মাছের প্রজনন নষ্ট হচ্ছে এসব কথা বলছে। একটা গ্রুপের এটা মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল দাশ বাবু বলেন, ‘আমার কথা কেন আসছে বিষয়টি আমি জানি না। জনগণের স্বার্থে বাজারটি সম্প্রসারণ প্রয়োজন। যেখানে ভরাট হচ্ছে, সেখানে ইউনিয়ন পরিষদ ও মাইনীমুখ মডেল হাইস্কুলের এক একর জমি রয়েছে। জায়গা ভরাট হলে স্কুলের শিক্ষার্থীরাও খেলাধুলা করতে পারবে। এসব কারণেই বাজার সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নদী খননের মাটিগুলো কোথাও না কোথাও ফেলতে হবে, তাই এখানে ফেলা হচ্ছে।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড লাল পতাকা দিয়ে লে-আউট দিয়েছে, যাতে স্থানীয়রা কাপ্তাই হ্রদের খাসজমি ব্যবহার ও চাষাবাদ করতে না পারে। লে-আউটের বাইরের জায়গা কেন ভরাট করা হচ্ছে, সেটি পানি উন্নয়ন বোর্ড ভালো বলতে পারবে।’
এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) খাগড়াছড়ির উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রকল্পের স্টাডিতেই উল্লেখ রয়েছে ড্রেজিং করা মাটি-বালি যদি কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও স্কুলের জন্য চাহিদা থাকে সেক্ষেত্রে আমরা তাদের দান করে দিতে পারব। এক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে ট্রাক কিংবা পরিবহনের খরচ তারা দেবে। মাইনীমুখ ইউপি চেয়ারম্যানসহ স্থানীয়দের চাহিদার ভিত্তিতে তাদের বালিগুলো দেয়া হচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গামাটির আট ও খাগড়াছড়ির দুই উপজেলা নিয়ে বিস্তীর্ণ কাপ্তাই হ্রদে পানির রুলকার্ড অনুযায়ী ১২০ মিনস সি লেভেল (এমএসএল) পর্যন্ত যেকোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়া ২০২২ সালে হাইকোর্টের দেয়া এক আদেশে কাপ্তাই হ্রদে অবৈধ দখল ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত অভিযোগ আসেনি। ইউএনওর মাধ্যমে সরজমিনে পরিদর্শন করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের (রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত দায়িত্ব) সহকারী পরিচালক আফজারুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘লংগদুর মাইনীমুখে নদী খননের বালি দিয়ে কাপ্তাই হ্রদ ভরাটের বিষয়টি আমরা জেনেছি। ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করেছি। হ্রদ ভরাটের ঘটনায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, বাজার সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ স্থানীয় নেতাদের নাম প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’