বান্দরবানে
দুটি সড়কে সলিংয়ের কাজ বাস্তবায়ন করছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড (পাচউবো)। এর মধ্যে
বান্দরবান-থানচি সড়কের পোড়াবাংলা থেকে লাংচাপাড়া পর্যন্ত রাস্তা ও সেতু নির্মাণ
প্যাকেজের দৈর্ঘ্য তিন কিলোমিটার। কাজটি পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউটিমং। একই সড়কের এম্পুপাড়া থেকে কাইতংপাড়া পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারের কাজ পেয়েছে গ্রিন ভ্যালি। তবে সড়ক দুটি নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। মানা হচ্ছে না কার্যাদেশের শর্ত।
নিম্নমানের হওয়ায় নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছেন টংকাবতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এ কারণে এক মাসের বেশি সময় ধরে সড়কটিতে ইট বিছানোর কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। আগে ইট বিছানো অংশে কেবল এল ড্রেনের কাজ করছেন শ্রমিকরা। এছাড়া লাংচাপাড়া রাস্তা নির্মাণকাজেও ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেছেন ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান ও স্থানীয়রা। অনিয়মের অভিযোগে এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নোটিস দেয়া হয়েছে। অন্য রাস্তাটি পরিদর্শনকালে নিয়ম অনুযায়ী নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পাচউবো বান্দরবান ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী।
টংকাবতী ইউনিয়নের কয়েকজন বাসিন্দা জানায়, বান্দরবান-থানচি সড়কে বালি না দিয়ে সলিং করা হচ্ছে। ইটগুলোও নিম্নমানের। গাড়ি চলাচল করার কারণে কমবেশি এক কিলোমিটার রাস্তার একাধিক স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। একই অভিযোগ করেছেন লাংচাপাড়া এলাকার স্থানীয়রা।
পাচউবো বান্দরবান অফিস সূত্র জানায়, দুটি সড়কে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০ লাখ টাকা। ইট সলিং করার আগে তিন ইঞ্চি পুরুত্বের বালি ব্যবহার করার কথা। ইটগুলো ভালো মানের হতে হবে। নির্মাণাধীন রাস্তা দুটিতে সেতুসহ এল ড্রেন রয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার। দুটি কাজই করছেন উপঠিকাদার অহিদুর রহমান চৌধুরী মেহেদি। সম্প্রতি কাইতংপাড়া রাস্তার কাজে অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কার্যাদেশের শর্তানুযায়ী কাজ সম্পন্ন করতে গ্রিন ভ্যালিকে নোটিস দেয়া হয়েছে।
কাইতংপাড়া সড়কে কাজ করছেন শ্রমিক মিজান। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ইট সলিংয়ের আগে বালি দিতে অনুরোধ করেন ইউপি চেয়ারম্যান। এরপর বালি না দিলে কাজ বন্ধ রাখতে বলেন। রোজার ঈদের আগে থেকে সলিংয়ের কাজ বন্ধ রয়েছে।’ ঠিকাদার মেহেদির কথা অনুযায়ী মাটি মিলিয়ে ইট বিছিয়ে তার ওপর সিমেন্ট ও বালির মিশ্রণে এল ড্রেন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
কাইতংপাড়ার রাস্তায় অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেছেন অহিদুর রহমান চৌধুরী মেহেদি। পর্যাপ্ত বালি দেয়া হয়েছে বলেও দাবি করে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘চলমান কাজ, বৃষ্টিতে অনেক মাটি সরে গেছে।’ তবে কোন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ দুটি করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি তা বলেননি।
লাংচাপাড়ার রাস্তায়ও বালি না দিয়েই সলিং করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গেলেঙ্গ্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেনরত ম্রো। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে গত শনিবার উঁচু সড়ক কেটে মিলিয়ে সমান করার কাজ করা হয়।’
রাস্তা নির্মাণকাজে বালি দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন টংকাবতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাংয়ং ম্রো প্রদীপ। তিনি বলেন, ‘অনুরোধ করার পরও বালি না দিলে কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি। বিষয়টি নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়েছি। এর পরও বালি দেয়া হয়নি।’
এ প্রসঙ্গে পাচউবো বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন মো. ইয়াসির আরাফাত বণিক বার্তাকে বলেন, ‘লাংচাপাড়া রাস্তায় মাটি কাটার কাজে অনিয়ম হওয়ায় নতুন করে করানো হচ্ছে। অভিযোগের পর পরিদর্শন করে কাইতংপাড়া রাস্তায় বালি দিতে বাধ্য করা হয়েছে। আলগা মাটির ওপর এল ড্রেন করায় তা বাতিল করে নতুনভাবে কাজ করাতে উপসহকারী প্রকৌশলীকে পাঠানো হয়েছে। এর পরও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গুণগত মান বজায় রেখে কাজ সম্পাদন করতে ঠিকাদারকে নোটিস দেয়া হয়েছে।’