যান্ত্রিক
ত্রুটির কারণে বন্ধ রয়েছে নড়াইলের একমাত্র পানি শোধনাগার। ৯ কোটি টাকা
ব্যয়ে পাঁচ বছর আগে শোধনাগারটি নির্মাণ করা হলেও পাঁচ মাসও চলেনি। এ অবস্থায় শোধন
ছাড়াই পৌরসভায় পানি সরবরাহ করছে কর্তৃপক্ষ। নড়াইল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, শোধনাগার কীভাবে চালাবে সেটা নড়াইল পৌর কর্তৃপক্ষের বিষয়। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, বারবার চেষ্টা করেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে নড়াইল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এমএম আবু সালেহ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পানি শোধনাগারটি নির্মাণের পর চালু অবস্থায় আমরা পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করেছি। এটা তখন ভালোভাবেই চলছিল। এটাকে চালু রাখার জন্য নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। পৌরসভা নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করছে না বলেই হয়তো এটা ভালোভাবে চলছে না। শুনেছি পৌরসভার জনবলেও ঘাটতি রয়েছে।’
নড়াইল পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ‘ক’ শ্রেণীর নড়াইল পৌরসভার দুই লক্ষাধিক মানুষের বিশুদ্ধ পানির সংকট মেটাতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০১৪ সালে শোধনাগার নির্মাণকাজ শুরু করে। ৩৫০ ঘনমিটার পানি শোধন ক্ষমতাসম্পন্ন শোধনাগারটি নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় ৯ কোটি টাকা। নির্মাণ শেষে ২০১৯ সালে পরিচালনার জন্য পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। উদ্বোধনের পর কিছুদিন বিশুদ্ধ পানি পেতে শুরু করে পৌরবাসী, কিন্তু মাত্র তিন মাস পরই যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয় শোধনাগারটিতে। এ কারণে তৎকালীন মেয়র কয়েক দিনের মধ্যেই শোধনাগারটি বন্ধ করে দেন।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় বর্তমান মেয়র ২০২১ সালের শুরুর দিকে আবার শোধনাগারটি চালুর উদ্যোগ নেয়। পুনরায় চালু করলেও একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। দুই মাসের মধ্যে আবারো বন্ধ হয়ে যায় এটি। এরপর মাটির নিচ থেকে পানি উত্তোলন করে কোনো রকম শোধন ছাড়াই পৌরবাসীর চাহিদা মেটাচ্ছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
নড়াইল পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমান আরা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এটা আমার আগের মেয়রের সময় করা। শুনেছি তখন তিন মাস ভালো সার্ভিস দেয়ার পর বন্ধ হয়ে যায়। আমি আসার পর চেষ্টা করেছি এটাকে চালু করার। কিন্তু চালু করার কয়েকদিন পর আবার বন্ধ হয়ে যায়। আমি যতটুকু বুঝেছি এটা রিপেয়ার করলেও আর চলবে না।’ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এটা যদি কিছু করা যায়, না হলে নতুন করে পানি শোধনাগার করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই।’
পৌরসভার বাসিন্দাদের অভিযোগ, শোধন ছাড়া পানি পান ও ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট রয়েছে পৌরবাসীর। অনেকে পানি কিনে পান করছে। বেশির ভাগ মানুষ অর্থাভাবে বাধ্য হয়ে অপরিশোধিত পানি পান করছে।
পৌরসভার মহিষখোলার বাসিন্দা নেওয়াজ মাহমুদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এখানে বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। পৌরসভার যে পানি আমরা পাই, তা পানযোগ্য নয়। ওই পানি পান করলে অসুস্থ হয়ে পড়তে হয়। আমি নিজে পানি কিনে পান করি। প্রতি মাসে অন্তত ৮০০-১০০০ টাকার পানি কেনা লাগে।’
পৌরসভার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, অপরিশোধিত পানি পান করে কেউ কেউ অসুস্থও হয়েছে। পানি থেকে গন্ধ বের হয়, মাথায় নিলে চুল পড়ে যায়। বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। দ্রুত শোধনাগার চালু করে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের দাবি জানান তারা।
পৌরসভার এক ব্যবসায়ী জানান, পৌরসভা থেকে যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে তা পানের উপযোগী নয়। এতে প্রচুর ময়লা থাকে। প্রতি মাসে পৌরসভায় ৩০০ টাকা পানির বিল দিয়েও মাসে আরো ৫০০-৬০০ টাকার পানি কিনে খেতে হচ্ছে তাদের।
মহিষখোলা গ্রামের বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, ‘নড়াইল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছ থেকে যখন নড়াইল পৌরসভা স্থাপনাটি বুঝে নিয়েছে, তখন স্থাপনাটি পৌরসভাকেই সচল রেখে পানি সরবরাহ করতে হবে। এর দায় পৌরসভাকেই নিতে হবে।’